পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস এলাকা লোকে লোকারণ্য। আউটার স্টেডিয়াম, কাজির দেউড়িসহ জনসমুদ্র কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা। সার্কিট হাউস হয়ে জুবিলী রোড, নিউমার্কেট, কোতোয়ালীর মোড়, ফিরিঙ্গিবাজার থেকে কর্ণফুলী সেতু-সড়কের দু’পাশে জনতার ঢল। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া সর্বত্রই মানুষ আর মানুষ। এই জনস্রোত ঠেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। সে এক অভ‚তপূর্ব দৃশ্য!
কোন জনসভা নয়, নয় কোন রাজনৈতিক দাবিতে রোডমার্চও। তারপরও জনতার বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখতে স্বতঃস্ফ‚র্ত জনতার এই ঢল। বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে ব্যানার ফেস্টুন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি। অনেকের হাতে ফুল, দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। নারী পুরুষের পাশাপাশি ছিলো শিশু-কিশোরও। চট্টগ্রামে গত দুই দিনে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরকে ঘিরে জনতার যে ঢল নামে তা ছিলো অভ‚তপূর্ব। পথে পথে স্বতঃস্ফ‚র্ত জনতার উত্তাল এ স্রোতে অভিভ‚ত বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৫ বছর পর চট্টগ্রাম এসে জনতার বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে আপ্লুত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জনতার শ্লোগান আর প্রাণঢালা অভ্যর্থনার জবাবে হাত নেড়ে সাড়া দেন বেগম খালেদা জিয়া। অনেক এলাকায় মানুষের ভিড়ে গাড়ি থেমে যায়। তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন, তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। গতকাল (রোববার) দুপুরে বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। ভোর থেকেই সার্কিট হাউসকে ঘিরে জনতার ঢল নামে। জনস্রোত সড়ক পার হয়ে ফুটপাতেও। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।
দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সার্কিট হাউসের দু’তলার সিঁড়ি বেয়ে খালেদা জিয়া নেমে আসতেই গগণবিদারী শ্লোগান। নীচতলায় অপেক্ষমান হাজার হাজার নেতাকর্মীর করতালি, পুষ্পবৃষ্টি বর্ষণ করেন। নেতাকর্মীদের ভালবাসায় সিক্ত খালেদা জিয়া ভিড় ঠেলে এগিয়ে যান লবিতে। সেখানে গাড়িতে উঠে বসেন তিনি। শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের পথচলা। কাজির দেউড়িতে আসতেই গাড়ি বহর আটকে যায় জনস্রোতে। স্রোত ঠেলে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় গাড়ি বহর।
কাজির দেউড়ি থেকে নিউমার্কেট হয়ে শাহ আমানত কর্ণফুলী সেতু সর্বত্রই জনতার উত্তাল উর্মিমালা। দোকান-পাট ছেড়ে ব্যবসায়ীরা সড়কে নেমে আসে। বাড়িঘর থেকে নেমে আসে নারী ও শিশুরা। ভবনের বারান্দা, ছাদ, দরজা, জানালায় দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে শুভেচ্ছা জানান অনেকে। এ সময় কাজির দেউড়ি থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকেই কর্ণফুলী সেতুর দুই পাড়ে হাজারও মানুষের ঢল নামে। গাড়ি বহর কর্ণফুলী সেতু পার হতেই জনতার ভিড় যেন আরও বেড়ে যায়। বিএনপির দুর্জয় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের পুরো মহাসড়ক জুড়ে ছিল মানুষের ভিড়।
শনিবার রাত ১১টায় সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছেন বেগম খালেদা জিয়া। গভীর রাতেও সার্কিট হাউসকে ঘিরে ছিলো জনসমুদ্র। জনতার ভিড়ে বেগম জিয়ার গাড়ি সিটি গেইট থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আসতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সিটি গেইট থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত সড়কে জনসমুদ্র দেখে খালেদা জিয়া অভিভূত হয়ে পড়েন। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তাকে স্বাগত জানাতে রাস্তায় নামেন। ভিড় ঠেলে তিনি যখন সার্কিট হাউসের দ্বিতীয় তলায় উঠেন তখনও হাজার হাজার নেতাকর্মী। তিনি তাদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তখনও থামছিলোনা শ্লোগান। তিনি তখন সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলেন।
রাতে সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার সফর সঙ্গিরা। রাতেই বেগম জিয়ার সাথে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা সৌজন্য সাক্ষাত করেন। বিএনপির এক নেতা জানান চট্টগ্রামের পথে জনতার ঢল থেকে উচ্ছ¡সিত হন তিনি। ফেনী ও মিরসরাইতে গাড়ি বহরে হামলায় ক্ষোভ এবং সড়ক পথে দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির ছাপ ছিল খালেদা জিয়ার চোখেমুখে। তবে চট্টগ্রাম নগরীতে পা রেখে জনতার উত্তাল তরঙ্গে উৎফুল্ল বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির নেতারা বলছেন, রাতের আঁধারে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার এই ঢলে আরও বেশি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি যখন সার্কিট হাউসে আসেন তখন তাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। জনতার বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে অভিভ‚ত চট্টগ্রামের নেতারাও। তারা বলছেন, চট্টগ্রামের বীর জনতা আবারও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে, বিএনপির পক্ষে। সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের হামলা, হুমকি-ধমকিতেও জনতার স্রোত ঠেকানো যায়নি।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্কিট হাউসে পৌঁছলে এনডিসি (নেজারত ডেপুটি কমিশনার) ও জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশে তাকে স্বাগত জানান তারা। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও মগদস্যুদের বর্বর গণহত্যার মুখে প্রাণ বাঁচাতে পালিতে আসা রোহিঙ্গাদের ত্রাণসামগ্রী দিতে চারদিনের সফরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মানবিক এ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি না থাকলেও বেগম জিয়ার গাড়ির বহরে বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নামে। আজ সোমবার কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে বেগম খালেদা জিয়ার ফের চট্টগ্রাম আসার কথা রয়েছে। এখান থেকেই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
আনোয়ারা সংবাদদাতা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আগমন ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী এলাকায় সকাল থেকে শত শত নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে ব্যাপক-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর বেলা পৌনে একটায় কর্ণফুলী সেতু পার হয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় পৌঁছালে সড়কের দু’পাশে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এ সময় নেতাকর্মীদের শ্লোগানে মুখরিত হয় আশপাশের এলাকা। কর্ণফুলী সেতু থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাধীন আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বাঁশখালী উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানায়।
পটিয়া সংবাদদাতা জানান, পটিয়ায় হাতি দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। তার গাড়ি বহর কক্সবাজার যাওয়ার পথে উপজেলার ভেল্লাপাড়া এলাকায় এ ব্যতিক্রমী অভ্যর্থনার আয়োজন করেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক। এছাড়া শান্তিরহাট বাজার, মনসা বাদামতল, গৈড়লার টেক, আমজুর হাট, ইন্দ্রপুল, উপজেলার সদর, পটিয়া বিএনপির দলীয় কার্যালয় চত্বর, বাসস্টেশন, কমলমুন্সির হাট, মোজাফরাবাদসহ বিভিন্ন স্পটে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যানার, প্যাস্টুন নিয়ে শ্লোগান দিয়ে নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের অভিযোগ পটিয়া থানার এস আই কামাল হোসেন বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্ব্যবহার ও উপজেলা গেইটে তাদের মাইক বন্ধ করে দেন। সকাল ৯টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষ পটিয়ায় মহাসড়কে খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর দুপুর ২টায় খালেদা জিয়া পটিয়া পৌরসদরে প্রবেশ করে। তবে পটিয়া ভেল্লাপাড়া থেকে মোজাফরাবাদ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
চন্দনাইশ সংবাদদাতা জানান, চন্দনাইশ ও দোহাজারী এলাকায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। বিএনপি কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন ও দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে রাস্তার দুই পাশে শ্লোগান দেয়। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে স্বাগত জানায় তারা। বেগম খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। মহাসড়কের ওই অংশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিকেল সাড়ে ৩টায় চন্দনাইশ এলাকা অতিক্রম করে খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।