Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার বিপক্ষে আ’লীগ-পক্ষে বিএনপি

ইসির সঙ্গে সংলাপে প্রস্তুত বড় দুই দল

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব
জাতীয় সংসদের আগামী একাদশ নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার বিপক্ষে বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগ। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্র্ভুক্ত করা যাবে না এমন দাবিও জানানো হবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার, মাঠপর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে সংলাপের প্রস্তাবনা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে এ সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসবে। আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তার নেতৃত্বে আরো বৈঠক হবে। এরপর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডেকে ইসির সঙ্গে সংলাপের কৌশল ও প্রতিনিধিদলের তালিকা ঠিক করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে থাকা এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা না দেয়া এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। ইসির সঙ্গে সংলাপ সামনে রেখে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা দুই দফা বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে ইসির সঙ্গে সংলাপে যেসব প্রস্তাব দেয়া হবে, সেগুলোর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে সীমানা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় পেয়েছে। তা ভেঙে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। এদিকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের লক্ষে স¤প্রতি নির্বাচন কমিশন একটি আইনের খসড়া করেছে। এতে জনসংখ্যা, ভোটারসংখ্যা ও মোট আয়তনের সমন্বয়ের মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের পরিকল্পনার কথা বলেছে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করার ফলে ১৩৩টি আসন ব্যাপক ভাঙাগড়ায় পড়ে যায়। ৯টি জেলার একটি করে আসন কমে যায়। এদিকে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের অন্য দলগুলো সীমানা পুনর্নির্ধারণের পক্ষে। বিএনপি মনে করে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে করা সীমানা পুনর্নির্ধারণের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পক্ষে। গত ১৮ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে দেখা করে ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি করে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য টুকটাক পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ২০০৮ সালের আগের অবস্থায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা আওয়ামী লীগ হতে দেবে না। আওয়ামী লীগের কৌশল তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইন অনুসারে আদমশুমারির এক বছরের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের নিয়ম। তা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচনের পরের বছর করতে হয়। এই বিবেচনায় আগামী নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ নেই। আর এখন সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে অনেক এলাকায় আসন এলোমেলো হয়ে যাবে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে সর্বশেষ বৈঠক হয়। এতে দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মসিউর রহমান, রাশিদুল আলমসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ক্ষমতাসীনদের জোট ১৪ দলের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ইসির সঙ্গে সংলাপে সব শরিকের অভিন্ন অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। সংলাপে প্রস্তাবের খসড়া তৈরি এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক নেতার সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিরোধিতা ছাড়াও আওয়ামী লীগ মোটা দাগে আরো কিছু বক্তব্য তুলে ধরবে। তার মধ্যে রয়েছেÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন সম্পন্ন করবে। ইসি চাইলে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে, তবে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া যাবে না। এমনকি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
এর বাইরে আরপিও, ইভিএম পদ্ধতি চালুসহ বেশ কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তার নেতৃত্বে আরো বৈঠক হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম ইনকিলাক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই হবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান এটা আওয়ামী লীগের মূল অবস্থান। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এসব বিষয়ে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের দলীয় প্রধান দেশে ফিরলে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। নির্বাচন কমিশনের আইন ও বিধিবিধানে কী আছে, কী করা দরকার, এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে এ সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে বিএনপিনির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাধীন ভ‚মিকায় দেখতে চায় বিএনপি। তাদের অভিমত, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন যদি কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি না করে পুরোপুরি সংবিধান ও আইনের অধীন থাকে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হলেও তারা এটি ইসির সামনে তুলে ধরবেন।
বিএনপির প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছেÑ নির্বাচনের সাত দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ভোটার অনুপাতে সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস, ইভিএম বাতিল করা, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ, কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে আসন্ন সংলাপে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশনকে নিজস্ব সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাহার এবং প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও তাদের মাঠপর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গণপ্রতনিধিত্ব আদেশ ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে এবং তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে অংশ নেবে বিএনপি। আসন পুনর্বিন্যাস, ইভিএম বাতিল, সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ২৪ আগস্ট থেকে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। এ পর্যন্ত ২৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। ১৯ অক্টোবর এই সংলাপ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তরে এর পরে নতুন করে সংলাপ হবে কি না তা নির্ভর করছে দুই দলের উপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ