Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্বন নি:সরণ কমাও, গাছ লাগাও বিশ্ব বাঁচাও

নি ব ন্ধ

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কার্বণ নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধিজনিত বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে কিংবা একযোগে সমগ্র বিশ্বেই। কার্বণ নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। এ সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৬ সালে বিশ্বের বায়ুমন্ডলে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা হয়েছে, তা বিগত ৮ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু গত বছরে যা হয়েছে, তা আগের ১০ বছরের গড়ের চেয়ে ৫০% বেশি। ২০১৬ সালে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মেশার গড় হার ছিল ৪০৩.৩ পিপিএম (পার্টস পারমিলিয়ন)। এর আগের বছর ছিল ৪০০ পিপিএম। বিশ্বের ৫১টি দেশের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে তাতে দেশভিত্তিক কার্বন নিঃসরণের তথ্য তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ২০১৫ সালের গ্লোবাল কার্বন অ্যাটলাস শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ‘২০১৫ সালে বিশ্বে ৩৬,২৬২ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ হয়। চীনে ১০,৩৫৭ টন, যুক্তরাষ্ট্রে ৫,৪১৪ টন, ভারতে ২,২৭৪ টন এবং বাংলাদেশে ৭৭ টন।’ আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, ‘কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার যে পরিকল্পনা জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে, তা বাস্তবায়িত হওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। ব্যর্থ হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা। এই ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মানবসৃষ্ট দূষণ ও এল নিনোর মতো প্রাকৃতিক কারণে।’ মানব সৃষ্ট কারণ হচ্ছে নানা ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার এবং তা থেকে নির্গত কালো ধোয়া বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে ব্যাপকভাবে। ফলে বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমান্বয়েই। দ্বিতীয়ত অবাধে বৃক্ষ নিধনের কারণেও কার্বন-ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাও মানব সৃস্টই। আর এল নিনো হচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি জলবায়ু চক্র। বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ জলরাশি যখন বিষুবরেখা ধরে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে, তখন এল নিনোর সূচনা ঘটে। এ সময় অয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি পুরো উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে মহাসাগরের উষ্ণ তাপমাত্রা ও ঝড়বৃষ্টি দিক পরিবর্তন করে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এল নিনোর সময় তীব্র দাবদাহের কারণে খরাও হয়। এতে উদ্ভিদের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের পরিমাণ সীমিত হয়ে পড়ে বলে অন্য এক সূত্রে জানা গেছে। স্মরণীয় যে, কোন দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করেও দূষণ মুক্ত থাকতে পারে না। কারণ, যে কোন একটি দেশে পরিবেশ দূষণ ঘটলেই তা নিমিষেই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। তাই এই বিষয়টি বৈশ্বিক। এখন দেখা যাক বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির ফলে কী ক্ষতি হচ্ছে দেশের ও বিশ্বের। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, ১৯৯৬-২০১৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গ্রতিগ্রস্ত হয়েছে হন্ডুরাস, তারপরই মিয়ানমার। গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কুফলে মারা যায় ৫.২৮ লাখের বেশি মানুষ এবং ৩.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (পিপিপি তে) ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সরাসরি আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি’। ইউএনইপিঅ্যাডাপ্টেশন গ্যাপ-২০১৩ রিপোর্ট মতে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে। আর বর্তমানের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়বে ২০৫০ সাল নাগাদ। তাই বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ার সীমা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা প্রয়োজন। এতে করে একদিকে যেমন মানুষের দুর্ভোগ কমবে অন্যদিকে নামতে থাকবে খরচের হারও।’ বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ২০১৪ সালের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দাবদাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, যা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’ এসব দুর্যোগ থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তাই এসব দিনদিনই ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ দেশে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল(আইপিসিসি) তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলেছে, ‘এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে। দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এ কারণে ঘর হারাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ।’ অপরদিকে, দেশীয় গবেষকদের অভিমত হচ্ছে, ‘কোনো যায়গায় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের পরিমাণ ১২% বেড়ে যায়। তবুও গত ৩০ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি।’ স্মরণীয় যে, ২০১৭ সালে পরপর তিনটি ভয়াবহ বন্যায় এ দেশের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, স্থাপনা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বপরি সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। যেমন স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চার-পাঁচটি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। আর গত এক দশকে ঘটেছে সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু ও মোরা এবং তাতে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্যোগের সংখ্যা আরো বাড়বে। একই ধরনের অভিমত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান পানিবিজ্ঞানী আইনুন নিশাতেরও। তিনি স¤প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কার্বন নিঃসরণ যে হারে বাড়ছে, তা আমাদের আতঙ্কিত করছে। কেননা, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়বে। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ বাড়বে। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নিতে হবে।’ অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে কার্বণ নিঃসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতি সংঘও এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার এক তৃতীয়াংশও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ভয়াবহ ক্ষতি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।’ 

অবশ্য আশাব্যাঞ্জক খবরও আছে। তা হচ্ছে, বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা হ্রাস করার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চলছে অনেক দিন যাবতই। পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই তা হয়েছে। অবশ্য তা পূর্ণভাবে সফল হয়নি। তবে সর্বশেষ উদ্যোগ কিছুটা সফল হয়েছে ২০১৫ সালে প্যারিসে। সেখানে জলবায়ু সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে, যা ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ বলে খ্যাত। তাতে ১৯২টি দেশ সাক্ষর করেছে। চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে, ‘এই শতাব্দিতে বায়ু মন্ডলের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। এছাড়া, ক্রমান্বয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।’ এই চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী প্রধানদেশগুলোও সাক্ষর করেছে। এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, সে দেশেরই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উক্ত চুক্তি প্রত্যাখান করেছেন কিছুদিন আগে। অবশ্য তা কার্যকর হতে আরও প্রায় চার বছর সময় লেগে যাবে। তবুও এখনই এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতংক সৃষ্টি হয়েছে।
অবশ্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী অন্য বৃহৎ দেশগুলো দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছে, ‘আমেরিকাকে বাদ দিয়েই প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে।’ তাদের এই অভিমত ব্যক্ত হওয়ার পরপরই আমেরিকার কতিপয় মন্ত্রী বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন করবে।’ কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ নীতি নির্ধারক নন। নীতি নির্ধারক হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তিনি ঐ চুক্তি বাতিল করার ঘোষণার পর পুনরায় চুক্তিতে ফিরে আসার বিষয়ে কিছুই বলেননি। তাই ধরেই নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তির পক্ষে নেই। এই অবস্থায় কি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ-যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে প্যারিস চুক্তিবাস্তবায়ন করা সম্ভব? সম্ভব নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাতাস বদ্ধ নয়, তা সমগ্র বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে। সে সাথে বিষও। ফলে অন্য দেশ বিষ তৈরি বন্ধ করলেও বিষমুক্ত হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিষ সারা বিশ্বেই প্রবাহিত হয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়বেই। চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ২০৩০ সালের পর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করার এবং জ্বালানি দিয়ে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, বৃক্ষ রোপণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বের সর্বত্রই। এমনকি গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে ছাদ বাগান, ঝুলন্ত বাগান, ফুটওভার ও ফ্লাইওভার বাগান ইত্যাদি চালু হয়েছে। অর্থাৎ যেখানেই সুযোগ হচ্ছে, সেখানেই গাছ লাগানো শুরু হয়েছে এবং তা ফলদ, ভেষজ এবং ক্লোনিং বৃক্ষও। তথা সবুজায়ন শুরু হয়েছে সারাবিশ্বেই। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমান্বয়েই। সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখন বিমান, গাড়ি, জাহাজসহ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যবহৃত সব জিনিষই চলছে। এমনকি হাসপাতালের কাজ-কর্মও চলছে। এ ব্যাপারে গত ৩১ অক্টোবর বিবিসি বাংলার খবরে প্রকাশ, ‘নেপালে ইদানীং সৌরবাক্সের ব্যবহার ক্রমশই বাড়ছে। হলুদ রঙের এই বাক্সটি আসলে হচ্ছে একটি সৌরশক্তিচালিত বাতি যা বিদ্যুৎ নেই এমন জায়গাতেও আলোর উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং বিশেষ করে তা কাজে লাগানো হয় নিরাপদে সন্তান জন্মদান নিশ্চিত করতে। নেপালে এখন ১১০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই সৌরবাক্সগুলো দিচ্ছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক শক্তি।’ অনুমেয় নেপালের মত আরো বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে এই পদ্ধতি চালু হবে অচিরেই। আর এভাবেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়িত হবেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের আত্মহত্যার পথ পরিহার করে বিশ্ববাসীর সাথে শামিল হওয়া তথা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা আবশ্যক। উপরন্তু সমস্বরে স্লোগান তোলা দরকার, ‘কার্বণ নিঃসরণ কমাও, গাছ লাগাও-বিশ্ব বাঁচাও’। এমনকি তা সমগ্র বিশ্ববাসীরও হওয়া অপরিহার্য। উপরন্তু জার্মানির বনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ২৩’-এ এটা গৃহীত হওয়া আবশ্যক। ৬-১৭ নভেম্বর, ২০১৭ চলছে এ সন্মেলন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জলবায়ু বিজ্ঞানী, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিক মিলে বিশ্বের ১৯৭টি দেশের ২৩ হাজারের মতো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি দুই সপ্তাহ ধরে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দরকষাকষি করছেন। এ সন্মেলন শুরু হওয়ার দু’দিন আগে বনে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন বন্ধের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল, ‘বিপ্লব, দূষণ নয়, ট্রাম্প: জলবায়ু গণহত্যাকারী’ লেখাসহ নানা ব্যানার। জার্মান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার উপর নির্ভরশীলতারও সমালোচনা করেন প্রতিবাদকারীরা। স্মরণীয় যে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে না পারলে কল্পনাতীত সংকট সৃষ্টি হবেই। যা থেকে কেউ-ই রক্ষা পাবে না। ল্যান্সেট মেডিকেল জার্নালের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কেবল চরম আবহাওয়ার কারণে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ২০১৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ বেড়েছে ৪৬%। এছাড়া গত বছর রেকর্ড ৭৯৭টি দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেহেতু খরা, ঝড় ও বন্যা বাড়ছে, তাই ক্ষতির পরিমাণও বাড়তেই থাকবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ১০০ কোটির বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে এ বিশাল সংখ্যক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে।’ তাই ‘কার্বণ নিঃসরণ কমাও, গাছ লাগাও-বিশ্ব বাঁচাও’ শ্লোগানকে কার্যকর করার জন্য মিডিয়ারও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত করেছেন। হ্যাঁ, বাংলাদেশ মোটামুটি নিজস্ব অর্থ দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলা করছে। বিদেশি প্রতিশ্রুতির অর্থ তেমন পাওয়া যায়নি। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ ও দেশের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে অনুমেয় যে, নিজস্ব অর্থ দিয়ে দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলা করা বেশি দিন সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের উচিত প্রতিশ্রুতির পূর্ণ অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করা। অপরদিকে, বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিল ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কার্বন নি:সরণ কমাও
আরও পড়ুন