পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম
মানবতার পাশে রাজনীতি- বৃহত্তর চট্টগ্রামের নেতারা এখন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে। তারা ব্যস্ত মানবিক কর্মসূচিতে। রাজনৈতিক কর্মসূচির বদলে নেতাদের অনেকে মানবিক কর্মসূচিতেই বেশি সময় দিচ্ছেন। সরকারী দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি মাঠের বিরোধী দল বিএনপির নেতারাও মানবিক সাহায্য নিয়ে ছুটছেন সীমান্ত উপজেলা উখিয়া টেকনাফ আর নাইক্ষ্যংছড়ির রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ইসলামী দলগুলো মিয়ানমারে গণহত্যার প্রতিবাদের পাশাপাশি নিরবেই তাদের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বসে নেই বামদলগুলোও, বাম নেতারাও রোহিঙ্গাদের পাশে রয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী এবং মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ছুটছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
ঈদের পর বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ানোর যে আলামত ছিল তা রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপা পড়ে গেছে। মানবিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত নেতাকর্মীরা, আর তাই চাটগাঁর রাজনীতির মাঠেও নেই উত্তাপ-উত্তেজনা। ঈদের কিছুদিন পর বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরির্দশের পর পাল্টে যায় এখানকার রাজনীতির চিত্র। শুরুতে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে রাজনৈতিক দল বিশেষত আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-দ্ব›দ্ব থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরের পর তা কেটে যায়। আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যাপক হারে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ান।
এখনাকার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে নেতাদের অনেকে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুরু থেকেই কক্সবাজারে থেকে ত্রাণ তৎপরতা তদারক করছেন। দিনের পর দিন সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। তার সাথে আছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের একটি টিম। কক্সবাজারের নেতাদের প্রায় সবাই মানবিক কর্মসূচিতে নেমে পড়েছেন। পাশের জেলা হিসাবে চট্টগ্রামের নেতারাও ত্রাণ তৎপরতায় শামিল হয়েছেন। দলীয় ব্যানারের পাশাপাশি এখানকার সরকারি দলের এমপি নেতাদের অনেকে নিজেদের উদ্যোগেও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে আসার পর ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পরিষদের ব্যানারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয় রান্না করা খাবারসহ ত্রাণসামগ্রী। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন কোরবানির ঈদের আগের দিন পা পিছলে পড়ে আহত হন। ওইদিন থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে না পারলেও ত্রাণ তৎপরতায় সামিল হয়েছেন। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের কমকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের সমান অর্থ রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো হয়েছে।
নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টানা দুইদিন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। মহানগরীর বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডের নেতারাও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিচ্ছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের কর্মীরাও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুটছেন। রাউজান থেকে নির্বাচিত এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সীতাকুÐ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমসহ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন এমপি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রাণ তৎপতায় শরিক হয়েছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মসূচির চেয়ে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর থেকে দক্ষিণ জেলার সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে নেতাকর্মীরা ত্রাণ তৎপরতায় সামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদের পর নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা ছিল। কিন্তু আমরা মানবিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারিনি। কক্সবাজারের পাশের জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সমন্বয় করে এ তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সার্বিক বিষয় তদারক করছেন। ত্রাণ তৎপরতা শেষে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করবেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি মানবিক কর্মসূচিতেও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত রয়েছেন। জেলার কয়েকজন এমপি ও নেতা কক্সবাজারে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে এ তৎপরতায় সামিল হচ্ছেন। আমরা দলের নেতাদের পাশাপাশি সমাজের নানা শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছি, তাতে অনেক সাড়া দিয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা ত্রাণ তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছেন। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিও অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, থানা পর্যায়ে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির নেতারাও শুরু থেকে ত্রাণ তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি টিম কক্সবাজার সফর করেন। তাদের ত্রাণসামগ্রীর একটি বহর আটকও করে পুলিশ। এরপরও ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে গেছেন সেখানে। নগর বিএনপির সভাপতির উদ্যোগে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, রোহিঙ্গাদের স্রোত শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার নেতারা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ তৎপরতায় সরকারি বাধা আসলেও নানা কৌশলে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, সরকারি দল যতটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে আমরা ঠিক ততটা নিরবেই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো বিপন্ন মানুষের কাছে সাহায্য পাঠানো। তাতে আমরা সফলও হচ্ছি। কক্সবাজার বিএনপি নেতাদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ তৎপরতা চলছে বলে জানান তিনি। এ মানবিক কর্মসূচির কারণে বিএনপির স্বাভাবিক সাংগঠনিক কর্মসূচি কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি। ইসলামী দলগুলো শুরু থেকেই তাদের সামর্থ অনুযায়ী নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের নেতারা কক্সবাজারে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিনের পর দিন ত্রাণ তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।