Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস পিএসসি বলছে গুজব

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আওতায় গতকাল অনুষ্ঠিত নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলেও দায় নিচ্ছে না কেউই। পরীক্ষাথীদের মতে, সবার হাতে হাতে একাধিক সেট প্রশ্ন ছিলো। যদিও পিএসসি এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। পিএসসি’র মতে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনও কারনই নেই। অপরদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও গতকাল বলেছেন, প্রশ্নফাঁসের সুযোগই নেই। তিনি বলেছেন, যারা প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ায় তারা পরীক্ষার্থীদের শত্রæ। যদিও বিষয়টি ছিলো এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয় নিয়ে। এদিকে একই দিনে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা এবং নার্স নিয়োগের মত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষার দিন ধার্য্য করায় এ নিয়েও সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই-মাহবুব নার্স নিয়োগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, পিএসসি’র পরীক্ষার একটি প্রক্রিয়া আছে। একাধিক সেট থাকে। তবে ৪টি যদি ফাঁস হয়, আর তা গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার চিন্তা ঠিক না। তিনি বলেন, পিএসসি’র উচিত অবিলম্বে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িতদের খুঁেজ বের করে শাস্তির আওতায় আনা। একই সঙ্গে জনস্বার্থে নতুন পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেন তিনি। ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে তাদেরকে (পিএসসি) বিশ্বাস করাতে কি করতে হবে আমার জানা নেই। এছাড়া একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র যাতে ফাঁস না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে নার্স নিয়োগে গুরুত্ব না দেওয়ায় সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে অসাধু চক্র।
সূত্র মতে, পিএসসির মাধ্যমে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের অধীন ৪ হাজার ৬শ’ সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ দেয়া হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ১০টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় ১৬ হাজার ৯শ’ নার্স অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার আগের দিন বৃহষ্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে নার্স নিয়োগের এই পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায়। একটি অসাধু চক্র এই প্রশ্ন ফাঁস করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক একাধিক পরীক্ষার্থী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সামনে থেকে কাজ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন নেতা (কা, আ, সা,ফা, জা ও র আদ্যক্ষরের)। তারা বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত থেকেই এসব নেতারা বিভিন্ন নার্সিং হোস্টেলে গিয়ে ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায় এসব প্রশ্ন বিক্রি করেছেন। তারা আরও বলেন, গভীর রাতে অনেক নার্সকে ওই সব নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ট্রেকিং করলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথোপকথনের প্রমাণ পাবেন। আজ (শুক্রবার) মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা থাকায় নার্সদের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে কথাবার্তা কম হচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
ইনকিলাবের কাছে নার্স নিয়োগের পিএসসি’র অধেিন অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষার হাসনাহেনা, শিউলী, কামিনী, রজনীগন্ধা নামের চারসেট প্রশ্নপত্র আসে গতকাল শুক্রবার সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে। পরে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, এই চার সেটের মধ্যে কামিনী সেটটিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নার্সদের। যা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।
‘গতকাল (বৃহষ্পতিবার) রাত থেকেই শুনতে পাচ্ছিলাম- প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, আমাদের অনেকে প্রশ্ন পেয়েছেও। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘন্টা পর দেখলাম- অনেকেই পরীক্ষা শেষ করে বের হয়ে যাচ্ছে। তখন সন্দেহ হলো, বুঝলাম প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস হয়েছে। ফাঁস না হলে ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন মার্ক করে শেষ করা যায় না। কিন্তু তখনতো আর কিছুই করার নেই। তবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেয়া পরীক্ষারও প্রশ্নপত্র যদি ফাঁস হয় তাহলে কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশ্বাস রাখব। যাই হোক, বিষয়টা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ভাগ্যে যা থাকবে তাই হবে বলছিলেন- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরের অধীনে হওয়া পরীক্ষার একজন পরীক্ষার্থী।’
কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি গুজব, প্রশ্ন ফাঁসের প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, সব পরীক্ষার আগেই কিছু কালপ্রিট রয়েছে যারা এ ধরণের গুজব তৈরি করে এবং কিছু মানুষ রয়েছে এগুলো দিয়ে পয়সা বানায়। আমাদের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনও কারন নেই, কারন আমরা প্রশ্নপত্র এক সেট তৈরি করি না। একাধিক সেট করি এবং লটারি করে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দেওয়া হয় পরীক্ষা শুরু হবার আধাঘন্টা আগে।
গতকাল রাত থেকেই একটি চক্র প্রশ্ন বিক্রি করেছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এগুলো আমরা জানি না, আমাদের কাছে এ ধরণের কোনও ইনফরমেশন নেই। আমি নিজেও আজ সারাদিন অফিসে ছিলাম, এটাকে কেবলি গুজব বলে আমরা মনে করছি। ৩০ মিনিটের মধ্যে উত্তপত্র জমা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা এক ঘণ্টার। এর আগে উত্তরপত্র জমা নেয়ার কথা নয়, তবে যদি কেউ নিয়ে থাকেন তাহলে বিষয়টি দেখা হবে।’
তবে পিএসসি চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য জানালে একজন পরীক্ষার্থী বলেন, তার অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। কারন, পরীক্ষার চারটি সেট থাকলেও পরীক্ষা হয়েছে কামিনী সেটের, কিন্তু আমরাতো এই সেটসহ চারটি সেটই ফাঁস হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি (চেয়ারম্যান পিএসসি) কীভাবে এটা এড়িয়ে যেতে পারেন বলেন পরীক্ষার্থী।
এদিকে গতকাল সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের (২০১৭-১৮) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে এই পরীক্ষা শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১১টায়। খুব শিগগির এ পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মেডিকেল কলেজগুলোর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই দাবি করে তিনি বলেছেন, অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এবং ভবিষ্যতে ডাক্তার হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ