পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বড় ভাই, সুমন ও রানা বাহিনী বেপরোয়া
কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না মুক্তিপনের দাবিতে জলদস্যুদের অপহরণ বাণিজ্য। সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের তান্ডব যেন মগের মুল্লুক। অভিযানের পর অভিযান আর দস্যু বাহিনীদের দফায় দফায় অস্ত্র সহ আত্মসমর্পন কোনটাই দস্যু নির্মুলে কাজে আসছে না। এক বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর গড়ে ওঠছে নতুন দস্যু বাহিনী। সর্বশেষ গত পরশু বঙ্গোপসাগরে মুক্তিপনের দাবিতে ২৩ জেলে অপহৃত হয়েছে। বর্তমানে বড় ভাই বাহিনী, সুমন বাহিনী, রানা বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দস্যু মুক্ত না হওয়ায় খুলনাঞ্চলের বহু মৎস্য ও বনজীবী পেশার পরিবর্তন ঘটিয়ে জীবিকার খোঁজে এলাকা ছাড়ছে। দস্যু দমনে সদা জাগ্রত র্যাব ও কোস্ট গার্ড। এর পাশাপাশি পুলিশ ও বনবিভাগের অভিযান চলছে। কিন্তু জলদস্যুদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। একটি বাহিনী অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করলে তাদেরই পূর্বের অনুসারীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে নতুন বাহিনী গড়ে তুলছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অস্ত্রসহ দস্যুদের আত্মসমর্পনের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে আরো সজাগ এবং তাদের ও তাদের অনুসারীদের গতিবিধি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আত্মসমর্পনকারীদের মাঝ থেকে বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে সোর্স তৈরী করে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
সূত্রমতে, সর্বশেষ গত পরশু গভীর বঙ্গোপসাগরে হামলা চালিয়ে জলদস্যু রাজু বাহিনীর প্রধান রাজুর বড় ভাই অহিদ ওরফে বড় ভাই বাহিনী জেলেদের ওপর হামলা চালায়। এসময় জেলেদের চাল ডাল মাছ নগদ টাকা পয়সা সহ তাদেরকে জিম্মি করে। দস্যু বাহিনীরা প্রতি নৌকায় ২ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সাগরে মাছ ধরার সময় দুর্ধর্ষ বড় ভাই বাহিনী জেলেদের ট্রলার ও নৌকা থেকে ২৩ জেলেকে অপহরণ করেছে। অপহৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জন খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার চাকলা ও ৬ জন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। জেলে অপহরণের খবরে জেলে পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
র্যাব কোস্ট গার্ড পুলিশ ও বনবিভাগের সাড়াষি অভিযানেও দস্যূবাহিনী নিমূর্ল হচ্ছে না। বাঘা বাঘা বেশ কয়েকটি বাহিনী র্যাবের নিকট আত্মসম্পর্ন করেছে। কিন্তু সুন্দরবন জুড়ে নিত্য নতুন দস্যু আত্মপ্রকাশ করায় জেলে ও বনজীবিদের আতঙ্ক কাটছে না।
সূত্রমতে, প্রতিবছর ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন মৌসুম প্রায় শেষ। র্যাব, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগের সাড়াশি অভিযানের মুখেও অপ্রতিরোধ্য দস্যু বাহিনী। বাহিনীগুলোর হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ভারি ও হালকা বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। গত দু’মাসে কয়েক শতাধিক ফিসিং টলারে গন ডাকাতি ও কয়েক শত জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি করেছে ডাকাতরা।
সূত্রমতে, অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগর। প্রতিনিয়ত লুন্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার মৎস্য সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের কয়েকশ’ নটিক্যাল মাইলের সমুদ্রসীমায় ৬০ হাজার ফিশিং ট্রলারের ৫ লক্ষাধিক মাঝি-মাল্লার কোন নিরাপত্তা নেই। ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও দেশীয় সাগর দস্যুদের অত্যাচার-নির্যাতন, লুন্ঠন, হত্যা, সাগর বক্ষে নিক্ষেপ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদির কারণে জেলে ও মাঝি মাল্লারা আতংকিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের মৎস্য সম্পদের খনি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানায় নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডের তৎপরতা ও টহল বৃদ্ধি ছাড়া এ দস্যুতা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সাগরদস্যুদের অত্যাচার ও তৎপরতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপরদিকে, মৎস্য আহরণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব, দস্যুদের চাঁদাবাজী, বনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মসহ বিভিন্ন কারণে বৃহত্তর খুলনার উপকুলীয়াঞ্চলের বনজীবী ও সাগরজীবীরা পেশার পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে । দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় ৬০ ভাগ বন ও মৎস্যজীবী এ পেশা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। কয়রার মৎস্যজীবী এলাকার ৪০ ভাগ পরিবার পেশা পরিবর্তন করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আছে।
বটিয়াঘাটার ফাহিম সি ফুড, দাকোপের ম্যারিন সি ফুডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানীতে আলাপ কালে তারা বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী থেকে মৎস্য আহরণের পরিমান অতিতের যে কোন সময়ের তুলনায় কমে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে একদিকে আমিষের ঘাটতি অন্য দিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেতে ব্যপক বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রফুল্ল কুমার মন্ডল (মান নিয়ন্ত্রক মৎস্য) বলেন, জেলেদের গভীর সমুদ্রে যেয়ে মৎস্য আহরণ করতে হয়। তারা জলদস্যুদের কবলে পড়ে অনেক সময় প্রাণও হারিয়ে ফেলে। মৎস্য আহরণ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে এ কাজে যাচ্ছে না। তবে মৎস্য আহরণ অব্যহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।