Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ পাট চাষিরা

একেক বাজারে একেক দাম

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা
পাট নিয়ে দারুণ মনোকষ্টে রয়েছেন চাষিরা। উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। এমনকি উৎপাদন খরচ উঠছে না। লোকসানও গুণতে হচ্ছে অনেক চাষির। পাটের বাজারে রয়েছে বিশৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। দাম একেক বাজারে একেক রকম। দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষক সংগ্রাম সমিতি পাটের মূল্য প্রতিমণ সর্বনি¤œ ৩হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে পাটের ফলনে প্রচন্ড খুশী হন চাষিরা। আবাদ ও উৎপাদনে কোন সমস্যা হয়নি। ছিল না পাট পচানোর ঝামেলা। বাজারে প্রচুর পাট উঠেছে। মাঠের হাসি ¤øান হয়ে যাচ্ছে বাজারে। যা খরচ হয়েছে তা উঠছে না। বরং অনেকক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে বহুদিন পর স্বর্ণযুগ ফেরানোর স্বপ্ন পুরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। একসময় পাটের বদলে কচু আবাদ করতেন চাষিরা। সরকারী উদ্যোগে কয়েকবছর হলো চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েন। কয়েকটি মৌসুম মোটামোটি ভালো হলেও গত মৌসুম থেকে আবার সেই আগের অবস্থা শুরু হয়েছে। চাষিরা মোটেও খুশী হতে পারছেন না। এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশী জমিতে উৎপাদন করেছেন চাষিরা। ফলন হয়েছে আশানুরূপ। শুধুমাত্র পাটের বাজার তদারকির অভাবে ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে গেছে।
পাটচাষি যশোরের শার্শা উপজেলার মোঃ আলম বললেন, একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত ১০ মণ। বর্তমান মূল্য প্রতিমণ ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ৪শ’ টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি গড়ে চাষিদের লোকসানই হচ্ছে। পাটচাষিদের কথা, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাট উৎপাদন করে যদি লাভ না পাই তবে সে আবাদ করবো কেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মারুফের বক্তব্য ফলন আশানুরুপ। মূল্যের বিষয়টি আমরা দেখি না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সারাদেশে ৭ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। উৎপাদন হচ্ছে মোট প্রায় ৮০ লাখ বেল। নতুন পাট বাজারে উঠার আগে বাজার দর ছিল প্রতিমণ ১হাজার ৪শ’টাকা থেকে ১হাজার ৬শ’ টাকা। সেটি হলেও চাষিরা সামান্য লাভের মুখ দেখতো। কিন্তু এখন লোকসান হচ্ছে। এতে মন ভেঙে যাচ্ছে পাটচাষিদের। পাট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বললেন, পাট উঠার সময় এভাবেই দাম পড়ে যায়। বাজারে মনিটরিং থাকলে অবশ্য এই রকম হতো না। আমরা ক্ষুদে ব্যবসায়ী বড় বড় পাইকার আড়তদাররা নতুন পাটের ক্ষেত্রে এটি করে থাকেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশিষ্টদের বক্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া হচ্ছে না। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিদের একরকম প্রতারণা করা হচ্ছে। একে বাজারে একেক দাম পাটের। দেশের বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ থেকে পুরাদমে নতুন পাট উঠছে বাজারে। জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চিত করা না গেলে সোনালী আঁশের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অন্ধকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ