দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
উদ্ভূত বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের জন্য মহানবী সা. সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করতেন। যেমন- বদরের যুদ্ধবন্দীদের ক্ষেত্রে তিনি এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তদানে সাহাবীগণের পদ্ধতি মহানবী সা. এর ইন্তিকালের পর সাহাবীগণ সা¤প্রতিক বিষয়ের সিদ্ধান্তদানের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ’র পাশাপাশি আরো কিছু নতুন পদ্ধতি যুক্ত করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সা¤প্রতিক বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি মহানবী সা. এর ইন্তিকালের পরপরই প্রয়োগ শুরু হয়। যার মাধ্যমে আবু বকর রা. কে খরীফা নির্বাচন করা হয়। এ পদ্ধতির আলোকে সাহাবীগণ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিধান নির্ণয় করেছিলেন তার মধ্যে রয়েছে- ১. আবু বকর রা. কে খলীফা নির্বাচন। ২. কুরআন সংকলনের অপরিহার্যতা। ৩. যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ৪. মদ্যপের শাস্তি ৮০ বেত্রাঘাত নির্ধারণ।
সাহাবীগণের যুগে এ পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। এমনকি সা¤প্রতিক বিষয়ের বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি ছিল কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়ের বিধানের আলোকে নতুন বিষয়ের বিধান উদ্ভাবন করা। বিভিন্ন বিষয়ে সাহাবীগণের কৃত কিয়াসের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করতে যেয়ে অনেক উলূসবিদ তাদের গ্রন্থে এ সংক্রান্ত পৃথক অধ্যায়ের অবতারণা করেছেন। সাহাবীগণের অভিমত: সাহাবীগণ বিশেষত উমর রা. অন্য সাহাবীগণের বাণীর ভিত্তিতে অনেক নতুন বিষয়ের সমাধান দিতেন। বর্ণিত আছে, তাঁর সামনে নতুন কোন বিষয় উপস্থাপিত হলে তিনি আগে দেখতেন এর বিধান কুরআন ও সুন্নাহর রয়েছে কিনা। যদি না থাকত তবে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, আবু বকর কি এ জাতীয় কোন বিষয় ফয়সালা করেছিলেন? যদি আবু বকর রা. কৃত এমন কোন ফসালা থাকত তবে তিনি তার অনুসরণ করতেন। এছাড়াও অনেক সাহাবীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ বর্ণনা রয়েছে যে, তাঁরা বড় বড় সাহাবীর মতামত অনুকরণ করে ফয়সালা করতেন। এ যুগে কিয়াসের মাধ্যমে নতুন বিষয়ের ইসলামী বিধান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দু’টি নতুন বিষয়কে বিবেচনায় আনা হয়েছিল। আর তা হল, মাসালিহ মুরাসালাহ “মাসালিহ মুরাসালা’’ বলা হয়, শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্যের অনুরূপ কার্য স¤প্রাদন যা গৃহীত বা বাতিলকৃত হওয়ার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট বিধান পাওয়া যায় না। সাদ্দুজ জারাঈ “যেসব উপায়-উপকরণ ক্ষতিকর ও শান্তিবিঘœকারী নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদনে প্রলুদ্ধ করে সেসব কর্মের পথ রূদ্ধ করার নাম সাদ্দুজ জারাঈ।
সা¤প্রতিক বিষয়ে সিদ্ধান্তদানের ক্ষেত্রে তাবিঈগণের যুগে নতুন কোন পদ্ধুতি উদ্ভাবিত হয়নি। বরং তারা সাহাবীগণের পদ্ধতিই অনুসরণ করতেন। তবে এ যুগে ইজতিহাদ ও কিয়াসের ব্যাপক প্রচলন ছিল। যুক্তি দর্শন ভিত্তিক এ পদ্ধতির গোড়াপত্তন মূলত ইবরাহীম নাখয়ীর হাতে হয়, যিনি আলকামা নাখয়ীর ছাত্র ছিলেন। আর আলকামা নাখয়ী সরাসরি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে ফিকহ শিক্ষা করেন। সাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. অধিক হারে রায় ও কিয়াস প্রয়োগের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ছিলেন। এ সময়কালে যুক্তি ও দর্শন নির্ভর এ পদ্ধতি উদ্ভাবের কারণ এ সময়ে ইসলামী সম্রাজ্য স¤প্রসারণ ও বিভিন্ন শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর ইসলাম গ্রহণের ফলে অধিকা হারে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয় যার কোন সমাধান সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ বা পূর্বের আইনী উৎসে বিদ্যমান ছিলনা। এ সময়ে ইরাক ছিল সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। এ কারণেই ইসলামী বিধান নির্ণয়ের এ পদ্ধতিটিও এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।