Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামের নেতাদের ঐক্যের বার্তা দিয়ে গেলেন খালেদা জিয়া

জনসমর্থন ধরে রাখতে

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বতঃস্ফ‚র্ত জনতার ভালবাসায় সিক্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই অভ‚তপূর্ব জনসমর্থন ধরে রাখতে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলনের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে ঢাকায় ফেরার আগে গতকাল (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের নেতাদের সাথে বৈঠকে এ বার্তা দেন বেগম খালেদা জিয়া। মানব ইতিহাসের নির্মম গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ত্রাণ বিতরণের মানবিক কর্মসূচি ছাড়া টানা চারদিনের এ সফরে কোথাও তার কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না।
তবে রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা উখিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬শ কিলোমিটার মহাসড়কে তার যাত্রাপথে জনতার বাঁধভাঙা ঢল নামে। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরকে ঘিরে স্বতঃস্ফ‚র্ত জনতার এই জাগরণ ছিল নজিরবিহীন। ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে ফেনী, ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার- খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরকে ঘিরে জনতার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার দৃশ্যত রোডমার্চে রূপ নেয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকায় মানুষের স্রোত ছিলো অভ‚তপূর্ব। ফেরার পথেও রাস্তায় ছিল মানুষের ভিড়।
তার এই সফরকে ঘিরে এই অঞ্চলের সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীরাও এখন দারুণ উচ্ছ¡সিত। জনতার ঢল দেখে বেগম খালেদা জিয়াও অভিভ‚ত হন। গতকাল সার্কিট হাউস থেকে সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার প্রাক্কালেও হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ছিল সার্কিট হাউস ও আশপাশের এলাকায়। উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণ শেষে সোমবার রাতে কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম আসেন বেগম খালেদা জিয়া। কক্সবাজার থেকে সন্ধা সাড়ে ৭টায় রওনা দিয়ে তিনি রাত পৌনে ১২টায় চট্টগ্রাম পৌঁছেন। ততক্ষণে সার্কিট হাউস এলাকায় লোকে লোকারণ্য। মধ্যরাতেও হাজার হাজার মানুষের ভিড় সেখানে।
সকাল থেকে এই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখতে ঘণ্টা পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ড্যাব, জাতীয়তাবাদি আইনজীবী ফোরামসহ বিএনপি সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারাও বেগম জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল নিয়ে সমবেত হন সার্কিট হাউস এলাকায়। জনতার ভিড় সামাল দিতে এসময় পুলিশকেও রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মাতিয়ে রাখেন দলীয় কর্মীরা। এক পর্যায়ে বেলা ২টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সার্কিট হাউসের দু’তলার লবিতে এসে দাঁড়ান। তার পাশে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসময় নেতাকর্মীদের উল্লাস, করতালি আর শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় আকাশ-বাতাস। তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন এবং তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। শত শত নেতাকর্মী তাকে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। লবিতে রাখা গাড়িতে উঠে বসার পর জনতার ভিড় ঠেলে তার গাড়ি সার্কিট হাউসের সামনের সড়কে পৌঁছতে দীর্ঘসময় লেগে যায়। সেখান থেকে জনতার স্রোত ঠেলে গাড়ি বহর এগিয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে পথেও ছিলো মানুষের ভিড়।
এদিকে ত্রাণ বিতরণ শেষে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসার পর সোমবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বৈঠকে তিনি তার সফরকে ঘিরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতাদের সার্বিক কর্মতৎপরতার প্রসংশা করেন। একই সাথে তিনি জনতার এই স্বতঃস্ফ‚র্ত জোয়ার দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বিএনপির পক্ষে এই জনজোয়ার ধরে রাখতে এখানকার নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করারও পরামর্শ দেন। কয়েকজন নেতা জানান, দলের চেয়ারপার্সন আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ারও তাগিদ দেন। জেলা এবং মহানগরে বিএনপির অভ্যন্তরে কোন ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা দ্রæত নিরসনেরও নির্দেশনা দেন তিনি।
গতকাল চট্টগ্রামের নেতাদের মধে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে সাক্ষাত করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ। এছাড়া কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা ও বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সফরে তার গাড়ি বহরকে ঘিরে জনতার যে বাঁধভাঙা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে তিনি খুশি। আমরা মনে করি জনতার এই ঢল একদিকে আনন্দের অন্যদিকে প্রতিবাদের। তারা সরকারের গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছে। আর এই হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন আমাদের অনেকের সাথে কথা বলেছেন। তবে এটাকে ঠিক আনুষ্ঠানিক বৈঠক বলা যাবে না। জনতার এই ভিড়ের মধ্যে বৈঠক করার মতো পরিবেশও ছিলনা। তিনি আমাদের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং দলের নেতাদের বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছেন।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাত হয়েছে। তিনি আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগণের আশা আকাক্সক্ষা পূরণে কাজ করে যেতে বলেছেন। চট্টগ্রামবাসীর যে ভালবাসা তিনি পেয়েছেন তার জন্য তিনি এই অঞ্চলের গণমানুষের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। ডা. শাহাদাত বলেন, তিনি বলেছেন বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপি সামনের দিনে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হবে। আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের মানুষের ভালবাসায় অভিভ‚ত। তার সফরকে ঘিরে যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ