পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নদী রক্ষায় বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ও নীতিমালা না থাকায় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী হত্যা করছে। আবার সরকারের কাঠামোগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নদী রক্ষার উদ্যোগকে বাধা দিচ্ছে রাজনৈতিক কর্মীরা। যার মূলে রয়েছে ভোটের রাজনীতি। নদী রক্ষা করতে নদী নীতি তৈরি ও নদীতে অপরিকল্পিতভাবে সøুইস গেট এবং বাঁধ নির্মাণ না করার আহŸান জানিয়েছে নদী বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত নদীর অধিকার-নদীতে অধিকার বিষয়ক সংলাপে এমন মন্তব্য করেন নদী বিষয়ক নীতি-নির্ধারক, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা।
নদী বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় নদী রক্ষায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছে না বাংলাদেশ। যার খেসারত দিচ্ছে এ দেশের মানুষ। অনুষ্ঠানে পানি ও নদী অধিকার রক্ষায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। তার মধ্যে রয়েছেÑ নদীর জন্য আইন ও নীতিমালা তৈরি; নদীসহ সব জলাধার নির্মিত পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিকর সব সøুইসগেট, ড্যাম ও অন্যান্য কৃত্রিম স্থাপনা অপসারণ, পানি সংক্রান্ত যে কোনো দ্বিপাক্ষিক বা আঞ্চলিক আলোচনা বিষয়ে জনগণকে জানার সুযোগ দেয়া, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নদী ও পানির অধিকার রক্ষায় যে কাজ করছে তার অংশ হিসেবে এই সংলাপের আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শমসের আলী বলেন, মানুষের অমানবিক কাজে নদী মরে যাচ্ছে। ক্ষুণœ হচ্ছে পানি ও নদীর অধিকার। পানির সঙ্কটের ফলে নদীপাড়ের মানুষ তাদের জীবিকা হারাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের সরকারের নদী নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি নেই। নেই নদী রক্ষায় কোনো আইন। হাইকোর্টের রায় আছে নদীরক্ষার্থে। কিন্তু সরকার ও প্রভাবশালীরা সেটা মানছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা চাইছে না নদী রক্ষা করতে। সরকারের দুর্বলতার কারণে রাজনৈতিক কর্মীরা নদী রক্ষায় বাধা দিচ্ছে। নদী বিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ হাসনাত কাইয়ূম বলেন, বাংলাদেশে কয়েক শ’ নীতি আছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, বাংলাদেশে কোনো নদী নীতিমালা নেই। ফলে নদীকে যে যার মতো করে হত্যা করছে। নদীর এই পরিস্থিতি নিয়ে সংসদ সদস্য টিপু সুলতান বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে নদীর উপর অত্যাচার করি। যে নদী আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে, সেই নদীকে আমারা দখল করছি। মেরে ফেলছি। ভোটের রাজনীতির কারণে আমরা জনপ্রতিনিধিরা অনেক সময় নদী রক্ষায় প্রতিবাদ করতে পারি না।
নদী রক্ষায় সরাকারি কাঠামো নিয়ে কথা বলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশের নদী ও পানির অধিকার রক্ষায় নদী কমিশন করা হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, নদী কমিশন এখন একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান। গেল তিন মাস ধরে চেয়ারম্যান নেই। এটি একটি অসম্পূর্ণ কাঠামোর মধ্যে রয়েছে। গবেষণা ও কাজের জন্য নেই পর্যাপ্ত বাজেট। ফলে নদীর জন্য কাজ করতে পারছে না নদী কমিশন। তিনি বলেন, নদী বাঁচাতে গবেষণায় জোর দিতে হবে। বাড়াতে হবে আঞ্চঁলিক ও আন্তর্জাতিক ক‚টনৈতিক তৎপরতা। নদীর জন্য আমাদের ক‚টনৈতিক তৎপরতা অত্যন্ত দুর্বল। নিজেরা যখন নড়বড়ে কাজ করি, তখন আন্তর্জাতিকভাবে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। নদী বাঁচাতে তাই আন্তর্জাতিক শক্তিশালী ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, দুঃখের বিষয় হলোÑ নদী নিয়ে আমাদের যথাযথ পরিসংখ্যান নেই। বাঁধগুলো নদীর জন্য ক্যান্সারের মতো। বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বাঁচাতে নদী রক্ষা করতেই হবে। তাই শক্তিশালী করতে হবে নদী কমিশনকে। প্রয়োজন আলাদা মন্ত্রণালয়ের। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতসহ এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটা মনস্তাত্তি¡ক বৈরিতা রয়েছে। এসব আঞ্চলিক রাজনীতির কারণেও নদী নির্যাতিত হচ্ছে। আমি ব্যারাজের বিরুদ্ধে। ফারাক্কা ভেঙে দেয়ার পক্ষে। আমরা যদি নদীকে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করতে পারি, তাহলে সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান হবে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবরি বলেন, নদীর নিজস্ব একটা অধিকার আছে। সেটা রক্ষা করতেই হবে। তা না হলে আমাদের ইতিহাস, কৃষি, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আইন, কাঠামো ও ক‚টনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নদী রক্ষা করতেই হবে।
সংলাপে বক্তব্য রাখেন, সরকার দলীয় এমপি ছবি বিশ্বাস, বাপার সাধারণ সস্পাদক ড. আব্দুল লতিফ, বুয়েটের অধ্যাপক প্রফেসর রেজাউর রহমান, ইনিস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের চেয়ারম্যান ইনামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত করিম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।