ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি
আজ ২০ অক্টোবর ভাষা আন্দোলনের সিপাহসালার জাতীয় নেতা অলি আহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে এক আপোষহীন নেতার নাম অলি আহাদ। নীতিহীন রাজনীতির যুগে অলি আহাদ আদর্শিক রাজনীতির ধ্রæবতারা। ১৯২৮ সালে অলি আহাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকরিকালীন এলাকা কুমিল্লার হোমনা থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম- এ ফার্স্ট হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটকে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার অপরাধে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। এমকমের ভর্তির আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করেন। ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন।
১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে অলি আহাদের রাজনীতিতে আগমন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অলি আহাদ। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রথম কর্মসূচিতে ১১ মার্চ তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কারারুদ্ধ হন, ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন অলি আহাদ। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ২১শে ফেব্রæয়ারির গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক অলি আহাদ। ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি, সিয়াটো, সেন্টো চুক্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হলে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন অলি আহাদ। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৪ বছর কারাগারে ছিলেন। ১৯৬৪ সালে এনডিএফের অন্যতম নেতা অলি আহাদ। মৃত্যুকালে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রসৈনিক অলি আহাদ। এক সামরিক সরকারের আমলেই আটবার কারারুদ্ধ হন অলি আহাদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অলি আহাদের রাজনৈতিক গ্রন্থ ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫’ ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।
আমার সাথে অলি আহাদের পরিচয় ১৯৭৩ সালে। তিনি প্রতিদিন অফিসে এসে মনোযোগের সাথে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা পড়তেন এবং প্রধান প্রধান অংশ আন্ডারলাইন করে সবাইকে তা পড়তে দিতেন। প্রতিদিনের পত্রিকা এবং প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক গ্রন্থ পড়া প্রতিটি কর্মীর জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি দেশের এবং দেশের বাইরের বড় ঘটনার পেপারকাটিংয়ের ফাইল করতেন এবং সবাই তা পড়ে পর্যালোচনা মিটিংয়ে যোগ দিত। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে সভা শুরু করতেন। তিনি সাধারণ মানের খাবার খেতেন। হরতালের সময় অনেক দিন দুপুরে সবার সাথে শুধু আলু সিদ্ধ খেয়েই কাটাতেন। হরতাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি যানবাহনে চড়তেন না। তিনি স্পষ্ট কথা বলতেন, কোনোরকম চাতুর্যপূর্ণ বা প্রতারণামূলক কর্মকাÐকে তীব্র নিন্দা করতেন। তিনি সাধারণ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক পর্যালোচনা মনোযোগের সাথে শুনতেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মতামতেরও গুরুত্ব দিতেন। নিজ ধর্মের অনুশাসন কঠোরভাবে পালনকারী অলি আহাদ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্রসৈনিক। বেচা-কেনার ও নীতি-আদর্শহীন বাণিজ্যিক রাজনীতির এই যুগে অলি আহাদের বড় প্রয়োজন ছিল। অলি আহাদ আমাদের মাঝে নেই। অলি আহাদের আদর্শিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে পারলেই তার আত্মা শান্তি পাবে।
লেখক : ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সস্পাদক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।