Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা

মহিউদ্দিন খান মোহন | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন এবং সেখানে অবস্থানরত দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শেষে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কক্সবাজার যাওয়ার পথে তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবাই আশা করেছিলেন, নির্বিঘেই তিনি ঢাকায় ফিরবেন। কিন্তু তা হয়নি। ফেরার পথেও ফেনীর মহিপালে তার গাড়ি বহরের অতি সন্নিকটে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে রাস্তার পাশে অপেক্ষমান দুইটি বাস আগুনে পুড়ে যায়। এ বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ বিবৃতি দিয়েছেন।
গত ২৮ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়া যখন কক্সবাজার যাচ্ছিলেন, তখন ফেনী শহরে ঢোকার সময় তার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া সেদিন বিভিন্ন স্থানে সমবেত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় সরকারি দলের কর্মীরা। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এবং চান্দিনা, ফেনী, নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকায় বহরে বাধা দেয়া এবং হামলার ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে বহরে বাধার সৃষ্টি করা হয়। এসবের মধ্যে বড় হামলার ঘটনাটি ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে। প্রকাশিত খবর মতে, বেগম জিয়ার বহর ফেনী শহরে প্রবেশের সময় মোহাম্মদ আলী বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদের হামলায় সাংবাদিক এবং বিএনপি নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সাংবাদিক বহনকারী অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করে।
ঘটনা যে অত্যন্ত নিন্দনীয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপি এ হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন যে, ফেণীর ঘটনা বিএনপিই ঘটিয়েছে। তারা বলছেন, মিডিয়া কভারেজ পাওয়া এবং সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য এ ঘটনা ঘটানো। তবে, পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনার বিবরণ এবং টিভি চ্যানেলের খবরে প্রচারিত ফুটেজ দেখে এটা বুঝতে বোধকরি কারো বাকি নেই যে, নিন্দনীয় এ ঘটনা ক্ষমতাসীনরাই ঘটিয়েছে। ওইসব ফুটেজে হামলাকারীদের যে ছবি এসেছে তাতে ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় কয়েকজন কর্মীকে শনাক্ত করা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের মদতে শাসকদলের ক্যাডাররা এ হামলা চালিয়েছে। বিএনপি ছাড়াও দেশের অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটি অরাজনৈতিক এবং মানবিক কর্মসূচিতে কেন এ বাধা দেয়া হলো? বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাচ্ছিলেন মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করা অসহায় রোহিঙ্গাদের সচক্ষে দেখতে এবং তাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দিতে। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজার দরকার কী? বিএনপি এদেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দলের একটি। রাজনীতির বাইরেও এ দলটির কাছে মানুষ আরো অনেক কিছু আশা করে। শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই মানুষ রাজনীতির বাইরে সমাজ ও মানব কল্যাণমূলক কর্মকান্ড আশা করে। তাছাড়া দেশ ও জাতির সমস্যা-সঙ্কটে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালনের দায়িত্বও তাদের রয়েছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সে দায়িত্ব পালনের জন্যই কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। অথচ তাকে সে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হলো। শুধু এবারই নয়, আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। গত আগস্ট মাসে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব সেখানে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হামলার শিকার হয়েছিলেন। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ১৯৯৮ সালের ৯ জুন বেগম জিয়ার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লং মার্চেও বাধা দেয়া হয়েছিল।
বলা নিষ্প্রয়োজন, এ ধরনের কর্মকান্ড ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করে না। এসব ঘটনা যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যে হামলা চালানো হয়েছে, তার দায় ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারের ওপরই বর্তায়। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো সরকার বা সরকারি দল দেশের অন্য আরেকটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের গাড়ি বহরে হামলা চালাতে পারে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। অথচ, সে অবিশ্বাস্য কাজগুলোই করে চলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ফেনী হামলার ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা ধারাবাহিকভাবে কথা বলে যাচ্ছেন। তাদের সেসব কথাবার্তা দেশবাসীর কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হচ্ছে সেটা বোধকরি তারা বিবেচনায় আনছেন না। বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর ও তার গাড়ি বহরে হামলার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা যেসব কথা বলেছেন, এখানে তার সংক্ষিপ্ত কিছু উদ্ধৃতি দেয়া দরকার। ২৯ অক্টোবর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের নামে নাটক সৃষ্টি করতে কক্সবাজার গেছেন। একই দিনে দিনাজপুরের বিরলে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়া ত্রাণ দেয়ার জন্য কক্সবাজার যাচ্ছেন না, এটি তার একটি চক্রান্ত। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রণালয়ে তার অফিসে ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিএনপি পরিকল্পিতভাবেই ছাত্রদল-যুবদল দিয়ে ফেনীতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন সরকারের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে। গত ৩০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রেহিঙ্গাদের দেখতে বেগম জিয়াকে রোড শো করতে হবে কেন? তিনদিন ধরে ঢাকা-কক্সবাজার সড়ক ক্যু করে খালেদা জিয়া ত্রাণ প্রহসন করেছেন। তা মানবতার চরম অপমান। এর মাধ্যমে তিনি শুধু রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সঙ্গে তামাশাই করেননি, এই ভাগ্যাহত মানুষগুলোর সঙ্গে প্রতারণাও করেছেন।’ ওইদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়া বিএনপির একটি নাটক। মানবতার দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক শোডাউন।
ফেনীতে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে কারা হামলা করেছে তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই এ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে আসছে। তা ছাড়া টিভি ফুটেজে যাদেরকে হামলা চালাতে দেখা গেছে, পত্রপত্রিকায় তাদের নামধাম পরিচয় এমনকি ছবিও ছাপা হয়েছে। স্থানীয়রা সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, হামলাকারীরা সরকারদলীয় ক্যাডার। বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন যে, মিডিয়া কভারেজ পাওয়ার জন্য বিএনপিই এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ এ দাবি জোরে শোরেই করছেন। এদিকে গত ৩০ অক্টোবর ‘দৈনিক খবর ডট কম’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর প্রকাশ করে যে, ফেনীতে বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা বিএনপিরই সাজানো নাটক। আর এর পরিকল্পনাকারী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদত হোসেন। নিউজ পোর্টালটি একটি টেলিফোন সংলাপের রেকর্ডও প্রচার করে, যাতে ফেনীর একজনকে পরিকল্পনা মোতাবেক হামলা চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন কোনো এক অজ্ঞাত ব্যক্তি। এ খবরটি ত্বরিতগতিতে ভাইরাল হয়ে যায় এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তবে, ওই টেলিফোন আলাপের বিষয়টিকে কেউই বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। অনেকেই এটাকে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং হামলার দায় থেকে শাসকদলের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের রক্ষা করার প্রয়াস বলে মনে করছেন। ওইদিন দুপুরেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ডা. শাহাদত হোসেন বলেছেন, এটা মিথ্যা প্রচারণা। তিনি এমন কোনো নির্দেশ কাউকে দেননি, কারো সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেন নি। তিনি বলেন, তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নিউজ পোর্টালটির বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন ডা. শাহাদত হোসেন।
ব্যাপারটি একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এবং রহস্যময়। কেননা, এর সাথে একজন রাজনৈতিক নেতা ও তার দলের ভাবমূর্তি এবং ঘটনার সত্যাসত্য প্রকাশের বিষয়টি জড়িত। সেজন্য ওই টেলিসংলাপের রহস্য উদ্ঘাটন অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত. কোন নাম্বার থেকে নির্দেশদাতা ও পালনকারী কথা বলেছিলেন তা বের করতে হবে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে এটা বের করা কোনো ব্যাপার নয়। দ্বিতীয়ত. আওয়ামী লীগের ওইসব কর্মীদের খুঁজে বের করতে হবে, যারা বিএনপি নেতার হয়ে ভাড়া খাটতে গিয়েছিল হামলা চালাতে। এ ক্ষেত্রে ওদেরকে খুঁজে বের করা খুব একটা কঠিন হবে না। কারণ, ভিডিও ফুটেজে আক্রমণরত ওই তরুণদের ছবি স্পষ্টই দেখা গেছে। যদি আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি মোতাবেক টেলিফোন সংলাপকে সত্যি বলে ধরে নেয়া হয়, তাহলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিএনপি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভাড়ায় খাটাতে পারে। এ ধরনের নৈতিকতাহীন কর্মীদের দলে রাখা সমীচীন কীনা সেটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বই ভেবে দেখবেন। এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরি। কেননা, এ হামলার ঘটনাকে শুধু একজন নেত্রীর গাড়ি বহরে হামলা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। বরং এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশের ওপরই হামলা। এ ধরনের ঘটনা দেশের রাজনীতিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং, সরকারের উচিত এ হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করা।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং তার গাড়ি বহরে হামলা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য-মন্তব্য এটা প্রমাণ করে যে, এ সফর তাদেরকে কিছুটা হলেও চিন্তিত করে তুলেছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার গমনপথের দু’পাশে লাখো জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি তার বিপুল জনপ্রিয়তারই প্রমাণ বহন করে। যারা এতদিন ‘বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে’, ‘জনসমর্থন হারিয়ে ফলেছে’ ইত্যাদি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতেন, তারা বোধকরি উপলব্ধি করতে পারছেন যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপি, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এখনও অনেকের চেয়ে অনেক বেশি। এ বিষয়ে গত ৩১ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে বলেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের পর নড়েচড়ে বসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পত্রিকাটি লিখেছে, বিদেশ থেকে ফিরেই তিনি এভাবে মাঠে নেমে পড়বেন, এটা আওয়ামী লীগ আগে থেকে আঁচ করতে পারেনি। লন্ডন থেকে ফিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে সড়ক পথে বেগম জিয়ার কক্সবাজার যাওয়াকে আওয়ামী লীগ বিএনপির আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বলে মনে করছে। সে হিসাবকে মাথায় রেখে এখন তারাও পরিকল্পনা করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের সড়কপথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে তা বোঝা যাচ্ছে। নইলে তিনি কেন উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারে কক্সবাজার গেলেন না, সে প্রশ্ন তারা তুলতেন না। আকাশপথে বেগম জিয়া কক্সবাজার গেলে প্রায় পাঁচ শ’ কিলোমিটারের জনসমুদ্র দেখা যেত না। আর তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরাও এতটা উজ্জীবিত হতো না। তবে, রাজনৈতিক সচেতন মহল বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনাকে অশনি সঙ্কেত হিসেবেই দেখেছেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আবারও অনাকাঙ্খিত পথে ঠেলে দিতে পারে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব দলকে নির্বাচনে আনতে হলে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ দরকার, তা তৈরি করা এবং বজায় রাখা সরকার তথা ক্ষমতাসীন দলেরই দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে ফেনীর ওইসব অপরিণামদর্শী কর্মীর মতো অতিউৎসাহীদের কারণে কাঙ্খিত সে পরিবেশ যদি বিনষ্ট হয়, তাহলে তা কেবল দুঃখজনকই হবে না, জাতীয় জীবনে সৃষ্টি করতে পারে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়ার


আরও
আরও পড়ুন