পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মশা মারতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ৩৭ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়েও মশা নির্মূল হচ্ছে না। বরং দিন দিন মশার যন্ত্রণা বাড়ছেই। ঢাকার বাসিন্দারা যেন মশার কাছে অসহায়। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মশা। রাতে তো বটেই, দিনের বেলায়ও চলছে মশার অত্যাচার। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা মিলছে না।
অথচ মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। অভিযোগে প্রকাশ, বরাদ্দ বাড়লেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর। তাদের মতে, বরাদ্দ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশার উপদ্রব।
জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুকুর-ডোবা, নালা-নর্দমার কচুরিপানা ও ময়লা পরিষ্কার না করায় সেগুলো এখন মশা উৎপাদনের খামারে পরিণত হয়েছে। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ স্প্রে করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে ৬ জন করে কর্মী থাকলেও কয়েক মাসেও তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: শেখ সালাহউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে যে হারে মশা বেড়েছে, ঢাকা শহরে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের সময়ও এত মশা ছিল না। মশা এখন যা আছে তার চেয়ে আরো বাড়তে পারে বলেও তিনি জানান। আবহাওয়াজনিত কারণে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে মশা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে ডিএসসিসি এলাকায় মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছি। সেই সাথে আগের বছরের তুলনায় এ বছর আমরা মশক নিধনে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের তুলনায় মশা এখন বেশি শক্তিশালী। সে কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের ওষুধের ব্যবহারের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। মশা নিধনে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার করা হলে সেটা আবার মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মশা মারতে গিয়ে আমরা মানুষ তো মারতে পারি না।
রাজধানীর গুলশান, বনানী ও উত্তরাসহ অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম কাগজে- কলমে চললেও বাস্তবে দেখা মেলে না। বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলছে, ফেব্রæয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। মশার অত্যাচারে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। সন্ধ্যার পর কোথাও একটু বসার উপায় নেই।
ঢাকা শহরের মশক নিধনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারণী দফতর। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলেও নগরবাসীকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। অথচ এ তিনটি নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর মশক নিধন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, যা নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
চলতি অর্থবছরেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসসিসি বরাদ্দ রেখেছে ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ডিএনসিসির এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২০ কোটি টাকা। এছাড়া এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারণী দফতর বরাদ্দ না রাখলেও লোকবল দেয়াসহ এ বিষয়ে দুই ডিসিসিকে সার্বিক সহায়তা করে আসছে।
এদিকে গত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ডিএনসিসির ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ডিএসসিসির ১১ কোটি ৫০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্য রাখা হয়েছে ডিএসসিসিতে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ডিএনসিসির এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নগরীর মশক নিধনে বরাদ্দ রাখা হয় ডিসিসি দক্ষিণের ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উত্তরের ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকা। এভাবে নগরীর মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা সত্তে¡ও সন্তোষজনক সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
তেজগাঁও, মহাখালী, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদাপাড়া, খিলগাঁও, ধোলাইখাল, মীর হাজীরবাগ, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মোহাম্মদপুর, সায়েদাবাদ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মিরপুর, গাবতলী, দারুসসালাম, হাজারীবাগ, গোড়ানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকায় মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও নগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিতেও বেড়েছে মশার উপদ্রব। অভিজাত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বাড়িতে জানালা-দরজায় নেট লাগানো সত্তে¡ও যেন রেহাই নেই মশার অত্যাচার থেকে। নিচতলা থেকে শুরু করে ২০ তলা পর্যন্ত সর্বত্রই মশার সমান উপদ্রব।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয় মশা নিধনের জন্য। বরাদ্দকৃত টাকা খরচও করে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু নগরীতে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না তেমন একটা।
অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের পছন্দের এলাকায়। কোথাও কোথাও ছয় মাসেও একবার দেখা যায় না আবার কোথাও মাসে দুই থেকে তিনবারও ওষুধ ছিটানো হয়।
নগরীর প্রতিটি ঘরে মশার যন্ত্রণা বেড়েছে। বিভিন্ন নিম্নমানের কয়েল, মশারি, মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটও মশার হাত থেকে রেহাই দিতে পারছে না রাজধানীবাসীকে। যথাসময়ে জলাশয়, আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করাও মশক নিধন কার্যক্রম শুরু না করার কারণেই মশার বিস্তার ঘটেছে। মশার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছে সবাই, আর এর সাথে বাড়ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসহ নানাবিধ মশাবাহী রোগ জীবাণু।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। তবে তা দৃশ্যত নেই বলেই জানান ভুক্তভোগীরা।
রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা আমজাদ চৌধুরী বলেন, শীত মওসুমের শুরু থেকে নগরীতে মশার দাপট বেড়ে গেছে। দিন-রাত সবসময় মশা থাকে। রাতে মশার কয়েল ও ওষুধ স্প্রে করেও টেকা যায় না। রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমালেও দিনে বিশ্রাম নিতে লাগাতে হয় মশারি। মশার উপদ্রব বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নিয়মমাফিক ওষুধ ছিটানো না হওয়া এবং অনেক এলাকায় ঝিল, নালা-নর্দমা ও অন্যান্য জলাশয় পরিষ্কার না করায় এসব মশার প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এছাড়া মশার ওষুধ ছিটাতে তিন মাসেও কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দিন বলেন, শীতের সময়ে মশার উপদ্রব একটু বেশি হয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তখন বৃষ্টি হয় না। বৃষ্টি হলে মশার প্রজনন স্থানগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ভাসমান পানিতে মশা জন্মাতে পারে না। আবদ্ধ পানি কিংবা শুকনো স্থানে মশার প্রজনন বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া প্রথম ১৩টিতে ৩১২ একর জলাধার রয়েছে। এগুলো কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভর্তি। একই চিত্র ১৪, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ওয়ার্ডের ৩২ একর জলাধারের। এছাড়াও ৭, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৪ বিঘা ৯ কাঠা জলাশয় দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাশয় রয়েছে প্রায় এক হাজার বিঘা। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে রয়েছে ৪৮৭ বিঘা। এসব জলাশয়ে কচুরিপনা ও আবর্জনা জমে আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে শীত মওসুম এলে জলাশয়ের আবদ্ধ পানি দুর্গন্ধময় হয়ে মশার প্রধান প্রজনন স্থলে পরিণত হয়।
সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দু’বার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি কর্পোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসী তাদের দেখতে পান কালেভদ্রে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।