Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরৎ যায় যায় দেশজুড়ে তাপদাহ অস্থির জনজীবন : স্বস্তির আভাস

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অস্বাভাবিক বৈরী আবহাওয়ার মতিগতি : টাঙ্গাইলে সর্বোচ্চ ৩৭.২ ঢাকায় ৩৬.৫ ডিগ্রি : তবে রাজধানীর বাস্তব তাপানুভূতি ৪৩ ডিগ্রিরও ঊর্ধ্বে!
শফিউল আলম : বছরের গোড়া থেকেই চলে আসা আবহাওয়ার চরম-ভাবাপন্ন আচরণ এবং অস্বাভাবিক বৈরী মতিগতি বজায় রয়েছে। আশ্বিন মাস অর্থাৎ ঋতুর হিসাবে শরৎকাল যায় যায় করছে। এখন কোমল শীতের পরশ ও হালকা কুয়াশাপাত হবেÑসেটাই হচ্ছে আবহমান বাংলাদেশের ‘স্বাভাবিক আবহাওয়া’। অথচ দেশজুড়ে তাপদহনে অস্থির হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জনজীবন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রায় সারাদেশ তেঁতে গিয়ে তাপমাত্রার পারদ আরও ঊর্ধ্বে উঠে যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের দাপট গ্রীস্মকালকেও হার মানিয়েছে। দিনমান কড়া সূর্যের দহনে দর দর ঘামঝরা গরমে ভারইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকেও রোগীর চাপ বেড়েছে। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিভ্রাটের কারণে জনদুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে বেড়ে হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৬.৫ ও সর্বনিম্ন ২৭.৩ ডিগ্রি সে.। তবে রাজধানী ঢাকার বাস্তব তাপানুভূতি ৪৩ ডিগ্রিরও ঊর্ধ্বে! গতকাল ঢাকা ছাড়াও দেশের অধিকাংশ স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৩৬ ডিগ্রি সে. ও এর ঊর্ধ্বে তাপমাত্রাকে তাপপ্রবাহ (হিট ওয়েভ) হিসেবে গণ্য করা হয়। গত কয়েক দিনের প্রচÐ তাপদাহকে বর্তমান সময়ে দেশে আবহাওয়া-জলবায়ুর ছক বা হিসাবের বাইরে অস্বাভাবিক ও বৈরী আচরণ বলে জানায় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো। তবে চলতি সেপ্টেম্বর (আশ্বিন-কার্তিক) মাসে দেশে তাপপ্রবাহের কোনরকম পূর্বাভাস ছিল না।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ সূত্র আজ (শুক্রবার) থেকে আবহাওয়ারাজ্যে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আসার এবং জনজীবনে স্বস্তির আভাস দিয়েছে। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় টেকনাফে ২৮, মংলায় ১৩, খেপুপাড়ায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ছাড়া দেশের তেমন কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু জায়গায় আকাশে মেঘের বিচরণ ও সাময়িক গুঁড়িবৃষ্টির ফলে গরমের দাপট কিছুটা কম ছিল। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার মৌসুমি বায়ুর ঘোর এখনও কাটেনি। মৌসুমি বায়ুর একটি বলয় বিরাজ করছে ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত। এর একটি বর্ধিতাংশ (ট্রাফ)উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বি¯ৃÍত। এই পশ্চিমা বর্ধিতাংশ গরমের দাপটকে করেছে দীর্ঘায়িত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এদিকে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ু এ মাসের প্রথমার্ধের মধ্যেই বিদায় নিতে পারে। চলতি মাসে ও আগামী নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্য থেকে এক বা দুটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান অস্বাভাবিক গরম ও বৈরী আবহাওয়াকে ঘূর্ণিঝড়ের আলামত হিসেবেও দেখা হচ্ছে। অবশ্য গতকাল পর্যন্ত সাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ তৈরি হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ