Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘ইসলামবার্গ’: যেখানে মুসলমানদের সঙ্গী ‘অপবাদ’ ও আতঙ্ক

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আশির দশকে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে টম্পকিন্স নামের এই ছোট্ট গ্রামটিতে গিয়েছিলেন তারা, শান্তির খোঁজে। আজ সেই গ্রামের মুসলিম বাসিন্দাদের আতঙ্কে দিন কাটছে।
টম্পকিন্স আসলে নিউ ইয়র্ক শহরের ১৯০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম। রাস্তায় ছেলেরা খেলছে, কোথাও বা মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ইসলামবার্গে স্বাগতম’। সন্ত্রাসের কোথাও কোনো চিহ্ন নেই, অথচ টম্পকিন্সের অধিবাসীদের সেই অপবাদই দেয়া হয়। বসতিটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পাকিস্তানের সুফি মওলানা শেখ মুবারিক গিলানি। আজ সেখানে প্রধানত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের আফ্রো-অ্যামেরিকানদের বাস৷ বাসিন্দারা গ্রামে থাকলেও কাজ করেন বাইরে। ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই পড়াশুনা করে; বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের পরিচয় শুধুমাত্র খেলাধুলার কল্যাণে।
ক্যাটসকিল পর্বতমালার গা ঘেঁষে এই গ্রাম। বহির্জগতের সঙ্গে একমাত্র সংযোগ একটি কাঁচা রাস্তা। একটি ছোট সুপারমার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়। আর আছে একটি মসজিদ। কিছুদিন আগেও এখানে সব বাড়ির দরজা খোলাই থাকতো।
কয়েক বছর হলো দক্ষিণপন্থীদের নজর পড়েছে ইসলামবার্গ, অর্থাৎ টম্পকিন্স গ্রামের উপর। ‘ফ্রিডম ডেইলি’ নামের একটি বøগে দাবি করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশমতো খানাতল্লাসি চালিয়ে ইসলামবার্গে ‘অ্যামেরিকার সবচেয়ে বিভীষণ দুঃস্বপ্ন’ দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আরো দাবি করা হয় যে, ইসলামবার্গে আছে একটি জিহাদি প্রশিক্ষণ শিবির। ‘স্নোপস’ নামের একটি ফ্যাক্ট-চেক ওয়েবসাইট অবশ্য তা ভুল প্রমাণিত করেছে।
ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর শেষ পর্যন্ত আর ভুয়া খবর থাকেনি। ‘অ্যামেরিকান বাইকার্স এগেন্স্ট জিহাদ’ নামধারী একটি মোটরবাইক গ্যাং ইসলামবার্গে এসে ভয় দেখিয়ে গেছে। ২০১৫ সালে টেনেসির এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যে ইসলামবার্গের মসজিদটি পুড়িয়ে দেবার ডাক দিয়েছিল। মেয়র রশিদ ক্লার্ক সে কাহিনী ভালোভাবেই জানেন।
স্থানীয় পুলিশও সে কথা জানে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এখানে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়। ‘এখানকার মানুষ সবাই মার্কিন নাগরিক। এরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে রয়েছেন, বসতিটি গড়ে তুলেছেন। বাইরের সঙ্গেও এদের যোগাযোগ আছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই,’ এপি সংবাদ সংস্থাকে এমনটিই বলেছেন পুলিশ প্রধান জেমস বার্নস।
‘মুসলিমস অফ অ্যামেরিকা’ সংগঠনটির মুখ্য কার্যালয় ইসলামবার্গে। মার্কিন সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, সংগঠনটি হলো আশির দশকের ‘জামায়াত আল-ফকরা’ অপরাধী সংগঠনের উত্তরাধিকারী। ‘মুসলিমস অফ অ্যামেরিকা’-র সভাপতি হুসেইন অ্যাডামস অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘ত্রিশের দশক থেকে যদি এখানে জিহাদের প্রস্তুতি চলে থাকে, তবে তা আজও ঘটল না কেন?’
‘ইসলামাবার্গ সন্ত্রাসীদের স্বর্গ’ -এ অভিযোগ এখানকার বাসিন্দাদের কাছে নতুন নয়। তবে স্থানীয় ‘হ্যানকক হেরাল্ড’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক স্যালি সেগার্স সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেছেন, ‘ওরা (মুসলমান) কোনো গোলমাল করে না, যা কিনা মফস্বলে বাস করার প্রথম শর্ত’।
কিন্তু সন্দেহ ও অভিযোগ এত সহজে দূর করা সম্ভব নয়। ইসলামবার্গের মসজিদে গিয়ে দোয়া করেন স্থানীয় মুসলিমরা। তাদের সেই দোয়া কবুল হওয়া পর্যন্ত হয়ত ইসলামবার্গের বাসিন্দারা বাড়ির কপাট বন্ধই রাখবেন। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ