Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খরার কবলে দেশ

প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : চৈত্রের খরার দহন বেড়েই চলেছে। চলতি মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে দেশে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ যে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিয়েছে বাস্তবে প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। চারদিকে খাল-বিল, মাঠ-ঘাট ফসলি জমি ফেটে চৌচির। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে সর্বত্র। ভ্যাপসা গরমে ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁপানি, পেটের পীড়াসহ মৌসুমী বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রুক্ষ, রুদ্র ও বিরূপ হয়ে উঠছে আবহাওয়া-জলবায়ু। দিন দিনই তেঁতে উঠছে সারাদেশের শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জ, জনপদ। গতকাল (শুক্রবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫, চট্টগ্রামে ৩৩.২ ডিগ্রি সে.।
টানা খরায় নদ-নদীসমূহের স্বাভাবিক প্রবাহও এখন আর অবশিষ্ট নেই। নদ-নদীর ক্ষীণকায় প্রবাহ এখনই শুকিয়ে শুধুই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ জায়গায় নদ-নদীর চিহ্নও মুছে গেছে। নদীমাতৃক দেশ হয়েও এদেশের নদ-নদীর দুরবস্থাটা আজ এমন যে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিলুপ্ত নদীর জায়গাগুলো দেখিয়ে হয়তো কোন এক সময় বলতে হবেÑ ‘এখানে একটি নদী ছিল’! যেদিকে চোখ যায় ধু-ধু বালুর চরের বালিয়ারিতে লু-হাওয়ার মতো উত্যপ্ত বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের উপর প্রাক-বর্ষার মৌসুমী বায়ুর আগমন ও তা সক্রিয় হতে আরও অনেক দেরি আছে। এ অবস্থায় প্রত্যাশিত ভারী ও মাঝারি বৃষ্টি আপাতত ঝরছে না। মার্চ থেকে আগামী মে মাস পর্যন্ত অন্ততপক্ষে তিন মাস শুধুই এলাকাভিত্তিক বিক্ষিপ্তভাবে, তাও হালকা ছিঁটেফোটা ধরনের বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও বজ্রবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু গুঁড়ি গুঁড়ি ও ছিঁটেফোটা এই বৃষ্টিতে মোটেও খরা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বরং এতে করে খরা আরও দীর্ঘস্থায়ী, ব্যাপক ও বিস্তৃত হতে পারে। এমনকি কৃষি-খামারে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ দুর্যোগের অবস্থায় রূপ নিতে পারে এ বছরের খরা পরিস্থিতি এমনটি বিশেষজ্ঞদের আশংকা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানসহ সমগ্র উপ-মহাদেশ ও চীনের ব্যাপক অংশজুড়ে খরা বিস্তার লাভ করেছে। ফল-ফসল উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে অব্যাহত খরার কারণে।
ফাল্গুনের পর চৈত্রমাসের গোড়াতে এসেই দেশজুড়ে এবার আগাম খরা পরিস্থিতি ভয়াবহ ও বিলম্বিত হচ্ছে। খরাকবলিত হয়ে প্রায় দেশজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫০/৬০ ফুট, অনেক স্থানে আরও নিচে নেমে গেছে অতিদ্রুতই। অনেক জায়গায় গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। সবখানে খাল-বিল, ছড়া, দীঘি, পুকুর, কুয়া বলতে গেলে পানিশূন্য। অজু-গোসলসহ নিত্য ব্যবহার্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সর্বত্রই। পানির জন্য এমনকি হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে শহরসহ জনবহুল এলাকাগুলোতে। বিশুদ্ধ ও ব্যবহার্য পানির দাবিতে শহর-নগরে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ বালতি-কলসি নিয়ে মিছিল বের করছে। আগাম খরার কারণে মৌসুমী রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে। ইরি-বোরো জমিসহ সবজি, ফল-ফসলের ক্ষেতে সেচের সংকট আরও বেড়ে গেছে। খরায় পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ক্ষেত-খামার। কৃষি-খামার, জনস্বাস্থ্য, নৌ-যোগাযোগসহ জনজীবনের সর্বক্ষেত্রে খরার ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মার্চ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এসেও এ যাবৎ বৃষ্টিপাত হয়েছে যৎসামান্য হারে। দেশের নদ-নদীসমূহের প্রবাহও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম, ক্ষীণতর।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি মার্চ মাসের পূর্বাভাসে জানায়, এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড়ের আশংকা রয়েছে। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী ঝড় বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। মার্চ মাসে দিনের তাপমাত্রা বর্তমান সময়ের স্বাভাবিকের চেয়ে (৩৪ থেকে ৩৬ সেলসিয়াস) ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে একটি মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেঃ) বয়ে যেতে পারে। এ মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে ১টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলসহ খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে তবে। সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খরার কবলে দেশ

১৯ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ