পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত দুই বছরে শেয়ারহোল্ডারদের বিতরণ করা লভ্যাংশের একটি বড় অংশই রিজার্ভ থেকে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরেরও রিজার্ভ ভাঙতে হবে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে পদোন্নতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরণের অসেন্তাষ বিরাজ করছে। এমনকি একজন এজিএম পদত্যাগও করেছেন। অন্যদিকে বার বার সময় বাড়ানোর পরও কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। এছাড়াও পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন ছাড়াও বিদেশে ভ্রমণ করছেন। তাদের সঙ্গে সফর করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। এমন পরিস্থিতিতে ডিএসইতে হ-য-ব-র-ল বিরাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কর্মকর্তাদের অনেকের মধ্যে চরম ক্ষোভ থাকলেও সামনা সামনি কেউ কিছু বলছেন না। তবে একজন এক্সিকিউটিভ গত ২ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (বর্তমান প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিএফও) কাছে তার ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি তার বঞ্চনার কথা বলেছেন। সেই কথোপকথনের অডিও রয়েছে ইনকিলাবের হাতে। ২৬ মিনিট ২৭ সেকেন্ড আলাপচারিতার চুম্বুকাংশ তুলে ধরা হলো- ‘পৃথিবীর কোথাও নেই ‘সি’ লেভেলের কর্মকর্তা স্থায়ী চাকুরী করেন। অথচ আপনি করেন। এটি এক ধরণের অনিয়ম। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে তার সেই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম চালু করেন। যেটি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য সামঞ্জস্য নয়। আপনি একটি জার্মান কোম্পানিতে চাকরী করেছেন। সেখানকার কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর (কেপিআই) এখানে চালু করেছেন। যার ফলে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এ বিষয়ে আপনি স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামত নেননি। আগে বোর্ডে পাস করে তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ইনফর্ম করেছেন। গার্মেন্টস এর নিয়ম তো ডিএসইতে চালু করতে পারবেন না। এরআগেও আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি বলতে পারেননি।’ এ সময় তিনি সিএফওকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কেপিআই কি? আপনার কেপিআই শুধু কর্মচারিদের বেতন কমানো। খরচ কমানোর মানে কর্মচারিদের বেতন কমানো নয়। তাদের সুযোগ কমানো নয়। আপনি আয় বাড়াবেন। সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু সে উদ্যোগ নেই।’ ওই কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে কাজের মূল্যায়ন করা হয় না। এখানে বেতন অর্ধেক করে দিবেন আর আমরা কাজ করব। আপনি একজন স্থায়ী চাকুরীজীবি। আপনি সর্বোচ্চ বেতনভোগী। আপনার বেতন কত? আপনার বেতন দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ আপনি অনেক বেশি বেতন নিচ্ছেন।’ এ সময় সিএফও বলেন, ‘এটি আমি নিচ্ছি না। আমাকে দেওয়া হয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আপনি কন্ট্রিবিউট করা ছাড়াই টাকা পাচ্ছেন। তাহলে আমরা কাজ করব কেন? আপনি আমাদের মতো পিএফ, ইন্সুরেন্স সুবিধাও নিচ্ছেন। আপনি স্যালারি বেশি নিচ্ছেন। আপনার কন্ট্রিবিউশন কি? কেউ কি বলতে পারবেন সিএফও স্যার আসার পর স্টক এক্সচেঞ্জে এই জিনিসটা চেঞ্জ হয়েছে। স্যালারি কমানো ছাড়া আর কিছুই করেননি। আপনি কেন বেশি স্যালারি নিচ্ছেন? আপনি জাতে মাতাল তালে ঠিক। আপনার বেলায় আপনি ষোল আনা।’
বঞ্চিত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রজেক্টর নামে কিছু লোক টাকা পয়সা নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরও কোন কন্ট্রিবিউশন নেই। তারা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নিয়ে আসতে পারেনি। আপনার অর্গানাইজেশনে ডিজেস্টার হচ্ছে একটার পর একটা। আপনি এখানে চুপ। কারণ আপনি যোগ্যতার চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন। তারা ম্যানেজ করে চলে। আমাদের যোগ্যতা নেই। তাহলে আমাদের নিয়েছে কেন?’ এ সময় সিএফও বলেন, ‘আপনিও ম্যানেজ করে চলেন।’
বঞ্চিত কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছর আপনারা স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের নামে একটি বিগ ট্রিপে গেলেন। সাড়ে ৬ লাখ টাকা খরচ করলেন। কিন্ত তার ফল কি? কিছুই করেননি। এবছর তারচেয়েও দ্বিগুণ খরচ করে সিলেট যাওয়ার আয়োজন করেছেন। অথচ আপনি বলেছেন খরচ কমাতে। কেন এসব খরচ করছেন। আউটপুট নেই। একটা মোবাইল অ্যাপস চালু করেছেন। কয়জন বিনিয়োগকারী পেয়েছেন। একটা প্রজেক্ট চালু করার আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হয়। সেটি কতোটা ভালো, কতোটা কাজের। আপনি একটার পর একটা খরচের খাত বাড়াচ্ছেন। আর কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা কমাচ্ছেন। বিমার সুবিধা বাড়াবেন না। কার সুবিধা বন্ধ করেছেন।’ “ডিএসইতে একজন ডাক্তার আছে। তার কাছে প্রেসার মাপতে গেলে তিনি বলেন, আমি মেম্বার ছাড়া প্রেসার মাপি না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমাদের সিনিয়ররা শতভাগ সুযোগ নিচ্ছেন। কিন্তু কাজের বেলায় ১ শতাংশও করছে না। অনেকে সিনিয়র কর্মকর্তারা বিদেশে ট্রেনিং নেন। কিন্তু দেশে এসে কেউ কিছুই শেয়ারয়িং করেন না। যার প্রতিফলন মেলেনা। অথচ আমরা বসে বসে নিজেরা শিখছি। তাহলে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাভ কি? আপনি বিদেশ থেকে এসে আমাদের শিখাতে পারতেন। কিন্তু আপনিও করেননি।’
বঞ্চিত কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি আপনার হিসাবটা দেন। আমি আমার হিসাবটা দেব। আজ সকাল থেকে আমি কি কাজ করেছি তা বলব। আপনি কি কাজ করেছেন তা বলেন। গত আড়াই বছরে কি করেছেন এ ব্যাপারে জানতে চান ওই কর্মকর্তা। এছাড়া আপনি যে বিদেশ থেকে আসলেন। কিন্তু এসে আমাদের শিখালেন না। ম্যানেজমেন্টের কেউই তা করেন না।’
ডিএসই সূত্র জানিয়েছে, পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে এরআগে একজন এজিএম পদত্যাগ করেন। তিনি পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কতিপয় সদস্যের অনৈতিক চাপ ও প্রভাবে পড়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে ভোটাভুটি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ব্যবস্থার পরিপন্থি।
ডিএসই সার্ভিস রুলস এর ধারা ৯.১.১ এবং ৯.১.২ অনুযায়ী পদোন্তির বিষয়টি কর্মদক্ষতার প্রতিবেদন ও লাইন ম্যানেজার/ডিপার্টমেন্ট হেড এবং সিইও/এমডি’র সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ঢাকা এক্সচেঞ্জের এই খারাপ চর্চা খুব মর্মাহত হওয়ার মতো বিষয় যা ডিমিউচুয়ালাইজেশন-পরবর্তী ডিএসইর ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করাসহ প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ব্যবস্থাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। অন্যদিকে পাবলিকেশন বিভাগের একজন এবং সিজিএনএফআরসি বিভাগের দুইজন কর্মকর্তার কোনও কারণ ছাড়াই পদোন্নতি হয়নি।
সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের ৮৬২তম সভায় স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সেখানে কর্মরত প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক বেতনের ১৫ শতাংশ ১ মে থেকে বাড়ানো সুপারিশ করা হয়। কিন্তু আরও ১৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে ৩১ মে’র মধ্যে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে যে, মানবসম্পদ বিভাগ যোগ্যতার মাপকাঠিতে এই বেতন কিভাবে বাড়ানো যাবে। সেটি পর্যালোচনায় ভিত্তিতে সম্পন্ন করবে।
ডিএসইর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসইতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭০জন। এর মধ্যে ৭০ জনকে শুধুমাত্র ১৫ শতাংশই প্রদান করা হয়েছে। তাদের বাকি ১৫ শতাংশ থেকে একেবারেই বঞ্চিত করা হয়েছে। বাকি ৩০০ জনের মধ্যে ২ থেকে ৩ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পরিচালনা পরিষদ অনুমোদন করলেও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কমিটি সেটি অগ্রাহ্য করেছেন। অর্থাৎ তাদের মতে, কেউই যোগ্য ছিল না ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বর্ধিত বেতন পাওয়ার। এরপরে জুলাই মাসের বেতনে কারো ইনক্রিমেন্ট হয়নি। আদৌ কবে হবে সেটিও কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকতা আবদুল মতিন পাটোয়ারির সঙ্গে একাধিক বার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনিক মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তারও জবাব দেননি তিনি।
বার বার সময় বাড়িয়েও স্ট্যাটেজিক পার্টনার পায়নি ডিএসই
নির্ধারিত সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের স্ট্যাটেজিক পার্টনারের (কৌশলগত বিনিয়োগকারী) কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করতে পারেনি। ২০১৩ সালের স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথিকীকরন) আইনে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার বিক্রি চুড়ান্ত করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারও সময় বাড়ানো হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্ট্যাটেজিক পার্টনারের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না ডিএসই।
রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ বিতরণ
আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লভ্যাংশ বিতরণ করা হতো না। স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) করার ফলে শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ নিতে পারেন। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর গত দ্ইুবছর ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে ডিএসই। দুই দুইবছর রিজার্ভ থেকে বড় একটা অংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে।
বিদেশ ভ্রমণ
যে কোনও ইস্যুতে ডিএসইর পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের বিদেশ সফরে কথা হলেই একজন পরিচালকের নাম আসে। কোনও কোনও সময় তিনি নিজেই নিজের নাম প্রস্তাব করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালনা পরিসদের সদস্য বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের গতি বাড়াতে অনেক সময় বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সদস্যও অন্তর্ভূক্ত হন। জানা গেছে, বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিঞা এ পর্যন্ত ইউএসএ, সিঙ্গাপুর, সাউথ আফ্রিকা, চায়না, ভারত ও সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি সিঙ্গাপুর চিকিৎসার জন্য ৬৬ হাজার ৯৭৫ টাকা খরচ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।