Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সক্রিয় পাচারকারী চক্র

রাজধানীতে শিশু পাচারকারী আটক

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : দেশে শিশু ও নারী পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতা ভিত্তিক একটি নারী পাচার চক্র বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করে দেয়া হচ্ছে শিশু ও নারীদের। র‌্যাব ও পুলিশের সক্রিয় অভিযানের কারনে মাঝে মধ্যে পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িতরা ধরা পড়লেও হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। গত বুধবার মধ্যরাতে গুলিস্তানের একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে সাহাবুদ্দিন সেলিম নামে এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১-এর কর্মকর্তারা। আটক সাহাবুদ্দিন সেলিমের বিরুদ্ধে বিদেশে শিশু পাচারসহ বিভিন্ন শিশুকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাদের দালালদের মাধ্যমে শিশু ও নারী সংগ্রহ করছে। প্রতি নারীর জন্য দেয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। পরে ওই নারীদের ভারতের মুম্বাই, হায়দারাবাদ ও কলকাতার বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লী এবং আবাসিক হোটেলে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে। আবার কোনো কোনো শিশু ও নারীকে বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করছে। তবে উঠতি বয়সী এবং সুন্দরী নারীদের মধ্যপ্রাচ্যেও পাচার করা হচ্ছে। র‌্যাব-১১ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাহাবুদ্দিন সেলিমকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এবার গুলিস্তানের ওই হোটেলে সেলিম রয়েছে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। সেলিম গত এক বছরে ৬বার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে গেছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জসিম বলেন, এ সময়ে তিনি পাঁচটি শিশুকে ওমানে পাচার করেছে বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা একটি চক্রের অন্যতম প্রধান তিনি। র‌্যাবের কাছে এই চক্রের শিকার ১৭টি শিশুর বিষয়ে তথ্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই চক্রটিই ৫টি শিশু ওমানে পাচার করা ছাড়াও এক বছরে ৯টি শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এছাড়া মুক্তিপণ না পাওয়ায় দুই শিশুকে কাঁচপুর ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছে। আর একটি শিশুর বিষয়ে কোনো হদিস নেই। ওমানে পাচার করার ক্ষেত্রে সেলিম নারীদের ব্যবহার করে থাকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান সিনিয়র এএসপি জসিম। সূত্র জানায়, পাচারকারী চক্রের নারী সদস্যরা শিশুদের নিজেদের সন্তান বানিয়ে তাদের ওমানে নিয়ে যায়। সেলিম পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে সেখানে অবস্থান করে নারীদের কাছ থেকে ওই শিশুদের গ্রহণ করে। পরে নির্ধারিত এজেন্টের কাছে মোটা অঙ্কের বিনিময় শিশুদের হস্তান্তর করে। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৪ হাজার ২শ ২২ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সাথে ২শ ৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে। পাচারকারীরা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে নারী ও শিশুদের পাচার করে। উত্তরের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে নারী ও শিশুদের পাচার করা হয়। ওই অঞ্চলের সীমান্ত এলাকার ১১টি রুট দিয়ে নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য যশোরের বেনাপোল সীমানা অত্যন্ত সহজ রুট। বেনাপোল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম বঙ্গের বনগাঁ শহর। প্রথমে পাচার করা নারী ও শিশুদের এ শহরে রাখা হয়। পরে পাচারকারীদের সুবিধা মতো তাদের অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারী পাচারকারীরা বেশ কয়েকটি অভিনব কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে প্রেমের ফাঁদ ফেলে নারী পাচারকারীরা টার্গেট করছে মফস্বল কলেজের ছাত্রীদের। সীমান্তবর্তী উপজেলার কলেজ ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে বেশি পাচার করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ