পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারের যথাযথ কূটনৈতিক পদক্ষেপের অভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান কঠিন পর্যায়ে পৌছেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু আমহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, শুরুতে সরকার রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী ও ইসলামী জঙ্গি অভিহিত করে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে একযোগে অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের জনগণ ও বিশ্ব স¤প্রদায় রোহিঙ্গাদের উপর দমন-পীড়ন ও জাতিগত নিধনের বিষয়ে সোচ্চার হলে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের আশায় সরকার লোক দেখানো সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। সরকার শুরু থেকেই যথাযথ কূটনীতিক অবস্থান না নিয়ে ‘সমস্যাকে দুর্বল করে’ দিয়ে সমাধানকে কঠিন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গতকাল (শনিবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জিয়া পরিষদ আন্তর্জাতিক আইনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা: সমাধান ও করণীয় শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় আমির খসরু বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ক্ষমতাসীনদের নৈতিক কোনো অবস্থান নেই। যে সরকারটি অনির্বাচিত, যে সরকারটি ক্ষমতা জোর করে দখল করেছে এবং আবার জোর করে দখল করার পাঁয়তারা করছে, যে সরকারটি বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যার মধ্যে আছে, মানবাধিকারে বিশ্বাস করে না, আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না, সেই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই আজকে এ সমস্যা সমাধানে’। তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দোসরদের নির্যাতনে প্রাণভয়ে দুই মাসের কম সময়ে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এতে বড় ধরনের মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুই জেলা কক্সবাজার ও বান্দরবানে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পালিয়ে আসার এই স্রোত এখনো অব্যাহত আছে। এমন বাস্তবতায় এই জনগোষ্ঠীকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দৃশ্যত কোনো সদিচ্ছা নেই মিয়ানমারের। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সুচি কিংবা জেনারেলদের স্পষ্ট কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
বিএনপি নেতা বলেন, যে দেশ (মিয়ানমার) তাদের দেশের একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিধন করতে বাংলাদেশকে টার্গেট করে রোহিঙ্গাদের পাঠিয়েছে, তারা খুব ভালো করে জানে- এরা কেউ ভারতে যেতে পারবে না, থাইল্যান্ডে যেতে পারবে না, এরা কেউ চীনের যেতে পারবে না। যেখানে আমার দেশ মিয়ানমারের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার, সেই দেশ যখন পরিকল্পনাকারী দেশের সাথে এক সুরে গান গায়, এক সুরে কথা বলে সেখানেই তো আমাদের অবস্থান শেষ হয়েছে গেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর পাল্টা সেনা অভিযানে গত ২৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশমুখে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। প্রথমদিকে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও এর মধ্যে পালিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে গেলে কয়েকদিনের মধ্যেই সীমান্ত খুলে দেয় সরকার। একইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মিয়ানমারকে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালানোর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। শুরু থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু।
তিনি বলেন, যদি প্রথম দিন থেকে আপনার (সরকার) অবস্থান মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতেন, কূটনৈতিক অবস্থান নিতেন এবং সাথে সাথে আপনি মানবিক অবস্থান নিতেন তাহলে বিশ্বের সামনে আমাদের অবস্থান ভিন্ন হতে পারত। বাংলাদেশের জনগণ এই ইস্যুতে একতাবদ্ধ ছিল। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি, এখানে কোনো রাজনীতি নয়, আমাদের সবাই একতাবদ্ধ হতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটে সরকার ‘বন্ধুহীন’ মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, আমরা দেখেছি, এই অঞ্চলে যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপার ছিল সেখানে আমাদের কোনো বন্ধুই নাই। যারা আমাদের বন্ধু বলেছিল এতদিন, এই সরকার প্রচারণা করেছিল... তারাও কেউ পাশে আসেনি। বরঞ্চ এরা সবাই মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। আমরা একটা বন্ধুহীন অবস্থায় একদিকে। অন্যদিকে নিজেকে আমরা দুর্বল অবস্থায় নিয়ে গেছি। আমরা ইস্যুটাকে ডায়লুট করে ফেলেছি, যে ইস্যুটা ছিল পরিষ্কার, স্বচ্ছ; যার কারণে আজকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান একটা কঠিন পর্যায় চলে গেছে।
১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বিএনপি ‘সফল’ হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভ্রান্ত পথে চলেছে।
মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া এই সমস্যার সমাধানে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে দেশে ‘জাতীয় ঐক্যের’ প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ভালো ভালো কথা শুনবেন। কিন্তু আজকে রোহিঙ্গা ইস্যু যে জায়গা গিয়ে পৌঁছেছে, সেখান থেকে ফেরত নিতে হলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা আছে। নির্বাচিত সরকার, প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রয়োজন আছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রয়োজন আছে, আইনের শাসনের প্রয়োজন আছে। তাহলেই বিশ্বব্যাপী আপনার (সরকার) অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। আপনার অবস্থান শক্তিশালী হলে কূটনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী হবে। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রফেসর এসএম হাসান তালুকদার। জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহহিল মাসুদের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লুৎফর রহমান, প্রফেসর এমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কামরুল হাসান এবং প্রফেসর ফিরোজা বেগম বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।