Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ -খালেদা জিয়া

ফারুক হোসাইন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ৫:২৭ পিএম

আওয়ামী লীগ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু বলার জন্য কথা না বলে মানবিকতার স্বার্থে মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিরোধিতা করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে আন্তরিক নয়। এ কারণে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতেও সরকার যথেষ্ট তৎপর নয়। আজ দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় ময়নাঘোনা সফিউল্লাহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের পাশে বিএনপি শুরু থেকেই আছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রথমে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চায়নি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে আমি প্রথম (২৮ আগস্ট) সরকারকে অনুরোধ করেছি। আমাদের সারা দেশের নেতাকর্মীরা শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দিনরাত এখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করছে। চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
খালেদা জিয়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর জুলুম, নির্যাতন ও নিধনযজ্ঞ বন্ধ করে তাদেরকে সসম্মানে নিজ দেশের নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মিয়ানমার যাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয় সেজন্য কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
বেগম জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বলবো, শুধু কথার কথা বললে হবে না, এটা কাজে দেখিয়ে দিতে হবে। সেজন্য অবিলম্বে মানবিক স্বার্থে আপনারা এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। যাতে শরণার্থী রোহিঙ্গরা তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। এটা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারটিও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ধনী নয় গরীব, কিন্তু ভালোবাসা আছে। সেজন্য গরীব হয়েও যে যেভাবে পেরেছে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই ভার বহন করার সম্ভব নয়। সেজন্য অতিদ্রুত তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বিএনপি প্রধান অতীতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে বিএনপি সরকারের সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে একবার এমন হয়েছিলো। তখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ৯৩ সালেও আবার এসেছিলো আমার সরকারের আমলে। তখনও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারকেও আহ্বান জানাবো, আপনাদের নিজের দেশের মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন। তাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে তা অমানবিক। ওপরে ওপরে সহানুভূতি দেখালে হবে না। সামনে শীত আসছে। এরা যাতে তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে নিরাপদে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ আমরা চালিয়ে যাবো যতদিন পারি। কিন্তু এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদের নাগরিককে সে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তাদের নির্ভয়ে থাকতে দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ তৎপরতায় সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি পর্যন্ত নয় বলেও মনে করেন বিএনপি নেত্রী। এই সরকারের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর যেভাবে কথা ছিলো, তারা দাঁড়ায়নি এখনো দাঁড়াচ্ছে না। বরং যারা কাজ করতে চায় তাদেরও নানাভাবে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে বিএনপি যেভাবে রিলিফ কার্যক্রম চালাচ্ছে সেভাবে সরকারের রিলিফ কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশ এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। সেজন্য শরণার্থী রোহিঙ্গাদের এখানে দীর্ঘদিন রাখা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসিসহ বিশ্বের বড় বড় দেশের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে ব্যবস্থা নেয়।’
তিনি বলেন, ‘হত্যা-নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ববাসীর নিকট আহ্বান জানিয়েছিলাম। এরপর বাংলাদেশ সরকার এদেশে তাদের আশ্রয় দেয়। এরপর বিশে^র বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং তাদেরকে তাদের ফেরত নিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গারা তাদের দেশে নির্যাতিত হতে থাকে এবং এ দেশে আসতে থাকে।’
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ তৎপরতায় সেনা মোতায়েনে এই প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা এসেছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরনার্থীরা আসার পর দুরবস্থায় ছিলো। বিএনপি শৃঙ্খলা আনতে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলো। আমাদের দাবি মোতাবেক সেনা মোতায়ের করেছিলো বলেই শৃঙ্খলা ফিরে আসে এবং ত্রাণ তৎপরতায় গতি আসে। সুতরাং সেনা বাহিনীকে এখানে রাখতে হবে। দেশি ও আন্তর্জাতিক যেসব সংস্থা ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি প্রথম থেকেই রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে এ সময় ত্রাণ তৎপরতাসহ বিএনপির বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
নিজের ত্রাণ দেয়ার সফরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারা এই হামলা চালিয়েছে সরকার তা জানে এবং সেটা মিডিয়াতেও দেখা গেছে। সরকারকে অবশ্যই এগুলো বন্ধ করতে হবে। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। বরং এগুলো করে মানুষের কাছ থেকে আপনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং আহতদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় খালেদা জিয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর মুখ থেকে তাদের উপর বর্বরতা ও নির্যাতনের ঘটনা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তাদেরকে ধৈর্য ধরার আহ্বানও জানান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনায় এবং ত্রাণ বিতরণে সুশৃঙ্খল অবস্থা তৈরির জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এছাড়া সারা দেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে সহমর্মিতা এবং মানবিকতা প্রদর্শন করছে তা অভূতপূর্ব।
এর পর বিএনপি চেয়ারপারসন হাকিমপুর ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং বালুখালীতে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এসময় খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ