Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশে জিম্মি করে আদায় করা হতো মুক্তিপণ

মানবপাচারকারী চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার ঃ বিদেশে ভালো চাকরির আশ্বাস দিয়ে বেকার যুবকদের সুদান এবং লিবিয়ায় পাচার করত একটি চক্র। সেখানে তাদের জিম্মি করে বাংলাদেশে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা হাতে পেয়ে পাচার করা হতো সুবিধামতো কোনো দেশে। অবৈধভাবে পাচারের সময় অনেকে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ে। এভাবে মানবপাচারকারী চক্রের ৭ সদস্যকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। লিবিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একজন ভুক্তভোগীকে। গতকাল শনিবার রাজধানীর র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা হলো Ñ আব্দুল কাইয়ুম (৪৪), খোকন আহম্মেদ আজগর ওরফে আলী (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩০), মো. নাসির উদ্দিন (৪০), ফারুকুল ইসলাম রাসেল (৩১), মো. ওুবেল হাওলাদার (২৯) ও মো. বাদল হাওলাদার (৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন, এ চক্রটি সিলেটের কনু মিয়াকে জানায়, সাড়ে চার লাখ টাকা দিলে তার ছেলে সমরকে বিদেশে পাঠানো যাবে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বিমানবন্দরের ওপেন হোটেলে কাইয়ুমকে দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন কনু মিয়া। বাকি দুই লাখ টাকা বিদেশে যাওয়ার পর দিলেও হবে বলে চক্রটি জানায়। কিন্তু সুদানে যাওয়ার পর সমরকে জিম্মি করে কনু মিয়ার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় চক্রটি হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ৫ লাখ টাকা দেন কনু মিয়া। পরে র‌্যাবে অভিযোগ দেওয়া হলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান এবং ভা-ারিয়া ও পিরোজপুর থেকে ওই ৭ জনকে আটক করা হয়। সুদানে অবস্থানকারী শাহীন, দেলোয়ার, অলিল, সোহাগ, জহির ও লিটন নামে কয়েকজন এ চক্রের সদস্য। তারা ভূক্তভোগীকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ে সহায়তা করত। তারপর সেখান থেকে লিবিয়ায় পাচার করে দিত। তবে লিবিয়ায় পাচারের সময় অনেকে মারাও যেত। র‌্যাব জানায়, আটকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়ার বেনগাজি থেকে সমরকে উদ্ধার করা হয়। তবে লিবিয়ায় এ চক্রের সদস্য ইসমাইল ওরফে রাসেল, রায়হান ওরফে সবুজ, রাকিব ও অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী সমরকে লিবিয়ার ত্রিপলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়ে আসা হয়। র‌্যাব জানায়, চক্রটি সুদান ও লিবিয়ায় মানবপাচারের পর তাদের জিম্মি করে বাংলাদেশে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করত।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সুদান থেকে লিবিয়ায় পাচার হওয়া ভুক্তভোগী সমর আলীর বাবা কনু মিয়া বলেন, তার ছেলে মোবাইল ফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাবা তুমি ভিক্ষা কইরা হলেও টাকা পাঠাও, নইলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ওরা আমাকে মেডিকেলে নিয়া আমার কিডনি বিক্রি করার হুমকি দিচ্ছে। কনু মিয়া বলেন, ছেলের এ ধরনের ফোন পেয়ে দেড় লাখ টাকায় দুই কানি জমি, আত্মীয়ের একটি গরু সাড়ে ১৭ হাজার টাকা বিক্রিসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা সুদে এক লাখ টাকা লোন নিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের হাতে ৫ লাখ টাকা তুলে দেন। এত টাকা দেওয়ার পরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে এবং সিলেটের সুনামগঞ্জের কোম্পানীগঞ্জ থানা সাহায্য না করায় ঢাকায় র‌্যাব-৩-এর কাছে অভিযোগ করেন তিনি। এ অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে মানবপাচারকারী চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদেশে জিম্মি করে আদায় করা হতো মুক্তিপণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ