পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিষিদ্ধ মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন
সুন্দরবনের দুবলার চর আলোর কোলে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ১৩৪ তম রাস উৎসব। ৩ দিন ব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। এখন লাখো প্রানের উচ্ছাসে ও পদচারণায় মুখরিত সমুদ্রকুল। আগামী কাল শনিবার ভোরে সাগরের নোনা জলে স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই মিলন মেলা।
এ মেলা যেন এখন সার্বজনীন। তবে রাসমেলাকে ঘিরে পর্যটক পুন্যার্থী মিলে মিশে একাকার হওয়ার সুযোগে একটি মহল মেতে ওঠে হরিণ শিকারে। প্রতিবছর রাস মেলায় শত শত হরিণ নিধনের খবর পাওয়া যায়।
সূত্রমতে, প্রতিবছরের মতো এবারও রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল থেকে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী সুন্দরবনের দুবলার চরে ঐতিহ্যবাহী রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ৮টি পথ নির্ধারণ করেছে। এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহলদল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। অনুমোদিত আটটি পথ হলো- বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোস্টা হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলারচর। কদমতলা থেকে ইছামতি নদী, দোবেকি হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদার গাং, খোপড়াখালী ভাড়ানি, দোবেকি হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা-শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন হয়ে পশুর নদী দিয়ে দুবলারচর, বগী-বলেশ্বর-সুপতিস্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর। শরণখোলা স্টেশন-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।
তিন দিন ব্যাপী এই মেলায় মৎস্য ও পশু সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি ছিলেন মীর শওকত আলী বাদশা এমপি, তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি, মোজ্জাম্মেল হোসেন এমপি, মিজানুর রহমান মিজান এমপি, ভারতীয় দূতাবাসের পলিটিক্যাল ফার্ষ্ট সেক্রেটারি রাজেশ উরখি, জাতীয় পার্টির প্রেসেডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সমিতির সভাপতি হিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। মেলার সার্বিক তত্তাবধানে আছেন দুবলার চর রাস উৎসব কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কামাল উদ্দিন আহমেদ। দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভিড়ে আলোর কোল এখন মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। কমপক্ষে ৩০টি লঞ্চ এবং হাজার হাজার ট্রলার নিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক দর্শনার্থী এখন সমুদ্রকূলে। এ এক নয়নাভীরাম দৃশ্য।
সুত্রমতে, দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীরা ২ থেকে ৪ নভেম্বর এ তিনদিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পথে নির্দিষ্ট ফি দিতে হচ্ছে। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। এ খাত থেকে গত অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এবার রাজস্ব আদায়ের পরিমান আরো বাড়বে বলে আশা করছে বনবিভাগ।
দুবলার চরের ফিশারম্যান গ্রুপের অন্যতম কর্ণধর কামাল উদ্দিন জানান, প্রতিবছর এ মেলায় অন্তত দুই লাখ লোকের সমাগম ঘটে। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে সারাদেশ থেকে সব বয়সী নারী-পুরুষ এখানে আসেন। শুধু দেশের নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা এ রাস মেলায় আসেন। তবে এ বছর দর্শনার্থী ও পুন্যার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের রাস পূর্ণিমার অতিথিতে এ উৎসব করা হয়।
সুন্দরবন সার্কেলের সিএফ আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, মূল মেলা হবে শুক্রবার রাতে এবং শনিবার ভোরে। এ বছর মেলায় আসা লোকদের হরিণ শিকার বন্ধে বন বিভাগ বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দর্শনার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য বন বিভাগ আটটি নৌপথ নির্ধারণ করেছে। ২ নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের ১৬টি জায়গায় বন বিভাগের বিশেষ দল পুলিশ র্যাব কোষ্টগার্ড ও বিজিবি কাজ করছে। পরিবেশ দুষণ ঘটায় এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেলা আরম্ভ হবার পর শিকারীরা তীর্থ যাত্রীদের সাথে একত্রিত হয়ে মিলে যায়। পরবর্তীতে রাশ মেলার আনন্দে মেতে ওঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাকি দিয়ে এ ফাঁদ দিয়ে মেতে ওঠে হরিণ নিধন যজ্ঞে। এর এক একটি ফাঁদে ৮-১০টি পর্যন্ত হরিণ ধরা পড়ে। এভাবে রাসমেলা উপলক্ষে প্রায় প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ হরিণ নিধন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।