Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকাসক্তি: সামাজিক অবক্ষয় এবং আমাদের করণীয়

আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলাম শান্তির ধর্ম। আহŸান করে স¤প্রীতির দিকে, ঐক্যের বন্ধনে। মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামেই। পরামর্শ দেয় অশান্ত, বিশৃঙ্খল ও অশালীন জীবনযাত্রা থেকে দূরে থাকার। বিভিন্ন অপকর্ম ও অশ্লীলতা থেকে বারণ করে। বর্তমান সমাজ বহু সমস্যায় জর্জরিত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ বাষ্পের ন্যায় প্রবেশ করছে জীবন বিনাশী কাল-নাগিনীর মাদকাসক্তি। নেশাকে সর্বনাশা জেনেও মানুষ এই নীল দংশনে দংশিত হচ্ছে প্রতিক্ষণে। সুচিন্তিত পরিকল্পনা, সমবেত শুভ্র প্রায়াশ এবং সদিচ্ছার মাধ্যমে সামাজিক ও অনৈতিক সমস্যা সমূহের সমাধান হতে পারে কিন্তু কাল কেউটের আক্রমনের থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন ব্যাপার। বিনাশের নীল নেশায় সমাজের জীবন আজ বিপর্যস্ত। দুর্নীতি আশ্রিত কাল নাগিনীর বিষ বাংলার সমাজের শিরা উপশিরায় যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা যদি রোধ না করা যায়, তাহলে অচিরেই এ হতভাগ্য জাতিকে পুনরুজ্জীবিত করার স্বপ্ন ধুলিসাৎহয়ে যাবে।

মাদকাসক্তি : সাধারনত যে সকল দ্রব্য সামগ্রি পান, গ্রহণ ও ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি হয়, সে সব জিনিষ নিয়মিত সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়াকে মাদকাসক্তি বলে। অন্য কথায় নেশা জাতীয় দ্রব্য সামগ্রি যা চিত্ত বিভ্রমকারী তা গ্রহণ কারার আগ্রহই মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্য ব্যবহারে মানুষ শুধু নেশাগ্রস্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তা নয় বরং মানুষকে একজন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য পশুতে রূপান্তরিত করে দেয়।
মাদকদ্রব্য সমূহ : জাহিলিয়াতের যুগে নতুন সংস্করণ আধুনিক সভ্যতার ধ্বজাধারীরা এক সময় আনন্দ উৎসবের নামে আর চিত্ত বিনোদনের নামে স্বর্গীয়সুখ লাভের স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের সমাজকে শিখিয়েছিল তাড়ি , আফিম , গাজা , ভাং , চরস , হাশিশ , মারিজুয়ানা , ইত্যাদি ব্যবহার করতে । অধুনা রাসায়নিক পদ্ধতিতে আরো আবিষ্কার করা হয়েছে হেরোইন , মারফিন , কোকেন , ও বিভিন্ন প্রকারের এলকোহল এবং প্যাথডিনের মত কত বিষ নাশক সুধা।
মাদকাসক্তির কুফল : মানুষ যখন বিভিন্ন প্রতিকূলের কারণে নেশায় জয়িয়ে পয়ে। তখন কি সে চিন্তা করে এর শেষ পরিণাম কি? সামনে তার কত অশান্তি ভোগ করতে হবে। মাদকাসক্তি সামান্য তৃপ্তি আর শান্তি, কিন্তু এ শান্তি কি প্রকৃত শান্তি ? এ তৃপ্তি কি প্রকৃত তৃপ্তি? কখনও নয়। কিন্তু কেনো এ কৃত্রিম শান্তি আর তৃপ্তির পেছনে সবাই? আসুন দেখে নেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির কুফল।
১. ধর্মীয় কুফল : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন কেবল তার ইবাদাত ও তাকে স্মরণের জন্যে। কিন্তু তার এ মহান উদ্দেশ্য অর্জনে প্রধান বাধাদানকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তি মানুষকে নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদাত নেক কাজ তথা সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে। লিপ্ত করে পাপাচার , অশ্লীলতা, হাইজ্যাক, পতিতাবৃত্তি, স্মাগলিং ও মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের মত সমাজের জঘন্যতম বিকৃত কাজে। ২. দৈহিক কুফল : মাদকাসক্তি মানবদেহে অত্যন্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ইহা সেবনের ফলে হজম শক্তি লোপ পায়, ক্ষুধা মান্দা, পাকস্থলীতে ঘা, স্নায়ূ দূর্বলতা, হৃদপিন্ডের দূর্বলতা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। শির ধমনীর শক্তি ক্ষয় হয় এবং অকালে বার্ধক্য আসে। ইহা ছাড়াও আরো অনেক দৈহিক কুফল বয়ে আনে এর কারণে। ৩. মানসিক কুফল : মানুষের বিবেক বুদ্ধি ও মস্তিস্কের ওপর মাদকাসক্তির প্রতিক্রিয়া আরো মারাত্মক ও ক্ষতিকর। এতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে মস্তিস্কের উচ্চতর বুদ্ধিবৃত্তির স্তর। ব্যক্তি হয়ে পড়ে মাতাল ও লজ্জাহীন। এক পর্যায়ে চেতনা শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। ৪. সামাজিক কুফল : মাদকাসক্তি শুধু মানবতা ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপেরদিকেই উদ্বুদ্ধ করে না বরং মানুষকে যাবতীয় মন্দ ও ঘৃণ্যতর কাজের দিকেও ধাবিত করে। আমাদের প্রিয় রাসূল (সা.) এর ভাষায় “মাদকাসক্তি সকল অপকর্ম ও অশ্লীলতার উৎস”। দু:খজনক হলেও সত্য এই সর্বনাশা অভিশাপের শিকার সমাজের সর্বস্তরের লোক। ৫. অর্থনৈতিক কুফল : অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মাদকাসক্তি বিপুল ক্ষতি সাধন করে থাকে। নেশার তাড়নায় সুরাসক্ত ব্যক্তি নিজের সর্বস্ব বিক্রি করেও ক্ষান্ত হয় না। পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সমাজের আরও দশজনের টাকা পয়সা লুটপাট করে জাতীয় জীবনে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে টেনে আনে মারাত্মক ধস। এমনিভাবে মাদকাসক্তি প্রাচুর্য্যরে অধিকারীকেও নিস্ব ও পথের ভিখারী করে তোলে। বিড়ম্বনা, হতাশা ও দুর্ভোগ তখন তার নিত্যসঙ্গি হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিরোধ : পৃথিবীতে কোন ধর্মই মাদক দ্রব্য ব্যবহার অনুমোদিত করে নাই আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবহার একটি জঘন্য ধর্মীয় ও সামাজিক অপরাধ। গোটা বিশ্ব আজ মাদক বিরোধী আন্দোলনে সোচ্ছার। কত শ্লোগান, বক্তৃতা মিছিল, সভা, সেমিনার, কত আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা। নিজে মাদকাসক্ত হয়েও মাদক বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া ইদানিং ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সংবিধানে মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, অপরদিকে লাইসেন্স প্রধান করে আবগারী শুল্ক ধার্য্য করা; সংবিধানের সঙ্গে এ যেন এক উপহাস, ছেলে খেলা বৈকি? কথায় বলে চোরকে কয় চুরি কর, গৃহস্থকে কয় সজাগ থাক তাই এই ছেলে খেলা হতে বাঁচার জন্য্য ইসলাম আজ থেকে সাড়ে ১৪০০ বছর পূর্বেই পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে মাদক দ্রব্য গ্রহণ ,ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ রূপে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন মানুষ তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, বল দুটোই বড় পাপের কাজ এবং মানুষের জন্যে তাতে তুচ্ছ উপকার থাকলেও উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী।’ (সুরা বাকারা: ২৯৯) অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিলেন, ‘হে মোমিনগণ ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তি হয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার। (সূরা নিসা: ৪৩) এ ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘নেশা জাতীয় যে কোন দ্রব্য মদের অন্তর্ভুক্ত। আর যাবতীয় মদই হারাম।’ (বোখারি শরিফ) প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মদপান করে , যে মদপান করায়, মদের ক্রয় ও বিক্রয়ে, প্রস্তুতকারী, আর যে প্রস্তুত করায়, যে ব্যক্তি এক স্থান হতে অন্য স্থানে বহণ করে, যার জন্য বহন করা হয়, এবং যারা মদের লাভ্যাংশ ভোগ করে এদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ রয়েছে। (মুসলিম শরিফ)
(চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ