Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের হস্তক্ষেপে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না -খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 সরকারের হস্তক্ষেপ ও প্রভাবে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, শাসক মহলের নানামুখী তৎপরতা, হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের কারণে বিচারকগণ আইন অনুযায়ী ও বিবেক শাসিত হয়ে বিচার করতে পারছেন না। রায়, সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকগণকে তোয়াক্কা করতে হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। ক্ষমতাসীনেরা কিসে তুষ্ট এবং কিসে রুষ্ট হবেন, সে কথা মাথায় রেখে বিচারকদের চলতে হচ্ছে। কারণ বিচারকদের পদোন্নতি ও নিয়োগ এবং হয়রানি ও বদলীর ক্ষমতা বিপুলভাবে রয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের হাতে। এই ক্ষমতা অপপ্রয়োগের ভয় তাই বিচারকদের মনে থাকাটাই স্বাভাবিক। নিম্ন আদালতে এই পরিস্থিতি ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব আরো বেশি প্রকট। গতকাল (বৃহস্পতিবার) পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া।
আদালতে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং আমার ও শহীদ জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমানকে অর্থ পাচারের একটি বানোয়াট অভিযোগ থেকে তার অনুপস্থিতিতিতেই একজন বিচারক বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। এই অপরাধে শাসক মহল ওই বিচারককে হেনস্তা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে এমন সব তৎপরতা শুরু করে যে, তাতে তাকে আত্মরক্ষার জন্য সপরিবারে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। এই একটি মাত্র উদাহরণই ন্যায়বিচার ব্যাহত করতে এবং ব্যক্তি বিচারকদের নিজস্ব নিরাপত্তা বোধের ব্যাপারে শংকিত করার জন্য যথেষ্ট। এমন সব ঘটনা সরবে ও নীরবে অহরহ ঘটছে। এসব কারণেই দেশে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায়বিচার থেকে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে শাসক মহলের বিরোধ সম্প্রতি প্রায় প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, বিচার বিভাগের হাত-পা বাঁধা। তিনি আরো বলেছেন, বিচারকগণ স্বাধীন নন। এসব কারণেই আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বাসা বেঁধেছে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।
একই ধরণের অভিযোগে দায়ের করা অন্যান্য মামলা কোর্ট-কাছারির অঙ্গনে পরিচালিত হলেও আমার বেলায় কেন ন্যাক্কারজনক ব্যতিক্রম প্রশ্ন তুলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, আপনি কোথায় বসে এই মামলার বিচার কাজ পরিচালনা করছেন? কোথায় স্থাপন করা হয়েছে আপনার এই এজলাস? এটা কি বিচারের কোনো প্রাঙ্গণ? এটা কি কোর্ট-কাচারির কোনো এলাকা? আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বিচারের জন্য বিশেষ আদালত বসেছে আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে। এই মাদরাসা প্রাঙ্গণের সঙ্গে বিচার ও কোর্ট-কাচারির কোনো সম্পর্ক আছে কি? এখানে এলেই আমার মনে পড়ে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের অবৈধ ও অসাংবিধানিক শাসনামলের কথা। দেশের নেতা-নেত্রী ও রাজনীতিবিদদের হেনস্তা ও হয়রানির উদ্দেশ্যে আইন-আদালত অঙ্গনের বাইরে পৃথক এলাকা, জাতীয় সংসদ ভবনে তারা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ও এজলাস বসিয়েছিল। গণতন্ত্র, সংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের অসম্মান, অপমান ও হেয় করাই ছিল তাদের সেদিনের কার্যকলাপের উদ্দেশ্য। কিন্তু আজও কেন তারই ধারাবাহিকতা চলছে? তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ও সাবেক বিডিআর বিদ্রোহের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার করার জন্য এই আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে এজলাস বসানো হয়েছিল। বাংলাদেশের বিচারের ইতিহাসে বিদ্রোহ, ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা ওই মামলাটি একটি অভ‚তপূর্ব ও বিশেষ মামলা। শত শত অভিযুক্ত ও সাক্ষীর উপস্থিতিতে সেই মামলা পরিচালনার উপযুক্ত কাঠামো বিরাজমান কোর্ট-কাছারির প্রাঙ্গণে নেই। তাই আলীয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে এজলাস স্থাপন করে সেই বিশেষ মামলাটি বিচারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা ও বিদ্রোহের বিচারের জন্য যেখানে এজলাস স্থাপন করা হয়েছিল সেখানে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কেন করা হবে? একই ধরণের অভিযোগে দায়ের করা অন্যান্য মামলা আপনি কোর্ট-কাছারির অঙ্গনে বসেই পরিচালনা করছেন। কেবল আমার বেলায় কেন এই ন্যক্কারজনক ব্যতিক্রম।
বিচারের নামে জনসম্মুখে হেয়, অপমান ও অপদস্ত করার জন্য বিশেষ আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিচারকের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, এই বিশেষ জায়গায় কেন বিচার করতে হচ্ছে? আমরা সকলে জানি এবং আপনিও জানেন, এর জন্য আপনি দায়ী নন। এই সিদ্ধান্ত আপনি নেননি। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কাজ কোথায় বসে পরিচালিত হবে, এজলাস কোথায় স্থাপিত হবে, সেটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে শাসক মহলের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় জড়িত। তারাই এখানে এজলাস বসিয়েছে আমার মামলার বিচারের জন্য। শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও খুন-ধর্ষনের দায়ে অভিযুক্তদের যেখানে বিচার হয়েছে সেখানে এজলাস বসিয়ে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বিচারের আয়োজন তারাই করেছে। সেখানে আমাকে হাজির হতে হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে বিচারের আগেই, বিচার চলাকালেই এবং বিচারের নামেই আমাকে জনসমক্ষে হেয় করা, অপমান করা, অপদস্ত করা। এটাও বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ এমন একটি ভীতিকর পরিবেশের জন্ম দিয়েছে যার কারণে জনমনে ন্যায়বিচার সম্পর্কে চরম সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে আমাকে বিচারের আগেই এবং বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এক ধরণের চরম হেনস্তা ও অসম্মানিত করা হচ্ছে। এর প্রতিবিধান আমি কার কাছে চাইবো? কোথায় পাব এর প্রতিকার?
সরকার ও ক্ষমতাসীনরা তার (খালেদা জিয়া) মামলায় সম্ভাব্য সকল পন্থায় বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে জানিয়ে এর সপক্ষে প্রমাণও তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সম্ভাব্য সকল পন্থায় বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অবিরাম অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। বিচার প্রভাবিত করা এবং বিচারাধীন বিষয়ে বলগাহীন মন্তব্যের মাধ্যমে হস্তক্ষেপের একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই। বিচারককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি জানেন, বিএনপি বাংলাদেশে জনগণের রায় নিয়ে বারবার এবং দীর্ঘসময় দেশ পরিচালনা করেছে। দায়িত্বশীল একটি বৃহত্তম দল বিএনপি। সারাদেশে এ দলের রয়েছে বিপুল জনসমর্থন ও গণভিত্তি। আমাদেরকে রাজধানীতে সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। অথচ শাসক দল রাস্তাঘাট বন্ধ করে, জনচলাচল বিঘিœত করে, জনজীবন বিপর্যস্ত করে গত ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করেছে। সেই জনসভায় বিনা ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেছেন। ১১ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন। এতিমের নামে টাকা এসেছে। মামলায় হাজিরা দিতে যান। একদিন যান তো দশ দিন যান না, পালিয়ে বেড়ান। ব্যাপারটা কী? এতেই তো ধরা পড়ে যায় যে চোরের মন পুলিশ পুলিশ।” খালেদা জিয়া বলেন, একটি বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মানহানিকর, জঘণ্য ও কদর্য উক্তির আমি কী জবাব দেব? যিনি প্রকাশ্যে এসব জঘণ্য উক্তি করছেন তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি ও আত্মসাতের মামলা ছিল। তার নিকটাত্মীয় শেখ সেলিম এবং তার দল আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে সে সব দুর্নীতির কথা অনর্গল বলেছিলেন। সেগুলো মানুষের স্মৃতিতে ও মুখে মুখে আছে। ইউটিউবে সে সবের ভিডিও এখনো রয়ে গেছে। অথচ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসার পর তার বিরুদ্ধের সেই দুর্নীতির মামলাগুলো একে একে প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আমরা কখনো এমন কুৎসিত উক্তি তার সম্পর্কে করিনি। ক্ষমতাসীনরা কাঁচের ঘরে বসে অন্যের দিকে ঠিল ছুড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনো দুর্নীতি, লুটপাট ও বিদেশী ব্যাংকে তাদের বিপুল অর্থভান্ডারের সংবাদ দেশবাসী ও সারা দুনিয়া জানতে পারছে। তারাই আবার কাঁচের ঘরে বসে অন্যের দিকে ঢিল ছুঁড়ছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের এক পয়সাও তছরুপ হয়নি উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলার বিচার কাজ আপনার (বিচারক) আদালতে হচ্ছে। মামলার অভিযোগ এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য কাগজপত্র আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন। আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে নিশ্চিতভাবেই জেনেছেন যে, জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের যে অর্থ এসেছিল তার একাংশ দিয়ে স্থাপিত এতিমখানায় এতিমদের কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। সেই অর্থের বাকি অংশ যা ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল তার প্রতিটি পয়সাই রক্ষিত রয়েছে। ব্যাংকের সুদ যুক্ত হয়ে সেই টাকার পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে। এর একটি পয়সাও অপচয় বা তছরূপ হয়নি। কেউ চুরি করে খাওয়ার প্রশ্নও ওঠেনি।
বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে কুৎসিত উক্তি করেন সেই প্রশ্ন তুলে বিএনপি প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কেমন করে এতিমের টাকা চুরি করে খাওয়ার মতো মানহানিকর ও কুৎসিত উক্তি করলেন? বিচারাধীন বিষয়ে এমন মন্তব্য করার অধিকার ও এখতিয়ার কি তাঁর আছে? এটা কি আইনের লংঘন ও বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ নয়? আপনি কি পারবেন এর প্রতিকার করতে? বিচার প্রভাবিত করার এই অন্যায় ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার প্রতিবিধান কি আমি আপনার কাছ থেকে চাইতে পারি না?
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই আপনার এই আদালত আইনের দ্বারা পরিচালিত। এই আদালতে আমার উপস্থিতি ও হাজিরা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও আপনি স্বাধীনভাবে গ্রহণের অধিকার রাখেন বলেই আমি মনে করি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর উক্তি কি আপনার সেই অধিকার ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়? জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের উক্তিটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তিনি নিজে, তার মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিচারাধীন এই মামলা নিয়ে ক্রমাগত বল্গাহীন মন্তব্য করে চলেছেন। এই মামলায় রায় কী হবে সেটাও তারা প্রকাশ্য বক্তব্যে ডিক্টেট করে চলেছেন। এই অপতৎপরতা ও বেআইনি প্রচারণা বন্ধের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ন্যায়বিচার নিয়ে আমাদের ও দেশবাসীর মনে প্রবল আস্থাহীনতা এবং ঘোর সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
সমগ্র বাংলাদেশকেই আজ এক বিশাল কারাগার বানানো হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সবখানেই চলছে অস্থিরতা ও গভীর অনিরাপত্তাবোধ। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এই মুহূর্তে কারাগারে বন্দী। বিএনপি’র প্রায় ৭৫ হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। আমাদের দলের ৪ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতন, হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে বহু নেতা-কর্মী বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেন না। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী। তাদের ঘরে ঘরে আজ কান্নার রোল। এখন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বড় বেশি বলা হয়। কিন্তু কোথায় আজ সাংবিধানিক শাসন? আমাদের সংবিধান নাগরিকদেরকে যে-সব অধিকার দিয়েছে, কোথায় আজ সে-সব অধিকার? কোথায় আজ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার?
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন সামান্য মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে আদালতে বলেন, দেশ-জাতির স্বার্থ ও কল্যাণে আমার জীবন, সীমিত শক্তি-সামর্থ এবং মেধা ও জ্ঞানকে আমি উৎসর্গ করেছি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টকে কেন্দ্র করে আমিসহ অন্যান্যের বিরুদ্ধে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলার সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও পুরোপুরি বানোয়াট। সমস্ত অভিযোগ স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর। এই ট্রাস্টের অর্থায়ন, পরিচালনা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে আমার নিজের ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং এখনো নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এমন একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে আমি হয়রানি, পেরেশানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমার স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম। দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য, তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে নিয়োজিত আমার প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন সব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার কারণে আমার দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের এক বিরাট অংশকে থাকতে হচ্ছে গভীর উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। কারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন ধারণা প্রবল যে, দেশে ন্যায়বিচারের উপযোগী সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখন নেই।



 

Show all comments
  • আরাফাত ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:৪০ এএম says : 0
    একদম ঠিক কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul kalam Azad ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৫৫ পিএম says : 0
    EX PM forget previous times. At that time remember Government 's rules.
    Total Reply(0) Reply
  • Arefin Rajib ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৫৫ পিএম says : 0
    সহমত প্রিয় দেশনেত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • রাজা ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৫৬ পিএম says : 0
    ১০০% সত্য কথা বলেছেন জনগণের নেত্রী
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ