পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : র্যাবের সাথে মাদক পাচারকারিদের বন্দুকযুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিদারুল আলম নামে একজন মারা গেছে। র্যাবের দাবি নিহত ব্যক্তি মাদক পাচারকারি দলের সদস্য। তারা মাইক্রোবাসে মাদকের চালান নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে বৃহস্পতিবার ভোরে ওই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ আর ক্রসফায়ারে চট্টগ্রামে একাধিক মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়। বাংলাদেশে ইয়াবার প্রবেশ পথ হিসাবে পরিচিত কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফেও বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়। এরপরও মাদকের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। সীমান্ত পথে প্রতিদিনই আসছে মাদকের চালান। ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিলসহ হরেক রকমের মাদক। মিয়ানমার থেকে আসছে নেশার রাজা ইয়াবা।
চলতি বছরে শুধু র্যাবের অভিযানেই ধরা পড়েছে ৬২ লাখ ৭২ হাজার ৩১৮ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। একই সময়ে ২১ হাজার ৬০০ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৪৩৮ বোতল বিদেশী মদ ও বিয়ার, ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩০ লিটার দেশীয় তৈরী মদ, ৬৫৫ কেজি ২৩০ গ্রাম গাঁজা, ৩০০ গ্রাম হেরোইন এবং ৪০০ গ্রাম আফিম উদ্ধার করে এই এলিট বাহিনী। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানেও ধরা পড়েছে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য।
সাঁড়াশি অভিযানেও ঠেকানো যাচ্ছে না মাদকের আগ্রাসন। মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতারা আড়ালে থেকে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রশাসন। মাদকবহনকারীকে পাকড়াও করা হলেও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। এ অবস্থায় মাদকের ভয়াল বিস্তারের দিশেহারা এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। যে পরিমাণ মাদকের চালান ধরা পড়ছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে অবাধে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদক। সাগর, সড়ক ও পাহাড়ি পথে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবার চালান। সীমান্ত হয়ে আসছে হরেক রকমের নেশার সামগ্রী। মাদক ব্যবসাকে ঘিরে পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠেছে অপরাধীদের সিন্ডিকেট। আধিপত্য বিস্তারের জেরে তারা সংর্ঘাত সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম নগরীতে ইয়াবার এখন হোম ডেলিভারী হচ্ছে।
মার্চে চট্টগ্রাম সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেন বাংলাদেশের অনুরোধে ভারত তাদের সীমান্তে গড়ে উঠা ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আর তাই এদেশে ফেনসিডিল আসা কমে গেছে। তবে বাস্তবতা হলে তার উল্টো। প্রতিদিনই ভারতে থেকে ফেনসিডিলের চালান আসছে। এসব চালানের কিছু কিছু র্যাব-পুলিশের হাতে ধরাও পড়ছে। আগে কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত পথে ফেনসিডিল আসতো। এখন যশোর-সাতক্ষিরা হয়ে আসা ফেনসিডিলের চালানও কার্ভাডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে চট্টগ্রাম আসছে। সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে যশোর কার্ভাডভ্যানে আসা কয়েকটি ফেসিডিলের চালান ধরাও পড়েছে।
গত আগস্টের শেষদিকে মিয়মানারে গণহত্যা শুরু করে সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তখন কিছু দিন ইয়াবা আসা কমে যায়। তবে এখন আগের মতো ইয়াবার চালান আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে এবং চট্টগ্রামে ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ছোটবড় অর্ধশতাধিক ইয়াবার কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবার পুরোটাই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এদেশে। সমুদ্রপথে সরাসরি ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন গোয়েন্দা নজরদারি ও নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে মাদকের চোরাচালান, চোরাকারবারী, চোরাচালানের রুট, মাদকস্পট, মাদকদ্রব্য মজুদকারী ওবাজারজাতকারীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে র্যাব। এরপরও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ‘ক্রেজি ড্রাগ’ নামে পরিচিত ভয়াল নেশা দ্রব্য ইয়াবার আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছে না। ইয়াবা রোধে র্যাব একাধিবার বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করে। অভিযানের মধ্যেই মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের রুট ও কৌশল পরিবর্তন করে পাচার অব্যাহত রাখে। গত ২৩ জুন গভীর সমুদ্রে ‘মায়ের দোয়া’ নামক একটি দ্রæত গতি সম্পন্ন ট্রলারে অভিযান চালিয়ে ১৫ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করে। উল্লেখ্য ট্রলারের গতি বাড়াতে সাধারণ ইঞ্জিনের পরিবর্তে তাতে হিনো বাসের শক্তিশালী ইঞ্জিন মডিফাই করে লাগানো ছিল।
আটক মাঝি-মাল্লা ও মাদক পাচাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব নিশ্চিত হয় আটক হওয়ার আগে ওই ট্রলার যোগে অন্তত ৫ বার মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবার চালান আনা হয়। এর মধ্যে তিনবারে ১০ লাখ করে ৩০ লাখ পিস ইয়াবার চালান নিয়ে আসে এবং বাকি দুবার প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ইয়াবা না নিয়ে ফেরত আসে। সর্বশেষে ৬ষ্ঠবার ১৫ লাখ পিস ইয়াবা পাচারকালে তারা ধরা পড়ে। তারও আগে মাছ ধরার ট্রলারে পাচারকালে নৌবাহিনী ১৪ লাখ পিস ইয়াবার একটি বিরাট চালান আটক করে। এখনও সাগর পথে মাছের ট্রলারে ইয়াবা পাচার অব্যাহ আছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই কেবল কিছু চালান আটক করা যাচ্ছে। বাকি চালান নিরাপদে চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দিয়ে মাদক পাচার করা হচ্ছে। ইয়াবাসহ প্রায়ই ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা।
সংশ্লিষ্টদের মতে মাদক ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার-মাস্তান ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িয়ে যাওয়ায় এদের নেটওয়ার্কও ভাঙ্গা যাচ্ছে না। পুলিশের হিসাবে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় মাসে গড়ে অন্তত এক হাজার জন মাদকসহ ধরা পড়ছে। এসব ঘটনায় গড়ে মামলা হচ্ছে ৭শ। তবে মাদক ব্যবসার মূলহোতারা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংসের পথে নতুন প্রজন্ম। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এর ফলে পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও নগর পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নগরীতে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ৫০ হাজারই কিশোর ও যুবক। আসক্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। পুলিশের হিসাবে অপরাধীদের ৭০শতাংশই মাদকাসক্ত। বিশেষ করে ছিনতাই, ঝাপটাবাজির সাথে জড়িতদের প্রায় সকলে মাদকাসক্ত।
মিয়ামার থেকে আসা ইয়াবার সাথে ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল। এখন গাঁজার বড় চালানও আসছে ভারত থেকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হয়ে আসা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হেরোইন, কোকেন, চরস, বিদেশী মদ, বিয়ার ফেনসিডিল, প্যাথেড্রিন, অ্যালকোহল, রিকোডেক্স, কডোকফ সিরাপ, ভায়াগ্রা-সানাগ্রা ট্যাবলেট, এডেগার সিরাপ। চট্টগ্রামে প্রায় সব ধরনের মাদক পাওয়া যাচ্ছে। তবে নেশার রাজ্যে এখন রাজা মিয়ানমারের ইয়াবা আর ভারতীয় ফেনসিডিল ও গাঁজা। এসব মাদক বিশেষ করে ইয়াবা চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে পুলিশের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভার প্রায় প্রতিটিতে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও মাদকের বিস্তার রোধে ব্যর্থতার কথা বলা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন শুধুমাত্র অভিযান চালিয়ে মাদকের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার সামাজিক প্রতিরোধ। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হলে নেশার এই নীলছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা যাবে না। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মাদক বিরোধী কর্মসূচি পালন করছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও ওয়ার্ডভিত্তিক মাদক বিরোধী কর্মসূচি পালন করছেন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে কর্পোরেশন এই খাতে ২ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।