পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেবে নেতাকর্মীরা
তারেক সালমান : জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মোট ২১ দিনের এ সফর শেষে ফেরার দিন বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়ার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও জোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরা ও সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ তার দলীয় সাংগঠনিক শক্তি দেখাবে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে এই সংবর্ধনা সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকারি দলটি। এ লক্ষ্যে গত কয়েক দিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে পৃথক পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, দুই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন, ঢাকা মহানগরের অন্তর্ভুক্ত সকল সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলীয় সভানেত্রীর সংবর্ধনা উপলক্ষে বর্ধিত সভা করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, অঙ্গ সংগঠনগুলোও বর্ধিত সভা করে নিজেদের প্রস্তুতি সভা করেছে।
একই সঙ্গে কেন্দ্রের নির্দেশে গত কয়েক দিন যাবৎ সংবর্ধনা সফল করতে বিশেষ প্রস্তুতি সভা করেছে উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ৪৯টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক।
গতকাল আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান শেষে আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বরণ করতে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আহŸান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা ছাড়াও বেশ কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট ও বাংলাদেশের ওপর শরণার্থীদের চাপের বিষয়টি বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আকারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ অধিবেশন শেষে ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে ভার্জিনিয়া যান শেখ হাসিনা। সেখানে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫ সেপ্টেম্বর একটি হাসপাতালে তার পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সংবর্ধনার প্রস্তুতি বিষয়ে বলেন, আগামী শনিবার নেত্রীর (শেখ হাসিনার) সংবর্ধনায় আমরা দলীয় সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশ ঘটাব।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার দিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত পথে পথে লোক সমাবেশের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করতে চায় আওয়ামী লীগ। কার্যত প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে আগামী ৭ অক্টোবর দেশে ফেরার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ অক্টোবর লন্ডন হয়ে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ বিমানে ঢাকায় পৌঁছবেন।
কোনো ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে এই সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিকট প্রশংসা কুড়িয়েছে। সারা দুনিয়া, বিশ্ববাসী শেখ হাসিনার এই সাহসী সিদ্ধান্ত এবং মনের উদার চিত্ততার প্রশংসা করেছে। এটা বাঙালি জাতির গর্বের বিষয়। রোহিঙ্গাদের সাথে আজকে বাংলাদেশ যে আচরণ করেছে এটা গোটা বিশ্বে বিরল ঘটনা। তিনি বলেন, আর এ জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফেরার দিন সংবর্ধনা দেবো। সঙ্গে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও তাকে সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে যাবে। দেশের সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা গণভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাবে।
জানা গেছে, রাস্তার দুই ধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রঙিন ছবিসহ মহাজোট সরকারের সাফল্যগাথা শোভা পাবে শত শত বিলবোর্ডে। প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা উপলক্ষে গণসংবর্ধনা সফল করতে গত ৩ অক্টোবর যৌথ সভা করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও দলটির বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাড়াও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। গত বুধবার বিকালে ১৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে (২য় তলা) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো: শাহে আলম মুরাদের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনসহ অন্য নেতারা।
অপরদিকে বুধবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনা সফল করতে বিশেষ বর্ধিত সভা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। এছাড়াও সংবর্ধনার প্রস্তুতি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ দলের সকল সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন ইতোমধ্য বর্ধিত ও যৌথ সভা করেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ৭ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত একাধিক স্পটে লোক সমাগমের মাধ্যমে তাকে বরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আগমনের চিত্র তুলে ধরে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি সম্মানের সঙ্গে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এছাড়া, সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও নিজ দেশের সরকার দ্বারা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-শিশু-বৃদ্ধদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক উদ্যোগ ইউরোপসহ বিশ্বের সকল মানুষের কাছে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়। বিশ্ব দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যায়িত করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে যৌথ সভা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ৫ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে এ নির্যাতিত- নিপীড়িতরা সসম্মানে তাদের দেশে ফেরত যাবেন। রোহিঙ্গারা আমাদের সাময়িক অতিথি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে দেশ একটি ভয়াবহ সঙ্কট থেকে রক্ষা পেয়েছে। একটি মহল লাগামহীনভাবে উস্কানি দিয়ে সা¤প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। অনেক সময় তারা বল প্রয়োগের কথাও বলেছিল। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এ সমস্যা সমাধানের পথে আছি আমরা। এ কারণে আগামী শনিবার বাংলাদেশের কৃতজ্ঞ লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেবে, যাতে ১৪ দল অংশ নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।