Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সমতা, প্রয়োজন কার্যকর রাজস্বনীতি

আইএমএফ’র প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সা¤প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মানুষের মধ্যে সমতা আসছে। ধনী এবং গরীব রাষ্ট্রগুলোর মানুষদের মধ্যে ফারাক ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এটি মূলত হয়েছে চীন এবং ভারতের মত রাষ্ট্রের অবাক করার মত উন্নতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে সমতা আসলেও উন্নত দেশগুলোর মধ্যকার মানুষদের মধ্যে এই অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলছে। যেহেতু বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে, নীতিনির্ধারকদের কাছে এখন এই বৈষম্য কমিয়ে আনার বহু উপায় খুঁজে পেয়েছে। বৈশ্বিক বৈষম্য কমাতে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে একটি রাজস্ব নীতি। এই রাজস্ব নীতি বিশ্বের একেক রাষ্ট্রের মধ্য বৈষম্য কমাতে সক্ষম হয়েছে।
এই নীতির দুটো পদ্ধতি রয়েছে যার মধ্যে ধনী এবং বিত্তশালীদের জন্যে প্রগতিশীল কর আরোপ এবং সেই রাজস্ব দিয়ে গরীব এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যে পর্যাপ্ত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা।
উন্নত দেশগুলোতে এই রাজস্ব নীতি ধনী এবং গরীবদের মধ্যকার পার্থক্য এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনে, যা এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। ধনীদের ওপর কঠোর কর আরোপ এবং এই করের টাকা দিয়ে গরীবদের জন্যে খরচ করলে বৈষম্য অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। শিক্ষা এবং চিকিৎসায় এই রাজস্ব খরচ করলে সমাজের সকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে সাহায্য করা সম্ভব, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে সুযোগ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে প্রগতিশীল করের মাত্রা কম হওয়ায় দেশগুলোর সব বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যে প্রয়োজনীয় রাজস্ব পায় না। প্রতিটি দেশ তাদের জনগণের জন্যে ট্র্যান্সফার পেমেন্ট সহ বিকল্প একটি কর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে করে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, এবং এতে ধনীদের কোন অসন্তুষ্টি না থাকে। সঠিক নীতি অবলম্বন করলে এই বৈষম্য একেবারেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) এর সাময়িকী ‘ফিসকাল মনিটর’ এ এই বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যে তিনটি কার্যকর পন্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হল সঠিক মাত্রার প্রগতিশীল কর, ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম, বা সার্বজনীন মৌলিক আয় এবং শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি।
প্রগতিশীল কর ১৯৮০ সালের শুরুর দিক থেকে ধিরে ধিরে কমতে থাকে। সে সময়ে গড় কর ৬৩ শতাংশ থেকে ২০১৫ সালে ৩৫ শতাংশ তে গিয়ে ঠেকেছে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে সমাজের বিত্তবান লোকদের কর মুক্তি পাওয়ার সুবিধা, যেখানে কিনা সাধারণ নাগরিকদের কর দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অতিরিক্ত কর আরোপ না করা হলে এই পদ্ধতিতে মূল্যবান রাজস্ব আয় করা সম্ভব, যা দিয়ে বৈষম্য কমিয়ে আনা যাবে।
বেশিরভাগ কোম্পানির মালিক এবং ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মীদেরকে অত্যন্ত কম মজুরী দিয়ে থাকেন। এতে করে তাদের লাভ আরও বেশি হয়, এবং তারা ক্রমেই আরও ধনী হয়, এবং কর্মীদের অবস্থার কোন উন্নতি ঘটে না। এটি একটি প্রচলিত সমস্যা এবং এর সমাধানের জন্যে প্রত্যেকটি দেশের সরকারকে সার্বজনীন মৌলিক আয় বা ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম নির্ধারণ করে দিতে হবে।
সার্বজনীন মৌলিক আয় হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত সর্বনিম্ন আয়। এটির ফলে ব্যবসায়ী এবং সকল কোম্পানির মালিকপক্ষ তাদের কর্মচারীদের কম বেতনে নিয়োগ করতে পারবেন না।
শিক্ষাই জাতির মেরুদÐ- এটি একটি সর্বজনীন সত্য কথা। শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে আরও বেশি খরচ করলে নাগরিকরা আরও উন্নত সেবা এবং শিক্ষা পাবে, যা দিয়ে তারা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবে। একটি দেশে তখনই উন্নয়ন সম্ভব যখন এই দেশটিতে সকল নাগরিক শিক্ষিত। শিক্ষার হার বাড়লেই দ্রæত উন্নয়ন সম্ভব। শুধু যে শিক্ষিত হলেই চলবে না- সর্বোচ্চ কর্মক্ষম হওয়ার জন্যে সুস্বাস্থ্যও দরকার। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি করলে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে, এবং এতে দেশটি উপকৃত হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ