Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চরম সঙ্কটে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ

১৬ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম
গত বুধবার দুপুরের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগেই গতকাল সকাল ৪টার পরে পুনরায় গ্রীড বিপর্যয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে নুতন করে বিদ্যুৎ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ভোলার ২২৫মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটি গতকাল বিকেল পর্যন্ত পূর্ণ ক্ষমতায় চালু করা সম্ভব হয়নি গ্রীড বিপর্যয় সংক্রান্ত কারিগরি ত্রæটির কারণে। ফলে জাতীয় গ্রীড থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশের বেশী বিদ্যুৎ সরবারহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিদ্যুৎ নিয়ে চরম দুর্ভোগে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ। ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিংএর কবলে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা।
হাসপাতাল থেকে শুরুর করে পানি সরবারহ পর্যন্ত চরম বিপর্যয়ের কবলে শিল্প উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও সংকটাপন্ন্। অনলাইন ও কম্পিউটার বেজড বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকগণ চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। গত বুধবার দুপুরে বরিশালÑভেড়ামাড়া ১৩২কেভী ডবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনের মাদারীপুর অংশের ১নম্বর সার্কিটের ওপর গাছ পড়ায় ফ্রিকোয়েন্সী নেমে গিয়ে গ্রীড ট্রিপ করে।
সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট একযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘন্টাখানেকের চেষ্টায় বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু করা সম্ভব হলেও চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থাকায় রাতভরই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। এমনকি ঐ বিপর্যয়ের কারণে ভোলার ২২৫মেগাওয়াট ক¤বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটি বুধবার রাতে চালু করাই সম্ভব হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে গতকাল সকাল ৪টার পরে বরিশালÑভান্ডারিয়াÑবাগেরহাটÑখুলনাও বরিশালÑভেড়ামাড়া ট্রান্সমিশন লাইন দুটি পুনরায় একযোগে ট্রিপ করে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো উৎপাদন ইউনিট পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। ‘অপারেশন বøাক আউট’এর আওতায় প্রায় কুড়ি মিনিট পরে বরিশাল গ্রীড গ্রীড সাবÑস্টেশনসহ ৩৩কেভী সাব-স্টেশনগুলোতে স্টেশন লোড পূণর্বহাল করা সম্ভব হলেও গ্রাহক পর্যায়ে সিমিত আকারে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু হয় সকাল ৫টার পরে। কিন্তু গতকাল দিনভরই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল চাহিদার প্রায় ৩৫Ñ৪০শতাংশ। গতকাল সন্ধায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল ও ঝালকাঠীতে প্রায় ১শ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে মাত্র ৬৫মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছিল। পটুয়াখালী ও বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই প্রায় একই চিত্র। ফলে বুধবার দুপুরে গ্রীড ট্রিপ করার সময় যে বিদ্যুৎ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল, রাত পেরিয়ে গতকাল সন্ধায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
বুধবার দুপুরে গ্রীড বিপর্যয়ের পরে বরিশালে সামিট পাওয়ারের ১১০মেগাওয়াটের ইউনিটগুলো চালু করা সম্ভব হলেও ভোলার ২২৫মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশনটি গতকাল বিকেল পর্যন্ত পূর্নোদ্যমে চালু করা যায়নি। উৎপাদন কেন্দ্রটির ৭৫মেগাওয়াটের ২টি ইউনিটের ১টি চালু করা হলেও বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৪০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। ১নম্বর ইউনিটটি সচল করার চেষ্টা চলছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ১ ও ২নম্বর ইউনিটের ফায়ার বেজড তৃতীয় ইউনিটটি অতি সিমিতাকারে সন্ধা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। তবে আজ সকালের আগে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত গ্যাস ভিত্তিক এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি স্বাভাবিক উৎপাদনে আসার সম্ভবনা নেই বলে জানা গেছে।
অপরদিকে এ সঙ্কটকালীন এ সময়েও জাতীয় গ্রীড থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে না। অথচ বরিশালের সামিট পাওয়ারের ১১০মেগাওয়াট এবং ভোলার ২২৫মেগাওয়াটের ইউনিটগুলো পূর্ণ উৎপাদনে এলে এখানের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডের মাধ্যমে অন্যত্র সরবারহ করা হয়ে থাকে।
এসব বিষয়ে গতকাল পিজিসিবি’র বরিশাল অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো গ্রীড ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব-স্টেশনগুলো ৩০বছরেরও অধীক পুরনো। ফলে এসব লাইন সরঞ্জামাদীর কর্মক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। নতুন করে বেশ কিছু ট্রান্সমিশন লাইন নির্মানের কাজ শুরু হচ্ছে। এসব লাইনের নির্মান কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলে গ্রীড বিপর্য়য় জনিত আর কোন সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়ে ততদিন পর্যন্ত নির্বিঘেœ বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ