Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এমভি সেলা জাহাজটি বিক্রি করে দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি

মেকানিক্যাল ইঞ্জিন নৌবহরের শেষ চিহ্ন

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : উপমহাদেশের প্রথম ডিজেল মেকানিক্যল ইঞ্জিন সম্বলিত যাত্রীবাহী নৌবহরের শেষ নৌযান ‘এমভি সেলা’কেও বিক্রি করে দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি। দেশ বিভাগের পরে ১৯৫২ সালে ভারতের কোলকাতার গার্ডেনরীচ শিপ বিল্ডার্স এন্ড ডক-ইয়ার্ডে নির্মিত এমভি মেকলা, এমভি লালী, এমভি স্যানদ্রা ও এমভি সেলা নামের ৪টি যাত্রীবাহী নৌযানেই প্রথমবারের মতো ডিজেল চালিত মেকানিক্যাল ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। ঐসব নৌযানই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ‘পিআরএস কোম্পানি’র জন্য তৈরি শেষে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছিল। দীর্ঘদিন বরিশাল-পিরোজপুর-পাটগাতী-মোল্লারহাট-দৌলতপুর-খুলনা, বরিশাল-পটুয়াখালী-কলাপাড়া, দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন রুটে অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে যাত্রী পরিবহন করে। এমনকি এসব নৌযানে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের বহু সময় বরিশাল থেকে পাটগাতী হয়ে নিজ বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় যাতায়াত করেছেন। অথচ ইংল্যন্ডের ‘ক্রস লে’ ইঞ্জিন সম্বলিত ঐসব নৌযানের ৩টি ইতোপূর্বে পানির দরে বিক্রী করে দিয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা লাভকারী বিআইডব্লিউটিসি। তবে বিক্রী হয়ে যাওয়া ৩টি নৌযানের দুটিই এখনো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা-ভোলা রুটে যাত্রী পরিবহন করছে।
১৯৫২ সালে এমভি মেকলা, এমভি লালী, এমভি স্যানদ্রা ও এমভি সেলা নামের ডিজেল চালিত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনের ৪টি যাত্রীবাহী নৌযান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নৌবহরে যুক্ত হবার আগে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে কয়লাচালিত বাস্পীয় নৌযান চলাচল করতে। ঐসব নৌযানের মধ্যে ৪টি প্যাডেল নৌযান এখনো সারা বিশ্বের ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে স্মৃতি চিহ্ন বহন করছে। এর মধ্যে পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ ও পিএস লেপচা জাহাজ ৩টি বেলজীয় সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৭৮Ñ৮২ সালে প্রথম দফায় ও ১৯৯৫-৯৬ সালে দ্বিতীয় দফায় পুনর্বাসনসহ হাইড্রোলিক ও মেকানিক্যাল গিয়ার সংযোজনসহ এ্যংলো বেলজিয়াম কোম্পানি-এবিসি ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। ২০০২ সালে পিএস টার্ন জাহাজটিতেও সংস্থার নিজস্ব অর্থে অনুরূপ ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। তবে শুধু আমাদের দেশেই ৪টি প্যডেল নৌযান বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বর্তমান রয়েছে।
তবে এরই মধ্যে দেশের প্রথম ডিজেল ইঞ্জিনচালিত নৌবহরের শেষ চি‎হ্ন এমভি সেলা জাহাজটি বিক্রীর জন্য নিলাম ডাকা হয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল কথিত ‘পুরাতন, অকেজো ও অলাভজনক’ এমভি সেলাসহ ১৩টি নৌযানের আগ্রহী ক্রেতাদের দর প্রস্তাব জমাদানের শেষ দিন ধার্য করেছে সংস্থাটি। সংস্থার মুখ্য নৌ-নির্মাতা খন্দকার এ মান্নান এ দরপত্র আহ্বান করেছেন। গত ১৩ মার্চ আহূত ঐ দরপত্রে ১৯৭০ সালে নির্মিত টাগ জাহাজ ‘পিটি বাল্লা’ ছাড়াও আশির দশকে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে খাদ্যশস্যবাহী নৌযান অন্নতরী-৫, অন্নতরী-৭, অন্নতরী-৮ ও অন্নতরী-১০ নামের নৌযানগুলোও রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত উপকূল অতিক্রমকারী পণ্যবাহী বার্জ বিবি-১১২২, বিবি-১১২৩, বিবি-১১২৪, বিবি-১১৩০ও রয়েছে বিক্রীর তালিকায়। একই সাথে স্বাধীনতা পূর্বকালে নির্মিত এমভি রামু, এমভি সাংগু ও এমভি হিজলা নামের আরো ৩টি পণ্যবাহী নৌযানও বিক্রীর জন্য একই সাথে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে। তবে এসব নৌযান বিক্রীর জন্য ইতোপূর্বেও একাধিকবার দর প্রস্তাব আহ্বান করা ছাড়াও তা দীর্ঘমেয়াদি লিজে প্রদানেরও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি। দীর্ঘদিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব নৌযান এখন সচল করা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে।
তবে এমভি সেলা নৌযানটি গত পনের বছরে দু দফায় পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। নৌযানটি ২০১৪-এর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ও অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে চাঁদপুর-বরিশাল রুটে হাজার হাজার যাত্রী পরিবহন করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণেই এরপর থেকে নৌযানটি ঢাকায় সংস্থার পোতাঙ্গনে ফেলে রাখা হয়। গত বছর দুটি ঈদের সময় এমভি সেলা চালানোর চেষ্টা করা হলেও দীর্ঘদিন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণহীন অবস্থায় ফেলে রাখায় এর কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। মেরামত করে তখন আর তা যাত্রী পরিবহনে দেওয়া হয়নি।
সংস্থার একটি কুচক্রীমহল এমভি সেলাসহ সংস্থার বহরে থাকা প্যাডেল জাহাজগুলো বিক্রীর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমভি সেলা বিক্রীর লক্ষ্যে ইতোপূর্বে দু দফায় নিলাম ডাকা হলেও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে তা বাতিল হয়ে যায়। ২০০৫ সালে পুরনো ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে ‘এমভি সেলা’কে সংরক্ষণ করা হয়। তখন নৌযানটির হাল, খোল ও উপরি কাঠামোসহ পুরো নৌযানটিই পুনর্বাসন করা হয়। আপার ডেকে বাতানুকল প্রথম শ্রেণীর কক্ষসহ সেলুন নির্মাণ করা হয়। পেছনের অংশে দ্বিতীয় শ্রেণীর কক্ষও নির্মিত হয়। ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ নৌযানটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণসহ এর মূল ইঞ্জিনসমূহ মেজর ওভারহলিং করলে তা আরো অন্তত ১৫ বছর নির্বিঘেœ যাত্রী পরিবহন করবে বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন। এমনকি এ নৌযানটি ঢাকা-চাঁদপুর বা বরিশাল-চাঁদপুর রুটে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম বলে মনে করছেন মহলটি। বিক্রীর পরিবর্তে নৌযানটি দীর্ঘমেয়াদি ইজারা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনারও তাগিদ দিয়েছেন একাধিক মহল।
তবে এ ব্যাপারে গত তিন দিন বিআইডব্লিউটিসি’র উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সাথে তাদের বাসার ল্যান্ড ফোন ও সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমভি সেলা জাহাজটি বিক্রি করে দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ