Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রক্ষণাবেক্ষণে ৮শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবশেষে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আগামী ৫ বছরের জন্য প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮শ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। সরকারি তহবিল থেকে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে ২০০৫ সালে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরে তা চার দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ এ চার লেন মহাসড়কের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। গত বছর জুনে মূল চার লেন মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই মহাসড়কের ভারবাহী ক্ষমতা ২০২৩ সাল পর্যন্ত। তবে এক বছর যেতে না যেতেই এই মহাসড়কের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ওভারলোডিংয়ের কারনে ঝুঁকিতে পড়েছে। এ কারনেই রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জোনে ১২৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাাম জোনে ৬৬ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার অর্থাৎ মোট ১৯০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হবে। পাশাপাশি স্থানবিশেষে ওভারলে বা মজবুতীকরণ ও ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সাইন-সিগন্যাল চিহ্নিতকরণ ইত্যাদিও নিশ্চিত করা হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছর ব্যয় করা হবে ১৩৯ কোটি ৯ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫১ কোটি ৪৫ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫০ কোটি ২০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫৯ কোটি ৩১ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫৬ কোটি ১৩ লাখ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
গত বছরের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ওই বছরের জুন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। যদিও ২০১৩ সাল থেকে কিছু অংশ নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রকল্পটির সমাপ্ত প্রতিবেদনে (পিসিআর) বলা হয়, সড়কটির ক্ষতি কমিয়ে আনতে সওজের উচিত দ্রুতই মহাসড়কটির অবস্থা পর্যালোচনায় বিস্তারিত সমীক্ষা চালানো। পাশাপাশি উদ্বোধনের প্রথম বছর থেকেই এটির মেরামতে যথেষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে দ্রতই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এতে ইন্টারসেকশনগুলো ( মোড়) যানজটপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই এর অন্তত দুটি পয়েন্টে ফ্লাইওভার নির্মাণে পৃথক উপপ্রকল্প নেওয়া উচিত। পয়েন্টগুলো হলো ময়নামতি ও বারৈয়ারহাট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উদ্বোধনের পর থেকে এই মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে সওজ ততোটা সক্রিয় ছিল না। বরং তদারকির অভাবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মহাসড়কের অনেক অংশ ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। কোনো কোনো অংশে মহাসড়কের পাশে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
পিসিআর-এ আরও বলা হয়, মহাসড়কটির নকশা প্রণয়নে সম্মিলিত আদর্শ এক্সেল (ভারবহন ক্ষমতা) বা ইএসএ ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ, যা ২০২৩ সালে অতিক্রম করার কথা রয়েছে। তবে গত বছর চার লেনটিতে ট্রাফিক সমীক্ষা ও এক্সেল লোড সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালেই আংশিকভাবে সম্মিলিত আদর্শ এক্সেল অতিক্রম করেছে। চলতি বছরও একই চিত্র দেখা যায়। এতে পুরোনো দুই লেনে দৈনিক ৫২ হাজার যান চলাচল ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে আগামী তিন বছর সড়কটির উপরিভাগ ( পেভমেন্ট) ঠিক রাখা কঠিন হবে।
সওজ সূত্র জানায়, গত চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতেও মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বর্ষায় এর পেভমেন্ট কয়েক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কটি গড়ে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে, যার ৮-১২ হাজারই ট্রাক। এগুলোর অধিকাংশই থাকে অত্যধিক ওভারলোডেড। এতে পাঁচ-ছয় মাস বর্ষায় সড়কটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে প্রায় পাঁচ মিটার প্রশস্ত সড়ক বিভাজক (মিডিয়ান) রাখা হয়েছে। এগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থেকে মূল সড়ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মহাসড়কটির নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারেও কিছু ত্রুটি ছিল বলে মন্তব্য করা হয়েছে পিসিআরে। এতে বলা হয়, চার লেন প্রকল্পটিতে নকশা অনুযায়ী ৫০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। এর সঙ্গে সিলেট থেকে আনা পাথরের সংমিশ্রণ খুব একটা টেকসই ছিল না। এতে বিটুমিন উঠে গিয়ে কিছু অংশের সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। অথচ রাবারাইজড বিটুমিন বা পলিমার ব্যবহার করলে মহাসড়কটির পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল আরও বেশি স্থায়ী হতো। সওজের গাইডলাইন অনুযায়ী, মাঝারি ও ভারী ট্রাকের ভেহিক্যাল ডেমেজ ফ্যাক্টর (যান চলাচলে ক্ষতির পরিমাপক) বা ভিডিএফ যথাক্রমে চার দশমিক ৬২ ও চার দশমিক ৮০। তবে মহাসড়কটি এত বেশি ওভারলোডেড গাড়ি চলাচল করছে যে মাঝারি ও ভারী ট্রাকের ভেহিক্যাল ডেমেজ ফ্যাক্টর দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৫৯ ও ১৯ দশমিক ২৭। এতে মহাসড়কটির ডিজাইন লাইফ (আয়ুষ্কাল) দ্রুত কমে যাচ্ছে। এক-দুই বছরের মধ্যে এর পেভমেন্টটি নতুন করে ওভারলে করতে হবে। সওজের একজন প্রকৌশলী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন নির্মাণে বিটুমিন একটি জটিলতা সৃষ্টি করেছিল। এজন্য বুয়েটের মাধ্যমে বিটুমিন-পাথর সংমিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, সিলেটের তামাবিল দিয়ে আসা ভারতের পাথরের বিটুমিন ধারণক্ষমতা কম। এতে দ্রæত বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। পরে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আসা পাথর-বিটুমিন মিশ্রণ পরীক্ষা করা হয়। সেটি টেকসই হওয়ায় পরবর্তী সময়ে সোনামসজিদ দিয়ে আসা পাথরই চার লেনে ব্যবহার করা হয়।



 

Show all comments
  • বাবুল ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৫৩ এএম says : 0
    এত টাকা খরচ করেও মহাসড়কের বেহাল দশা থাকে কেন ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্পের প্রস্তাব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ