পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক খালেদা জিয়া। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তার নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দলীয় নেতা-কর্মী ও গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, দলের আগামী দিনের আন্দোলনের কর্মকৌশল হবে সংগঠন, আন্দোলন ও নির্বাচন। এ কারণে দলের মধ্যে সরকারের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। কেননা এরাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করে।
সকালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
স্বাগত বক্তব্যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানসহ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল। এছাড়া ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ গুমের শিকার এবং বিএনপি ও ২০ দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণ করেন তিনি। যারা জেল-জুলুম, হুলিয়া ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার মুখেও দৃঢ়চিত্তে জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রেখেছেন তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার আজ চরমভাবে লংঘিত। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিনা বিচারে দীর্ঘকাল আটক রাখা এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনাসহ অন্য লোমহর্ষক ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকারের নজিরবিহীন দমননীতির কারণে আমাদের দলের ৫০২ জন শহীদ হয়েছেন, হয় পুলিশের গুলিতে অথবা সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হাতে। অপহৃত হয়েছেন ২২৩ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৪ হাজার জন। বিভিন্ন সময়ে জেল খেটেছেন প্রায় ৭৫ হাজার জন। মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার এবং আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার জনকে। প্রকাশ্য গুলি করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজানো হয়েছে, হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে জুলুম চালিয়েছে নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর। রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরাসরি গুলি চালিয়েছে। অতি সম্প্রতি মিথ্যা মামলায় প্রায় ৫০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের সাজা দেয়া হয়েছে। সরকার সারাদেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন পেশার সদস্যদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম সরকারের নানা কর্মকা-ের সমালোচনা করার পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামীর নেতা তারেক রহমানের চরিত্র হননের জন্য এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ক্ষমতাসীনরা ভালো করেই জানে এই তিনটি শুধু নাম নয়, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক।
এ কারণেই আওয়ামী লীগ সরকার ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি চর্চা করছে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই বিএনপি ঘৃণার রাজনীতি করে না, বিএনপি বিশ্বাস করে বিদ্বেষ মানুষের পতন ডেকে আনে, ধ্বংস করে দেয় সকল ঔদ্ধত্যকে, যেমনটি ঘটেছে হিটলার-মুসোলিনীর ক্ষেত্রে।
মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিএনপি রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধার দল। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বিএনপি অনেক সংকল্পবদ্ধ, অনেক বেশি উদার রাজনৈতিক বিশ্বাসী দল।
তিনি বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে জুলুম-অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। শারীরিকভাবে প্রায় পঙ্গু করে দেয়ার পরেও তিনি মাথা নত করেননি। আপোষ করেননি। একের পর এক মামলা দিয়ে তার জীবন অনিশ্চিত করে তোলা হয়েছে। ক্ষমতাসীদের জন্য চ্যালেঞ্জ বলেই তাকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু শাসক দল জানে না, যেদিন বিজয়ীর বেশে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, সেদিন কোটি মানুষের ভালোবাসা, সমর্থন তাকে গণতন্ত্রের এক বিজয়ী সেনাপতি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করবে।
ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি, তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা মনে করি, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পদ ভাগাভাগি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সে দেশে প্রত্যাবর্তনসহ যেসব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেসবের দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন চত্বরে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো সভাস্থ কানায়কানায় ভরে যায়। জাতীয় কাউন্সিলে দলের লাখো নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। ছিলো দর্শনার্থীও। সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সভাস্থলে আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এর ১০ মিনিট পরই জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন তিনি। বেলুন উড়িয়ে পায়রা অবমুক্ত করেন বিএনপি প্রধান। এরপর কাউন্সিলেল থিম সং পরিবেশন করা হয়। স্বগত বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কাউন্সিলে উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র এমপি সায়মন ডেনচুক, সে দেশের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) আন্তর্জাতিক বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও সাবেক ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ফিল বেনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বারবারা মুর ও শিকাগো সিটির কাউন্সিলর অলডারম্যান জো মুর শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব ও বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বি. চৌধুরী বলেন, বিএনপির কাউন্সিল সফল হোক, রাজনীতি নতুন করে উদয় হোক এবং গণতন্ত্র মুক্তিপাক। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, আজকের কাউন্সিল দেখে প্রথম কাউন্সিলের কথা মনে পড়লো। সেই সময়ের কাউন্সিলে থাকা পরিচিত মুখগুলোর অনেকেই আছে বক্তব্য দেবেন।
তার আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। তিনি বলেন, সমগ্র দেশ আজ বিপদে। শেয়ার বাজার, ব্যাক্তিগত ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের পর দেখা গেলো বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাও লুট হয়।
সাবেক এই বিএনপি নেতা বলেন, সেদিন জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লড়াই করছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেলে তার হাতেই গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটলো। তিনি বাকশাল কায়েম করলেন। এখন বাকশালের বাবা।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশের যে অববস্থা তাতে ঘরে বসে থাকার কোন উপায় নেই। নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন ডাক দেবেন তখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কোন ফোন বা কারো কাছে পরামর্শ নেবার জন্য বসে থাকলে চলবে না। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের দুই হাত তোলে অঙ্গীকার নেন।
তাদের বক্তব্যের পর কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি ধারণ করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। তুলে ধরা হয় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার দেশপ্রেমের উদাহরণ। সহজলভ্য হলেও জিয়া ও খালেদা জিয়া বিদেশে কোথাও একটি বাড়ীও করেননি। তারেক রহমানও মনে করে এই দেশে তার জন্ম, দেশের মানুষ তার আশ্রয়স্থল এই দেশেই তার সব। জিয়া পরিবারের সদস্য হলেও বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হানান শাহ , ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, এমএ মান্নান, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপি নেতা তৈয়মুর আলম খন্দকার, কাজী আসাদুজ্জামান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের মধ্যে ছিলেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মাদ ইরাহিম বীর প্রতীক, জামায়াতের তাসনীম আলম ও মাওলানা আব্দুল হালিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদৎ হোসেন সেলিম, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি মোহাম্মাদ ওয়াক্কাস, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদী, জাতীয় পার্টির মোস্তাফা জামাল হায়দার ও ন্যাপের গোলাম মোস্তাফা ভুইয়া প্রমুখ।
বিদেশী অতিথিদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির সদস্য সিমন ডান্স জাক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থকে ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপি সাইমুন ব্যাঞ্জক, প্রতিনিধি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য ফিল বেনিওনর, বিট্রিশ এ্যম্বসিরি পলিট্যাক্যাল প্রতিনিধি এ্যাডড্রিন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রো-ভিসি আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, মাহবুব উল্লাহ, সুকোমল বড়ুয়া, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।