পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা একমুখী হয়ে আটকে আছে। সড়ক-মহাসড়ক নির্ভর পণ্য পরিবহনে ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে অনেক বেশি। সড়ক-সমহাসড়কসমূহে নিত্যদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। শুধুই তাই নয়, যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের পেছনে মূলত দায়ী ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশিহারে ট্রাক কাভার্ড ভ্যান লরি-মুভারসহ সড়কপথে পণ্যবাহী ভারী যান চলাচল। রেলপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। বেড়ে গেছে ব্যয়ও। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীমাতৃক এই দেশের নৌপথ অবহেলিত ও অনেকাংশেই অব্যহৃত পড়ে আছে। অথচ নৌপথে পণ্যসামগ্রীর পরিবহন ব্যয় সড়ক ও রেলপথের তুলনায় কম। অনেক ক্ষেত্রে তা সহজও। প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রীর পরিবহনের পরিমাণ, চাপ বা চাহিদা প্রতিবছর শতকরা ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাপ গিয়ে পড়ছে প্রধানত সড়ক-মহাসড়কসমূহের উপর। অথচ অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি করার ব্যাপক সুযোগ রয়ে গেছে। এরফলে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকেন্দ্রিক সুষম পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। তাছাড়া নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের সহজ বাজারজাত হবে নিশ্চিত। কিন্তু বর্তমানে বন্দরের পণ্য পরিবহনে ভারসাম্যহীন অবস্থা বিরাজ করছে। বন্দরে পণ্যজট ও জাহাজজট এবং সড়ক-মহাসড়কে বেসামাল জটের এটি বড় কারণ।
এদিকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সুলভে পণ্য পরিবহনে দেশের নৌপথের উন্নয়ন ও সচল করার লক্ষ্যে সরকার ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। গত ১১ আগস্ট’১৫ইং জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এরফলে নৌপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সুষম যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রসারের সুযোগ তৈরি হয়। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অত্যন্ত সহজ ও সুলভে নৌপথে পণ্য পরিবহনসহ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনার আওতায় এ প্রকল্প গৃহীত হয়। দেশের বিশাল নৌপথ সচলে যে উদ্যোগটি নেয়া হয় এর মূল নীতিগত দিক হচ্ছে- প্রথমত. জনসংখ্যার তুলনায় সীমিত সড়ক ও রেলপথের ব্যয়বহুল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা কমানো। দ্বিতীয়ত. সাগর, নদ-নদীর মোহনা ও উপকূল ঘেরা এবং নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাজনক একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। যা অত্যন্ত সুলভ ও সহজ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় সর্বোত্তম বিকল্প। তৃতীয়ত. পরিবহনে জ্বালানি খরচ সাশ্রয়সহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় বিশ্বের সমুদ্র ও নৌ-বন্দর, নৌপথ-সমৃদ্ধ (স্থলবেষ্টিত বা ল্যান্ড লকড নয়) দেশসমূহ সা¤প্রতিককালে সুলভ পরিবহনে নৌ যোগাযোগের প্রতি ঝুঁকেছে। দীর্ঘকাল যাবৎ অবহেলিত নৌপথের রুটসমূহ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার ব্যাপকভিত্তিক ক্যাপিটাল ও মেনটেইনেন্স ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এরফলে নাব্যতা ফিরে পাবে দেশের ৫০টিরও বেশি নৌরুট এবং এর সংলগ্ন নৌ-বন্দরসমূহ। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সমন্বয়ের অভাবে এ প্রকল্প কতদূর সুফল বয়ে আনবে তা নিয়েও ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত এ প্রকল্পের আওতায় দেশের নৌপথে পরিবহন ব্যবস্থার আমূল উন্নয়নের টার্গেট রাখা হয়। সম্পূর্ণ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাবদ ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে সারাদেশে নৌপথের উন্নয়নে ২৩টি নদী খনন কার্যক্রমকে জোরদার করার কথা বলা হয়। ‘২০টি ড্রেজারসহ সহায়ক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ’ শীর্ষক উক্ত প্রকল্পের আওতাধীনে (কম্পোনেন্ট) নতুন সংগৃহীত ২০টি ড্রেজার দিয়ে প্রতিবছর ২৩২ লাখ ৫০ হাজার ঘন মিটার নদীপথ খননের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত আগামী ডিসেম্বর’১৫ইং থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ)। প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশি ও বিদেশি পরামর্শকদের যৌথ উদ্যোগে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে বাংলাদেশে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও টেকসই নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষাও পরিচালনা করা হয়।
সমীক্ষার সুপারিশে বলা হয়, অনুযায়ী নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখতে হলে দেশের ছোট- বড় মিলে ২৩টি নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ২১৬টি কাটার সাকশন ড্রেজার প্রয়োজন হবে। ২০১৪ সালে বিআইডবিøউটিএর অপর সমীক্ষার প্রক্ষেপণে বলা হয়, আগামীতে প্রতিবছর ৮৮২ লাখ ৫৩ হাজার ঘন মিটার নৌপথ ড্রেজিং করতে হবে।
বর্তমানে ২১টি ড্রেজার রয়েছে। সবমিলে মাত্র ১১০ লাখ ঘন মিটার নদীপথ খননের সক্ষমতা রয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি সম্মিলিত খনন সক্ষমতা রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ঘন মিটার। সেই হিসাবে বর্তমানে ৬৩২ লাখ ঘন মিটার নদীপথ খননের সক্ষমতার ক্ষেত্রে ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রকল্পের আওতায় ২৬ ইঞ্চির কাটার সাকশন ড্রেজার ৬টি, ২০ ইঞ্চির কাটার সাকশন ড্রেজার ৯টি, বাকী ৫টি ১৮ ইঞ্চির কাটার সাকশন ড্রেজার সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও ক্রেন বোট ২০টি, ৮টি টাগ বোট, ক্রো হাউজ বোট ২০টি, অফিসার্স বোট ৮টি, সার্ভে ওয়ার্ক বোট ১০টি এবং ১২টি পাইপ ক্যারিং বার্জসহ আরও অনেক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অগ্রাধিকার ও উপযোগিতা বিবেচনা করে নদ-নদীসহ নৌ-বন্দরসমূহের নাব্যতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে বিগত ২২ নভেম্বর’০৯ইং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ড্রেজিং, ড্রেজার সংগ্রহসহ বিভিন্ন উপায়ে নৌখাত সংস্কারের জন্য অর্থায়নের ব্যাপারে কুয়েত সরকারসহ বিভিন্ন দাতাদেশ, সংস্থা ইতোমধ্যে গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করে। নৌপথ সংস্কার ও সচল করে তোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেয়া নির্দেশনায় ছিল, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলব্যাপী মালামাল পরিবহনে নৌপথই হচ্ছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা সহজ ও সাশ্রয়ী। অর্থনৈতিক বিবেচনায় অত্যন্ত ব্যয় সাশ্রয়ী। ফলে সম্ভাবনাময় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে নৌপথ। নৌপথের অবিলম্বে ও সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার প্রয়োজন। নৌপথকে উপেক্ষা করলে দেশ ও জাতি আরও বঞ্চিত হতে থাকবে। নৌপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন খাতটি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠলে অতীতের মতো এই খাতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পথ উন্মোচিত হবে। ড্রেজিংসহ নদ-নদী সংরক্ষণ পরিকল্পনার আওতায় দেশে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকা অথচ লাভজনক নৌ-রুটগুলোকে পুনরায় সচল করা জরুরি।
নদীমাতৃক বিরল বৈশিষ্ট্য সত্তে¡ও দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী ভারতে উৎসমুখে বেপরোয়া ও যথেচ্ছ নিয়ন্ত্রণ, পলি-বালি ও জঞ্জাল দ্বারা ভরাট, ভূমিদস্যুদের হাতে বেপরোয়া দখল, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বহুবিধ কারণে স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। দেশের ২৫৫টি নদ-নদী, উপনদী, শাখা নদীর স্বাভাবিক স্রেতোবাহী নৌপথের দৈর্ঘ্য ১৮ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। অথচ এককালের প্রমত্তা বেশিরভাগ নদ-নদী ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে এমনকি এরমধ্যে অনেকগুলো মরা নদী ও শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। এ কারণে দেশের বিস্তীর্ণ নৌপথ আগের সেই কর্মচাঞ্চল্য ও জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান বজায় রাখতে পারছে না। সংস্কার ও ড্রেজিংয়ের অভাবে নাব্যতা হারিয়ে দেশের বেশকিছু বড় নদ-নদীতে লাইটারেজ কার্গোজাহাজ, কোস্টার, ট্যাংকার, বার্জ, নৌযান চলাচল কোথাও কোথাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বিশাল সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় পণ্যসামগ্রী পরিবহনে সময় এবং পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে নৌ-সেক্টরে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক, মাঝি-মাল্লা, কর্মচারী ও নৌযানের কারিগর। নৌপথ সচল হলে কর্মসংস্থানের পথও খুলে যাবে।
দেশের সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা সড়কপথ নির্ভর অর্থাৎ একমুখী অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলো সচল করা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতিসঞ্চার হবে। গ্রামের কৃষক উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য, কাঁচামাল আরো ভাল দামে বিক্রি করতে সক্ষম হবে। গতিশীল হবে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।