Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় মাঝরাতে শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখল

রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকসহ অবরুদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথার কবি নজরুল সড়কের পশ্চিম পাশের একটি অংশ মাঝরাতে দখল নিয়েছে একটি চক্র। পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং যুবলীগের একটি গ্রæপের মাধ্যমে এই দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ‘মারোয়াড়ী ধর্মশালা’ কমিটির ব্যানারে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মাঝরাতে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও শহরবাসীর নজরে আসে শুক্রবার সকালে। দখলকৃত ওই সম্পত্তির আনুমানিক বাজার মুল্য প্রায় ১শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। শহরের কেন্দ্রস্থল এলাকার ওই সম্পত্তি দখলের ঘটনায় সেখানে অবস্থিত একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারি,৭২ টি ছোট দোকানের মালিক কর্মচারি, একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং দু’টি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা হতবাক হয়ে পড়েছে। দখলকৃত এই ২৮ শতাংশ জায়গায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব রুপালী ব্যাংকের জোনাল অফিস, রাজনৈতিক দল জেএসডি, বগুড়া শহর যুবদলের অফিস, দৈনিক উত্তরবার্তার পরিত্যক্ত অফিস, সাপ্তাহিক নোতুন খবরের অফিস, বাটারফ্লাই এলজির ১টি শোরুম, মুন ফার্মেসি নামের একটি ওষুধের দোকান এবং প্রায় ৫০টি গার্মেন্টস আইটেম ও জুতা সেন্ডেলের দোকান রয়েছে। ২০০৩ সালে সড়ক সম্প্রসারনের আগে এই জায়গায় বগুড়া প্রেসক্লাব ও জেলা স্কাউটের কার্যালয় ছিল।
ওই সম্পত্তির ২৮ শতকের পুরোটাই ‘মারোয়াড়ী ধর্মশালা কমিটি’ তাদের সম্পত্তি বলে দাবী করে সম্পত্তি দখলে নিতে প্রথমেই তারা সেখানে অবস্থিত ক্ষুদ্র কাপড় ব্যাবসায়ী হকারদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। এ কারনে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী গ্রæপ দিয়ে তাদের হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখে। এরই এক পর্যায়ে গত ৮ অক্টোবর হঠাৎ বগুড়া প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘ধর্মশালা কমিটি ’। সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার প্রভাবশালী হিন্দু নেতাদের উপস্থিতিতে মারোয়াড়ী ধর্মশালা কমিটির সভাপতি কল্যান প্রসাদ পোদ্দার এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার আগরওয়ালা ঘোষনা দেন, জায়গাটির ওপর তারা একটি বহুতল বানিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মান করবেন। এজন্য তারা একটি ডেভলপার কোম্পানীর সাথে চুক্তিও করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, বানিজ্যিক ভবনের একটি অংশে ধর্মশালা ও রেস্টহাউসও থাকবে। তারা এও দাবী করেন, ১৯৮২ সালে তারা এই সম্পত্তিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার রায় পেয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনকারীরা মামলার রায়, জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র, ভুমি ও পৌরকর পরিশোধের কোন প্রমানাদির কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। নদী বাংলা কমপ্লেক্সে নামের ডেভলপমেন্ট কোম্পানীর কোন চুক্তিপত্রও তারা দেখাতে পারেননি। নদী বাংলা ডেভলপার কোম্পানীর কোন প্রতিনিধিও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলনা।
এদিকে ধর্মশালা কমিটির সংবাদ সম্মেলনের একদিন পর ওই সম্পত্তির ওপর অবস্থিত দোকানদারদের সংগঠন ব্যাবসায়ী হকার্স ইউনিয়ন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে মারোয়াড়ী ধর্মশালা কমিটির উপস্থাপিত বক্তব্য মিথ্যা ও ভুয়া বলে উল্লেখ করেন। তাদের বক্তব্যের সপক্ষে হাইকোর্ট ও জজকোর্টে চলমান একাধিক মামলার ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, ধর্মশালা কমিটির যদি কাগজপত্র থাকেই তাহলে তারা তা’ দেখাক, কোর্টের রায় নিয়ে এসে পুলিশ দিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করুক, তা’ না করে কেন তারা মনির নামের যুবলীগ সন্ত্রাসী ও তার ভাড়াটিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছে, মারপিট করছে ?
কিন্তু মারোয়াড়ী ধর্মশালা কমিটি ওই সম্পত্তি তাদের দখলে নিতে বৃহষ্পতিবার বগুড়ার কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে মাড়োয়াড়ী ধর্মশালা কমিটির পক্ষে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে হকার্স ইউনিয়নের সদস্য ও অন্যান্যদের ভুমিদস্যু, টাউট ইত্যাদী আখ্যায়িত করে বলা হয় ‘‘ওদের উচ্ছেদ করতে কোর্টের রায়, পুলিশ লাগবে কেন ?’’ বৃহষ্পতিবার ওই বিজ্ঞাপনটি ছিল কার্যত দখলেরই লিখিত ইঙ্গীত। রাতেই যথারীতি ধর্মশালার পক্ষ নিয়ে শাসকদলের ক্যাডাররা জায়গাটি ঘিরে নিল !
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, এই দখল প্রক্রিয়ার নেপথ্যে রয়েছে, একটি চিহ্নিত ভুমি গ্রাসী এনজিও। তাদের ফাইন্যান্সেই দখল ও ম্যানেজ প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পরে স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করবে ওই এনজিওর কন্সট্রাকশান ফার্ম।
শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ঘেরাও জায়গার মধ্যে অবস্থিত রুপালী ব্যাংকের জোনাল শাখার ডিজিএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিষয়টি বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কাছে জানিয়েছেন। এছাড়া ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছেও উপস্থাপন করেছে । এছাড়া জায়গাটি সরকারি বলেও তিনি দাবি করেছেন। বগুড়া জেলা প্রশাসক জায়গাটির প্রকৃত মালিকানা নির্ণয়ের জন্য এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বগুড়া সদর থানা থেকে মাত্র ৫০ থেকে ১শ’ গজ দূরত্বের মধ্যে মাঝরাতে বৈদ্যুতিক আলোর মধ্যে এতবড় দখল ও ঘেরাও ৫০টির অধিক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্ছেদ করে নতুন সাইনবোর্ড টাঙাতে দিল তা’ নিয়ে সর্বত্র বিরুপ আলোচনা হচ্ছে।
গতকাল রাতে বগুড়া সদরের এসি ল্যান্ড হাবিবুল হাসান রুমি ইনকিলাবকে জানান, বগুড়া শহরের সাতমাথায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুবলীগ ক্যাডারদের সহায়তায় মাড়োয়ারী ধর্মশালার নামে শতকোটি টাকা মূল্যের যে ২৮ শতক জায়গা দখল কাগজপত্র পর্যালোচনার পর অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাড়োয়ারী ধর্ম সভার নেতৃবৃন্দ তাদের দখলের স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেনি। ওই সম্পত্তি এখনও অর্পিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত। তাই শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দখল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রশাসন সকাল সাড়ে ১০টায় উচ্ছেদ করবে।

 



 

Show all comments
  • রাসেল ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৪৩ এএম says : 0
    প্রশাসন কী করে ?
    Total Reply(1) Reply
    • sumon ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:৪৭ এএম says : 4
      The days are coming to engaze with conflicting for grabing enemy property. These are Bangladeshi death zone.

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ