Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে ব্ল-হোয়েলে হতাশাগ্রস্ত কিশোরের আত্মহত্যা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাতে ব্ল-হোয়েলের ছবি আঁকা ছিল : পরিবার ও এলাকাবাসী বলছেন, নিহত সায়েম ব্ল- হোয়েল গেমে আসক্ত ছিল
অনলাইন সুইসাইডাল গেম ব্ল-হোয়েল খেলে রাজধানীতে এক কিশোরের আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কিশোরের নাম মো. সায়েম। বয়স ১৬। সে মিরপুরের কাজিপাড়ার বাসিন্দা। গত সোমবার রাত নয়টার দিকে কাজিপাড়ার বাসা থেকে পুলিশ সায়েমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। আত্মহননকারী ওই তরুণের হাতে ব্ল-হোয়েলের ছবি আঁকা ছিল। তার পরিবার ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, সায়েম ব্ল- হোয়েল গেমে আসক্ত ছিল। সে তার বাবার সঙ্গে ফুটপাতে একটি চায়ের দোকানে কাজ করত। মিরপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সায়েমের লাশ উদ্ধার করেছে। গত সোমবার রাতেই তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, মৃত সাইমের বাম হাতে একটি তিমি মাছ আঁকা পাওয়া যায়। ব্ল-হোয়েল গেমসের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ ধারনা করছেন। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নিহত সায়েমের এক বন্ধু গতকাল মঙ্গলবার সকালে জানায়, সায়েম তাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ক্রিকেট খেলত। মারা যাওয়ার আগের দিন রাত ১২টার দিকেও সায়েমের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে তাদের। সে সময় তাকে দেখে বা কথাবার্তা শুনে কোনো অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। সে আরো জানায়, সায়েম বন্ধুদের সঙ্গে সব সময় উৎফুল্ল থাকত। তাকে দেখে কখনই সন্দেহজনক কিছু মনে হয়নি। ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, ময়নাতদন্তে সাইমের গলায় ফাঁস দেয়ার মতো একটি দাগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, সাইমের গলায় আমার দাগ পেয়েছি। গলা থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া রক্ত ও ভিসেরা ফ্রিজআপ করা হয়েছে, এগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। ডা. প্রদীপ বিশ্বাস আরো বলেন, এর আগে অনেক মানুষের ময়নাতদন্ত করেছি, তাদের হাতে টেটু বা বিভিন্ন ধরনের লেখা পেয়েছি। কিন্তু এই প্রথম সাইমের বাম হাতে একটি তিমি মাছ আঁকা দেখলাম। এটা দেখে মনে হলো সুচালো কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মাছটি আঁকা হয়েছে। পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। সায়েমের বাবা বাবু দেওয়ান জানান, ৬ষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সাইম। মিরপুর এলাকায় তাদের একটি বইয়ের দোকান আছে। দোকানটি দেখাশোনা করতো সে। কিছু দিন ধরে সাইমের অনেক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিলো। তবে সে সব সময় ফুলহাতা শার্ট পরতো বলে তার হাতে আঁকা তিমি মাছটি পরিবারের কেউ দেখতে পাননি। সূত্র জানায়, অনলাইন সুইসাইড গেম ব্ল-হোয়েল। স্বেচ্ছায় কিংবা কৌতুহলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তরুণরা এই গেম খেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রতিবেশি দেশ ভারতের এই মরণছোবল হেনেছে অনেকদিন হলো। এবার বাংলাদেশেও এই গেমে আসক্তদের খবর মিলছে। আত্মঘাতি এই গেমের ৫০টি ধাপ। সর্বশেষ পরিণতি মৃত্যু। লেভেল ও টাস্কগুলি ভয়ঙ্কর। গেম যত এগোবে, টাস্ক তত ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। প্রথমদিকের টাস্কগুলি মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। কেউ খেলায় ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌঁছে যায় নির্দেশাবলী। সেইমতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জগুলি একে একে পূরণ করে তার ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে। নিজের হাত কেটে তিমির ছবি এঁকে ছবি তুলে পাঠাতে হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীকে হোয়েল বলা হয়। স্বেচ্ছায় তারা এই মরণ খেলায় যোগ দেয়। বাংলাদেশে এই গেমের সব লিঙ্ক বন্ধ করতে গত ১৬ অক্টোবর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ৬ মাসের মধ্যে ব্ল-হোয়েলের সব লিংক এবং রাত্রিকালীন ইন্টারনেটের বিশেষ প্যাকেজ বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়। একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকার বলছে, প্রাণঘাতী এ গেমটির বø্যাকমেইলের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৮০ জন আত্মহত্যা করেছে। এ গেমের আসল অ্যাডমিন বুদেকিনকে আটক করা হলেও বিভিন্ন দেশে এর অ্যাডমিন থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে গেমের প্রভাব এখন ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে।



 

Show all comments
  • নাহিদা সুলতানা ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৩২ এএম says : 0
    কী যে শুরু হলো !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্ল-হোয়েল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ