Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিশেষ কারণে দেরি হলে বিবেচনা করা হবে -শিক্ষা মন্ত্রণালয়

৩০ মিঃ আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক করা হলেও বিশেষ কারণে কারও দেরি হলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল (বুধবার) জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা সামনে রেখে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্দেশনাটি বাধ্যতামূলক সকলকেই মানতে হবে। তবে ব্যতিক্রম কিছু হলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সেটা কার্যকারণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। কেউ একটা অ্যাক্সিডেন্টে পড়ে গেল সেক্ষেত্রে তো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, সে রকম ব্যতিক্রম থাকবে। সকল ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম থাকে। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করার নিয়ম করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা থেকে কার্যকর হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষকরা সকালে যাওয়ার পর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এটা বন্ধ করার জন্য পরীক্ষার্থীরা ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করবে, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করার পরই প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হবে। আধ ঘণ্টা আগে হলে পৌঁছালে পরীক্ষার্থীদের টেনশন কমে যাবে মন্তব্য করে সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, এটার অন্য একটা দিকও আছে- ঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য প্ল্যান করে বাসা থেকে বের হতে হবে। কারণ আমাদের যানজট বা ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রতিদিনের। সুতরাং আমরা সেভাবে প্ল্যান করতে বাধ্য হই। প্রশ্ন ফাঁস আটকাতে এই নিয়ম কীভাবে কার্যকর হবে সেই যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আগে হলে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকবে। অন্যদিকে যে ক্ষুদ্র অংশ অসাধু পন্থা অবলম্বন করে, তারা তখন এই সুযোগটা পাবে না, কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়ে যাবে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের সাথে অন্য কোনো মাধ্যম থাকবে না, তাই পরীক্ষার হলে ঢোকার পরে কমিউনিকেশন থাকছে না। কেউ যদি অসাধুপন্থায় কিছু করতেও চায়, সেই সুযোগটা আর পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আজকের যুগে একজন মানুষ যদি অসৎ হয়, বহু লোকের মধ্যে সেটা ছড়িয়ে দিতে পারে (প্রযুক্তি ব্যবহার করে); যেটা আগে সেটা ছিল না। আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে কারও সাথে যোগাযোগ করত না, লজ্জা পেত যে সহপাঠী বা আত্মীয়রা যদি শোনে! এই বোধটা বোধহয় আমাদের কমে গেছে, বোধটা জাগানোর চেষ্টা করছি। সচিব বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে ‘অল্প কিছু মানুষ’ জড়িত। কিন্তু সারা দেশে একজন করা আর সবাই করা একই কথা, কারণ ফলাফলটা হয় এক। সচিব বলেন, ট্রেজারি বা বোর্ড থেকে প্রশ্নের প্যাকেট নেওয়া হয়, খোলার কোনো বিধান নেই। প্রশ্ন কেন্দ্রে যাবে, সেখানে একটি ডেডিকেটেড রুম থাকে। সেখানে কয়েকজন পরীক্ষা করে দেখে যে কোনো ছেঁড়া আছে কি না, যেভাবে থাকার কথা প্যাকেট সেভাবে আছে কি না। আমরা চাইছি প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছাক, পরীক্ষার্থীরা হলে ঢুকে যাক, তারপর প্যাকেট খোলা হোক। এতদিন ‘বিশ্বাসের ওপর’ নির্ভর করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে সচিব বলেন, অদূর ভবিষ্যতে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে, যাতে কোথাও কোনো প্যাকেট খোলা হলে কেন্দ্র বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারবে। তিনি জানান, পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। তবে এবারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার সময় তা কার্যকর হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন শিক্ষার্থী। গতবছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪৫ জন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আগামী ১ থেকে ১৮ নভেম্বর চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় দেশের ২৮ হাজার ৬২৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুই হাজার ৮৩৪টি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবে। একই সময়ে বিদেশের নয়টি কেন্দ্রে এবার ৬৫৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২ জন ছাত্রী এবং ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৮ জন ছাত্র। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার জেএসসিতে ২০ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ জন এবং মাদরাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন পরীক্ষায় বসবে। জেএসসিতে এবার ৯৬ হাজার ২১২ জন এবং জেডিসিতে ১৪ হাজার ৩৬৭ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতবছর এক থেকে তিন বিষয়ে যারা অকৃতকার্য হয়েছিল তারাও এবার পরীক্ষা দেবে। এই সংখ্যা জেএসসিতে ৮৭ হাজার ৬৯৭ জন; জেডিসিতে ১১ হাজার ৭৭০ জন।
এবারও বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া অন্য সব বিষয়ের পরীক্ষা হবে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে। জেএসসি-জেডিসিতে এবার থেকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারুকলা বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। বছরজুড়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এসব বিষয়ের নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বোর্ডে সরবরাহ করা হবে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি পত্রে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে। বহু নির্বাচনী ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে দুটি বিভাগ থাকলেও দুটি অংশ মিলে ৩৩ পেলেই পাস বলে গণ্য হবে, অর্থাৎ এসএসসির মত দুই অংশে আলাদাভাবে পাসের প্রয়োজন নেই। শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা বরাবরের মতই অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম ও সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধীরা পাবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি প্রফেসর মাহবুবুর রহমান ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ