Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুস্থতার জন্য পানি

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তৃষ্ণায় শান্তিলাভের জন্য তো বটেই, সার্বিক সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার জন্য পানির বিকল্প নেই। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে প্রত্যেককে। শিশু হোক কিংবা বৃদ্ধ- এর অন্যথা হওয়ার জো নেই। যদিও ঋতুভেদে পানির চাহিদা কম-বেশি হয়। গরমের সময় ঘাম বেশি হয় বলে যত পরিমাণে পানি পান করা দরকার, শীতে ততটা নয়।
আমাদের শুষ্ক আর্দ্র আবহাওয়ায় যেকোন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন আড়াই থেকে সাড়ে তিন লিটার আর শিশুদের এক থেকে দেড় লিটার পানি খেতেই হবে। শুধু সাধারণ পানি নয়, জুস, ডাবের পানি, শরবত বা অন্য যেকোনো পানীয় আকারে পানি পান করা যেতে পারে। শিশুরা অনেক সময় পানি পান করতে চায় না। পানি পানের জন্য প্রয়োজনে একে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।
পানি শরীরের যাবতীয় অঙ্গগুলো সচল রাখে, জীবন্ত রাখে। তাই ‘ফ্লো অফ ওয়াটার ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।’ অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয়। রক্ত পরিশোধিত হয়ে কিছু বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়, তেমনই পুষ্টি পৌঁছে যায় বিভিন্ন অঙ্গে। রক্ত তরল রাখার জন্য তাই পানি ছাড়া এক মুহুর্তও চলে না। আমরা যে খাবার খাই তাকে ভেঙে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটসহ যাবতীয় খাবারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বের করে পানি। হজমের ক্ষেত্রেও পানির অবদান অসামান্য। পানি স্টুল ফর্মেশনকে স্বাভাবিক রাখে। পানি কম পান করলে কনস্টিপেশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা ক্রনিক হয়ে গেলে লোকাল ইনফ্লামেশন হয়ে পাইলস, ফিসার, ফিসচুলা হতে পারে। খাদ্যনালির লোয়ার কর্ড বার্ন হয়ে দেখা দিতে পারে স্টমাক ইরিটেশনও। পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন ঠিকই, তবে যেকোনো জায়গার পানি পান করা চলবে না। বিশুদ্ধ পানিই পান করতে হবে। সম্ভব হলে মিনারেল ওয়াটার পান করা ভালো। না-হলে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। অনেকের ধারণা, পানি ফোটালে তার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সে সম্ভাবনা খুব কম। যাই হোক, পানি যেন পরিশুদ্ধ জীবাণুবিহীন হয়। কারণ বেশির ভাগ রোগই পানিবাহিত। প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে বলে যেকোন জায়গা থেকে পানি পান করা যাবে না।
প্রচন্ড তাপের জন্য ডিহাইড্রেশন খুব কমন সমস্যা। ঘামের সঙ্গে পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম বেরিয়ে যায় বলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। তাই পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ডিহাইড্রেশন রোধ করতে তাই মাঝেমধ্যে পান করতে হবে নুন-চিনির শরবত কিংবা ইলেকট্রল মেশানো পানি। বরফ বা ঠান্ডা পানি পান না-করাই ভালো। ত্বক সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য পানির বিকল্প নেই। গোসলের মাধ্যমে শরীরের জীবাণু বেরিয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, হঠাৎ করে রোদ থেকে ফিরেই গোসল করা ঠিক নয়। পানি ত্বককে আর্দ্র রাখে যেমন, তেমনই খুব বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়। সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা যেতেই পারে, ক্লোরিনেটেড পানিও ত্বকের জন্য ভালো। তবে সনলাইটে অ্যালার্জি থাকলে, সানবার্থ-এর সমস্যা থাকলে ইন্ডোর পুলে সাঁতার কাটা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমের সময় ঘামাচির থেকে রেহাই পেতে ঘাম শরীরে বসতে দেওয়া যাবে না। দিনে প্রয়োজনে ৪-৬ বার গোসল করতে হবে। মাথা ভেজানোর দরকার নেই সবসময়। মাঝে মধ্যে গা স্পঞ্জ করে নেওয়া যেতে পারে। সর্দি-কাশির ধাত থাকলে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করতে হবে। অনেকে গোসলের পানিতে বরফ দিয়ে ঠান্ডা করে নেন। এটা উচিত নয়। ঠান্ডা পানিতে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। ঘামাচির সমস্যা থাকলে পাউডার এক দম ব্যবহার করা উচিত। কেননা, তাতে ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন