দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আগুন জ্বলছে কলিজায়। আর কত দিন জ্বলবে? ছড়িয়ে পড়েছে দেহে। আর কত ছড়াবে? কত লাশের বিণিময়ে হায়েনার রক্ত পিপাসা মিটবে? কত মায়ের বুক খালি হলে বর্বরতা থামবে? কত বোনের ইজ্জত শেষ হলে নিষ্ঠুরতা কমবে? কী পরিমাণ নাফের জল রক্তে রঞ্জিত হলে এই নিপীড়ন দমবে? এই দীর্ঘ লোমহর্ষক নৈরাজ্যে আজও নাফের বুক দুনিয়ার সামনে পেশ করছে গলিত লাশ। বিশ্বকে উপহার দিচ্ছে উম্মাহর অসতর্কতার ফিরিস্তি। সভ্যতার সামনে টানিয়ে দিচ্ছে আমাদের অশুভ ও অনৈতিক কর্মের রেজাল্ট।
ভোগ-বিলাসিতা : আজ মানব সভ্যতার দাবীদাররা, ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্মে অভিহিতকারী বিশ্ব মোড়লরা রহস্যময় নীরবতা অবলম্বন করছে। একদিকে যদিও তাদের পক্ষ নিয়ে তাদের মিত্ররা কথা বলেছেন- তা উপরে মিষ্টির লেভেল এবং ভেতরে চক্রান্তের শরাব আর জীবননাশক বিষ না ভেবে উপায় নেই। কারণ কুফরের সাথে কুফরের বন্ধুত্ব, মুসলমানের নয়। তারা চাইবে না আমরা মুসলমানরা এগিয়ে যাই, গোলামির জিন্দান থেকে মুক্ত হই। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্ব থেকে পুনরায় স্বাধীন সার্বভৌম আরাকান প্রতিষ্ঠা বা পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তির দিশা পায় এমন কোনো ইতিবাচক ফলপ্রসূ পদক্ষেপও নেয়া হয় নি। এটা উম্মাহর পিছিয়ে পড়ার জটিলতা। শত্রুদের ভয় পাওয়ার বাস্তবতা। বিলাসী জীবনের নীরব ব্যস্ততা। ভোগ-বিলাসের ভিড়ে অট্টালিকায় বসে নির্যাতিত মজলুম স্বজাতির জন্য দু-একটি মন্তব্য মিডিয়াকে দেখানোর মানসিকতা ছাড়া এমন কি দিয়েছে রাষ্ট্রনায়ক রাজা-বাদশারা? আল্লাহর পাকড়াও অত্যন্ত ভয়াবহ! তিনি যখন একত্রে ধরেন, খুব কঠিনভাবে ধরেন। রাজা-বাদশা-প্রজা, বড়-ছোট, সাদা-কালো, নেককার-পাপী কাউকে ছাড় দেন না।
আল-কোরআনের বাণী : যারা জুলুমের সীমা ছাড়িয়ে গেছে তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সূরা নাহলের ৬১ নয় আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তাহাদিগের সীমা লংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্ত্রকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাহাদিগকে অবকাশ দিয়া থাকেন। অতঃপর যখন তাহাদিগের সময় আসে তখন তাহারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করিতে পারে না।’
যারা লাখো মুসলিমকে ধর্মের কারণে নিজের বাসভূমি থেকে বঞ্চিত করেছে তারা কীভাবে সভ্যতার দাবীদার হয়? তারা কীভাবে মানবতার নির্দেশক হয়? সুতরাং আর কত দিন সহ্য! আর কত কাল ধৈর্য!! বৌদ্ধরা নিজেদের উদ্ধত হামলাকে আরও জোরদার করার সিদ্ধান্তে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। পবিত্র কোরআনে সূরা লুকমানের ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করিও না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করিও না; কারণ আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বার্মার নাসাকা বাহিনীর এ হামলা যদিও নতুন কোনো ঘটনা নয়; তবে এবারের উত্তেজনা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যার পেছনে পরোক্ষ ইন্ধন যোগাচ্ছে মানব সভ্যতার দাবিদার পশ্চিমা বিশ্ব। আল্লাহ প্রকাশ্য এবং গোপন সব কিছুই দেখেন। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজুরাতের ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহা দেখেন।’
কৃতকর্মের বিষফল : এই ভয়াবহ হামলা মানবিক দিক থেকে কতটা বিবেক সমর্থিত এবং সভ্যতার দিক থেকে কতটা সমর্থনযোগ্য? যাদের ধর্মে জীব হত্যাকে মহাপাপ বলে অভিহিত করা হয়েছে তারা কীভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটায়! বিশ্বের সব মুসলিম আমাদের ধর্মের ভাই। কেউ কোথাও আক্রান্ত হলে শিরায় শিরায় তার জ্বলন সর্বপ্রথমে অনুভব করে থাকে একজন মুসলমান। যখন অনুভবের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, ধৈর্যের সিমা লংঘন হয়ে যায়, তখন বসে থাকা দায় হয়ে যায়। সর্বপরি এ পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য তলব করা অনিবার্য। এটা আমাদের পাপ কর্মের বিষফল। যার প্রতিক্রিয়া ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ মজলুম মিয়ানমারের উপর সংক্রমিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা রোমের ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘মানুষের কৃতকর্মের ফলে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে, যাহার ফলে উহাদিগকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।’
উম্মাহর করণীয় : পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার জন্য নামাজী ব্যক্তি মসজিদে বসে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে। মুসাফির চলতি পথে যান-বাহনে বা মুসাফিরখানায়। শ্রমজীবি তার কর্মস্থানে বসে। সর্বপরি সবাই তার আপন আপন স্থানে মিয়ানমারের মুসলিম উম্মাহর হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। এর জন্য শর্ত হলো নিজেরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং অন্যকেও গুনাহ বা পাপ থেকে বিরত রাখা। সুতরাং গুনাহ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে আমাদের সাহায্য কামনাকে আরও ব্যাপক ও দীর্ঘ করা যাতে দোয়া কবুলের পথ থুলে যায়। এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। এর জন্য নির্ধারিত সময়গুলো ছাড়া একটা বিশেষ সময় হলো ফজরের নামাযে ইমাম ইমামতকারী কুনুতে নাজেলা পড়বে। আমাদের দোয়া যেন মিয়ানমারে অবস্থান করা মুসলিমদের হেফাজতের কারণ হয়। আমাদের দোয়া যেন মিয়ানমার থেকে চলে আসা মুহাজির ভাইদের জন্য শান্তি ও মুক্তির কারণ হয়। সুতরাং মুমিন বান্দা-বান্দি থেকে নিয়ে ঘরে বাইরে সবার করণীয় ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজতে আল্লাহর রহমত কামনা করা। আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে চোখের পানি বিসর্জন দেয়া। আল্লাহ যেন সমস্ত মুসলিম ও তাঁর দীনের ধারক-বাহকদের নিজ কুদরতে হেফাজত করেন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।