Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাবির অপহৃত ছাত্রীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার সাবেক স্বামী সোহেল রানা আটক

ব্যাপক বিক্ষোভ ও গণআন্দোলন

রাবি রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রী হল বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সামনে থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে অপহৃত ছাত্রীর সন্ধান ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ ও গণআন্দোলনের পরিপেক্ষিতে উম্মে শাহী আম্মানা শোভাকে গতকাল শনিবার ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপহরণকারী তার সাবেক স্বামী সোহেল রানাকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার ইফতে খায়ের আলম। তবে কোথায় থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে তা না জানিয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম ইনকিলাবকে বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকাতে তাদের অবস্থান জানা যায়। রাতেই রাজশাহী থেকে পুলিশের একটি টিম ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে ডিএমপি পুলিশের সহযোগিতায় অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয় এবং একই সাথে তার সাবেক স্বামী অপহরণকারী সোহেলকে আটক করা হয় (বিচ্ছেদ প্রক্রিয়াধীন)। তবে দু’জনই পুলিশের হেফাজতে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে অপহৃত ওই ছাত্রীকে শনিবার দুপুর ২টার মধ্যে উদ্ধারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে শনিবার সকালে শোভাকে উদ্ধারের বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হলে এক রকম ধোয়াশার সৃষ্টি হয়। প্রশাসন থেকে জানানো হয় ‘অপহৃত শোভা ও সোহেল রানাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে পাওয়া গেছে। তাদেরকে রাজশাহী নিয়ে আসা হচ্ছে।’ তবে কার মাধ্যমে এ তথ্য পাওয়া গেছে এ বিষয়টি জানতে চাইলে বলতে অপারগ প্রকাশ করেন বিশ^বিদ্যালয় উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা। এর আগে অপহৃত শিক্ষার্থীর বাবা শুক্রবারই থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করলে শোভার সাবেক শ^শুর জয়নাল আবেদিনকে গ্রেফতার করে পতœীতলা উপজেলার স্থানীয় পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, শনিবার বেলা দুইটা নাগাদ তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা পুলিশের সহায়তায় রাজশাহী পুলিশের একটি দল তাঁকে উদ্ধার করে। তাঁর সঙ্গে তাঁর সাবেক স্বামীও রয়েছে। বর্তমানে তাঁদের রাজশাহীতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।
গত শুক্রবার অপহৃত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী উম্মে শাহী আম্মানা শোভা। শোভা স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শুক্রবার সকালে হল থেকে বের হলে হঠাৎ শোভার সাবেক ‘স্বামী’ সোহেল রানার নেতৃত্বে তিন চার জন যুবক একটি মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়। শোভা নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি এলাকার আমজাদ হোসেনের মেয়ে। পেশায় আইনজীবী সোহেল রানার বাড়ি জেলার আরেক উপজেলা পতœীতলার নজিপুরে। হলের গেট থেকে ৫০ গজ এগোতেই তার সাবেক স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয় দাবি করেন শোভার বান্দবীরা। গত বছরের ডিসেম্বরে তাদের বিয়ে হলেও দুই মাস আগে ডিভোর্স হয়ে যায়।
এদিকে গত শুক্রবার সকালে ছাত্রী হলের সামনে থেকে শোভা অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পরে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। অপহৃত ছাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার ও অপহরণকারীদের দ্রæত গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তির দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাত হওয়ার কারণে এ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। একইসঙ্গে পরেরদিন শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় মানববন্ধন ও ফের উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করবেন বলে ঘোষণা দিলেও শনিবার সকালে হল কতৃপক্ষের বাধার মুখে সঠিক সময়ে আন্দোলন শুরু করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টায় বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সাত দফা দাবি জানান বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে।
শিক্ষার্থীদের ‘অধিকার সংরক্ষণ দাবিনামার’ মধ্যে অন্য দাবিগুলো ছিল- অপহৃত ছাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছাত্রী হলের সামনে চেকপোস্ট, হল গেট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ পথে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, সান্ধ্য আইন বাতিল, সব হলে অভিভাবক প্রবেশ করতে অনুমতি গ্রহণ এবং বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে আমরা আন্দোলনে যেতে চাইলে আমাদের হল থেকে বের হতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামনে আমাদের আন্দোলন করার কথা থাকলেও আমারা বের হতে পারি নাই। পরে জোর দাবির মুখে বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কতৃপক্ষ এবং প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের বের হতে দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ