Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্ধ হবার উপক্রম ‘এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারী’!

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হারুনুর রশিদ, রায়পুর (ল²ীপুর) থেকে ঃ আশির দশকের দিকে সরকারীভাবে ৫৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ল²ীপুরের রায়পুর উপজেলায় মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গত কয়েক বছর ধরে জনবল, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট লেগেই আছে। অথচ সে সময় এটি ছিল এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারী। কিন্তু এক দশক পার না হতেই সেটি আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েও চলতে পারছে না! এখন এটি বৃহত্তম থেকে ক্ষুদ্রতম পর্যায়ে চলে আসছে। বর্তমানে প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫১টি পদই শূন্য। উৎপাদন মৌসুমে এ সংকটগুলো বিরাজমান থাকায় প্রজনন কেন্দ্রে মৎস্য রেণু ও পোনা উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। এ কারণে মাছ চাষীদের চাহিদার ৩০ ভাগ রেণু ও পোনা প্রজনন কেন্দ্র হতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কিন্তু একটু নজর দিলেই এ হ্যাচারীর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মার্চ হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত রেণু ও পোনা উৎপাদনের মৌসুম। চলমান এ সংকট না সমাধান হলে রেণু পোনা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ব্যাহত হবে।
চাঁদপুর সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পাধীন ২ হাজার ৪২৮ হেক্টর আয়তনের বদ্ধজলাশয়, ২ হাজার হেক্টর আয়তনের নদী, বোরপীট খাল ও প্রধান খালসমূহে রুই জাতীয় মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ৫৪ একর জমির ওপর ১৯৭৯ সালে মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। ৮১ সালের দিকে কার্যক্রম শুরু হয়। এখানকার রেণুপোনা মানসম্পন্ন হওয়ায় সারা দেশে অল্প সময়ে এটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যায়। বিপুল চাহিদা হয় এখানকার রেণুপোনার। কিন্তু এক দশক পার না হতেই এটিতে নানা সংকট দেখা দেয়।
সরেজমিনে জানা গেছে, বর্তমানে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আছেন মাত্র ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ছয়জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ আছে। কিন্তু কমর্রত আছেন মাত্র দু’জন। এছাড়াও রেণুপোনা উৎপাদনের সাথে সরাসরি সস্পৃক্ত মৎস্য সম্পসারণ সুপার ভাইজার ৬টি পদের মথ্যে ৩টি, ফিসারম্যান ৮টির মধ্যে ৪টি ও হ্যাচারী গার্ড ৮টির মধ্যে ৪টি পদ শূন্য আছে। এদের মধ্যেও অনেকেই চলতি বছর অবসর হয়ে যাবে। এছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য ৭টি আবাসিক ভবন রয়েছে। লোকবল না থাকায় চারতলা ১টি ও একতলা ৩টি ভবন পরিত্যক্ত পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র অফিস থেকে জানা যায়, সংস্কার না হওয়ায় কেন্দ্রের মোট ৬৯টি পুকুরের মধ্যে ৩০টি পুকুর গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। মাছ রাখার পুকুর ও পানির অভাবে এ বছর প্রতিটি ৭ হতে ৮ কেজি ওজনের ২ শতাধিক মূল্যবান ডিমওলা মাছ (ব্রæড ফিস) মারা যায়। পুকুরের পাড়গুলো নদী ভাঙনের মত ভেঙ্গে যাচ্ছে। লো-ভোল্টেজের কারণে গভীর নলকূপের দু’টি দিয়েও প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি উঠানো যাচ্ছে না। পাশ্ববর্তী খালের দূষিত পানি এনে পুকুর ও হ্যাচারী ভবনে ব্যবহার করতে হয়। দূষিত পানির কারণে অনেক সময় উৎপাদিত রেণুর মান ঠিক রাখা যায় না। প্রজনন কেন্দ্রে বছরে মাছ চাষীদের মৎস্য রেণুর চাহিদা অনুযায়ী রেণু উৎপাদন না হওয়ায় দূর-দুরান্ত হতে আগত অনেক মৎস্য চাষীকে রেণু না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রজনন কেন্দ্রে কৃত্রিম উপায়ে কাতল, রুই, মৃগেল, কালিবাউস, গ্রাসকার্ফ, সিলভার কার্প, বিগহের্ড কার্প, থাই সরপুটি, কমন কার্প, মিরল কার্প ও গিফ্ট তেলাপিয়া মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদিত হয়।
রায়পুর পৌর সভার মেয়র ইসমাইল খোকন জানান, বেসরকারী হ্যাচারীগুলোর পোনার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এজন্য সবাই ঝুঁকছে সরকারি হ্যাচারীর দিকে। আশির দশকে সরব ছিল এ হ্যাচারীটি। বিনোদনের জন্য পর্যটকরা ঘুরতে আসতো দূর-দূরান্ত থেকে। কিন্তু এখন অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি একটু নজর দেয়, বিশেষ করে জনবল সংকট দূর করে, তবেই এ হ্যাচারীর বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, শুরুতে এশিয়ার বৃহত্তম ছিল এ হ্যাচারীটি। নানান সমস্যায় এটি অনেকটা নিমজ্জিত হয়ে আছে। বিরাজমান সংকটগুলো না থাকলে এ বছর ১ হাজার কেজি রেণু উৎপাদন করা যেত। প্রজনন কেন্দ্রের সমস্যগুলো লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্ধ হবার উপক্রম ‘এশিয়ার বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারী’!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ