Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়ে তুলি

চট্টগ্রামে তিনটি যুদ্ধ জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৭ পিএম, ১৯ মার্চ, ২০১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিশ্বসভায় দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়ে তুলি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির তিনটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ জাহাজের কমিশনিং (উদ্বোধন) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে তিনি আরও জানান, চলতি বছরে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে বহু আকাক্সিক্ষত দু’টি সাবমেরিন। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নৌবাহিনী একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। নারায়ণগঞ্জ শিপইয়ার্ডে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিন নির্মাণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ড্রাইডকে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনাও আছে। আমাদের সরকারের সময়কালে নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট যুক্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি দ্বিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সাবমেরিন সংযোজিত হলে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ বানৌজা ‘স্বাধীনতা’ ও বানৌজা ‘প্রত্যয়’ নামক তিনটি যুদ্ধ জাহাজের কমিশনিং (উদ্বোধন) অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশের সম্পদ ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় এই তিনটি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বিশাল পানিসীমার সুরক্ষায় নৌবাহিনীর অভিযানের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌবহরে সংযোজিত হলো নতুন তিনটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ। প্রধানমন্ত্রী তিনটি জাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এর মধ্যদিয়ে যুদ্ধজাহাজ তিনটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করলো।
জাহাজ তিনটি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশের বিশাল সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা বৃদ্ধি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকসমূহে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সার্বিকভাবে দেশের ব্লু ইকোনমি (সামুদ্রিক অর্থনীতি) উন্নয়নে সহায়ক হবে এমনটি আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সদ্য সংযোজনকৃত বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বানৌজা ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ চীন থেকে আনা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ঈশা খাঁন নৌ ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আখতার হাবীব স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের সকলকে নিয়ে ২০২১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে চাই। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রেখে যেতে চাই। নৌসীমার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালনের জন্য চলতি বছর নৌবাহিনী স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাদের অভিনন্দন জানিয়ে নৌবাহিনীকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে একটি আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। জাতির পিতার মহান প্রত্যয়ের আলোকেই আমরা ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে বিশ্বের স্থলভাগের সম্পদ আজ সীমিত। তাই সারাবিশ্বের নজর এখন সমুদ্র সম্পদের দিকে। বর্তমান সরকার ব্লু ইকোনমি’র মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে একটি শক্তিশালী ও গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে জেগে উঠার সকল সহায়ক পরিবেশ ও ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিময়, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তিনটি জাহাজ কমিশনিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরও একধাপ এগিয়ে গেল মন্তব্য করে তিনি বলেন, দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্যই অত্যন্ত গৌরবের। ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত তিনটি যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন ও মহড়া প্রত্যক্ষ করেন।
নৌবাহিনী সূত্র জানায়, সদ্য সংযোজনকৃত বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বানৌজা ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ চীন থেকে আনা হয়েছে। বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ জাহাজটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। অন্যদিকে বানৌজা ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ নামক আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ দু’টি বিমান বিধ্বংসী কামান, জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল এবং সমুদ্রের তলদেশের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ বাংলাদেশ নৌবহরের ৯ম ফ্রিগেট স্কোয়াড্রনের দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ। এই স্কোয়াড্রনের প্রথম যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সমুদ্র জয়’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়। ৩ হাজার ৩১৩ টন ওজনের সমুদ্র অভিযান যুদ্ধ জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১১৫ মিটার। জাহাজটিতে ২টি ডিজেল ইঞ্জিন এবং ২টি গ্যাস টারবাইন রয়েছে। চীন থেকে আনা করভেট ক্লাসের মিসাইল ফ্রিগেট ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ জাহাজ দু’টি দৈর্ঘ্যে ৯০ মিটার, যা সর্Ÿোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।

 

 



 

Show all comments
  • আরমান ২০ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫৮ এএম says : 0
    আমাদের নৌ-সীমানাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়ে তুলি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ