Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কাউন্সিলে লাখো মানুষের ঢল

নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল। তাই কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসবের আমেজ লক্ষ করা গেছে।
স্বল্প পরিসরের কাউন্সিল রূপ নিয়েছিল জনতার মহাসমুদ্রে। একত্রিত হতে পেরে যেন বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠেন নেতাকর্মীরা। হামলা-মামলায় এলাকাছাড়া, দীর্ঘদিন পর কারামুক্ত এবং প্রবাস থেকে কাউন্সিলে আসা নেতাকর্মীরা পরস্পরের দেখা পেয়ে আবেগাপ্লুতও হন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বুক মেলানো, করমর্দন আর ফেরারি-বন্দিদশার যন্ত্রণাদায়ক সময়ের ঘটনা বিনিময় করতেও দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ এ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির কাউন্সিল। সকাল পৌনে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার সাদা নিশান গাড়ি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ফটক দিয়ে ঢোকে। কাউন্সিলর-প্রতিনিধিসহ নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে গাড়ি থেকে নামেন হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পরা বিএনপি চেয়ারপারসন। তার যাওয়ার পথে মহিলা দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল তোলেন দলীয় পতাকা।
এদিকে কাউন্সিলে যোগ দিতে ভোর থেকেই নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। মূল প্যান্ডেলে পরিচয়পত্র দেখিয়ে কাউন্সিলরদের ঢুকতে হচ্ছিল বলে লম্বা লাইন তৈরি হয়। তিন হাজার কাউন্সিলরের সঙ্গে ৪৫ হাজার প্রতিনিধি ও ১৬ হাজার অতিথির বসার ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশও ব্যবহার করা হয়। এই দুটি স্থানের পাশাপাশি বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মী শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের আশপাশে অবস্থান নেন। কাউন্সিলে নারী নেতাকর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল।
কাউন্সিল উপলক্ষে শুধু আমন্ত্রিত অতিথিরাই নন, নিজ উদ্যোগেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন অনেকেই। আগত নেতাকর্মীদের মুহুর্মুহু করতালি আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয় কাউন্সিল স্থলসহ আশেপাশের এলাকা। এই সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি, বিদেশি মেহমান ও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী মিলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
কাউন্সিল উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী ময়দানের একাংশ। বিশাল মঞ্চের পেছনে ছিল জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার। মঞ্চের বাঁ দিকে ছিল গুম ও হত্যাকা-ের শিকার নেতাদের ছবি সম্বলিত ‘হিরোজ নেভার ডাই’ শিরোনামে বিশাল ডিজিটাল ব্যানার। সেখানে নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর ছবিও রাখা হয়। অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চের বাঁ দিকে ছিল ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন লন্ডনে অবস্থানরত দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাষণের ভিডিও প্রচারের জন্য। সারি সারি চেয়ার আর রকমারি ফুল দিয়ে সাজানো মঞ্চ গোটা অনুষ্ঠানকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। রঙিন পতাকা, ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার ছিল এলাকাজুড়ে।
সম্মেলন স্থল ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ যেমন ছিল, উৎকণ্ঠাও ছিল। আলোচনা ছিল, কারা নেতৃত্বে আসছেন, কিংবা কাদের নেতৃত্বে আসা উচিত, কাদের উচিত নয়। ক্ষোভ ছিল অনেক নেতার ভূমিকা নিয়েও। এদিকে বর্ণিল এই আয়োজনে শামিল হয়ে নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটির মাধ্যমে দল চাঙ্গা হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে না পারলে সরকারের ওপর কোনো চাপই তৈরি করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা। কাউন্সিলের পরই দেশে রদ-বদলের পালা শুরু হয়ে যাবে। নতুন কমিটি হলে সবাই জেগে উঠবে, দল চাঙ্গা হবে বলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে গতকাল কাউন্সিল মাঠে কথা হয় ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদের সাথে। তিনি বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে যে সকল নেতা আসবেন, আমি মনে করি সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা সফল হবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে সক্রিয় থাকলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা সফল আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব। নতুন নেতৃত্বে যারা আসবেন তারা রাজপথে সক্রিয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক কাজ করবেন, এ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সিলেট বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা বলেন, তৃণমূলে দলের নেতা-কর্মীরা কীভাবে আছেন কিংবা কী ধরনের সমস্যায় আছেন, সেটা অনেক নেতাই খোঁজখবর রাখেন না। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের দাপটে অনেককেই এলাকা ছাড়তে হয়। মামলা-হামলার শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে হয় নেতা-কর্মীদের।
কাউন্সিল উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মূল ফটকের বাঁ পাশে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষণিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া জন্য এ আয়োজন বলে জানান সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. এ এস এস রফিফুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে ৬টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এখান নিয়োজিত আছেন ৫০ জন চিকিৎসক।
এদিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে শনিবার সকাল থেকে যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। কাউন্সিলস্থলসহ আশপাশের এলাকার সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল যতই বাড়তে থাকে, রাস্তায় যানবাহনের গতিও কমতে থাকে। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষদের।



 

Show all comments
  • jack abdul ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:৫১ পিএম says : 0
    Dear Editor i am telling with respect all political leader must be must be politician in politics therefore they should go to political carrier development school to learn how to serve the country.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাউন্সিলে লাখো মানুষের ঢল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ