Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেস্ট বিফোর লিখছে না কেউই

৫ মাস আগে বাধ্যতামূলক করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিধিমালা জারি

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিধিমালা হওয়ার পর প্রজ্ঞাপণ জারি হয়েছে প্রায় ৫ মাস। তারপরেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়ক বিধিমালা মানছে না কেউ। বিধিমালা অনুযায়ী মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের লেবেলে পণ্যের উৎপাদন, প্যাকেটজাতকরণ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখসহ অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি ব্যবাহর বা উত্তম ভোগের সর্বোচ্চ তারিখ (বেস্ট বিফোর) উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ মে একটি প্রবিধানমালা জারি করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাসে এখনও কোনো উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম মানা শুরু করেনি। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক মোখলেছুর রহমান গতকাল এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, মোড়কজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে এই বিধিমালা মান্য করে প্যাকেটের গায়ে ভোগের উত্তম সর্বোচ্চ তারিখ উল্লেখ করে সেজন্য আমরা কাজ করছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে এক মাসের সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের একার পক্ষে এ কাজ করা কঠিন। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর হতে হবে।
রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে একটাও প্যাকেটজাত পণ্য পাওয়া যায়নি যেটার লেবেলে উত্তম ভোগের তারিখ লেখা আছে। বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, জুস, দুধ, শিশুখাদ্যসহ মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের লেবেলে আগের মতোই উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লিখে বাজারজাত করা হয়েছে। এতে খাদ্যপণ্যের সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ আহরণের বিষয়ে ভোক্তাদের যেমন অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে, তেমনি এর মাধ্যমে অমান্য করা হচ্ছে সরকারের জারি করা প্রবিধানও। আরামবাগ এলাকার এক সুপারশপের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম জানান, সরকার এ ধরণের একটা বিধিমালা জারি করবে বা করছে বলে তিনি শুনেছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো প্যাকেটজাত খাদ্যেপণ্যের প্যাকেটের গায়ে উত্তম ভোগের তারিখ বা বেস্ট বিফোর লেখা তিনি পাননি। তিনি বলেন, বেস্ট বিফোর লেখা থাকে বিদেশি প্যাকেটের গায়ে। সে ক্ষেত্রে একজন ভোক্তা বা ব্যবহারকারী ওই তারিখের আগে নিশ্চিন্তে পণ্যটি ব্যবহার বা ভোগ করতে পারে। এটা হলে খুবই ভালো হবে বলে জানান তিনি।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের যেসব বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলোই বিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা নিজ উদ্যোগে সেটি প্রতিপালন করবেন। এই বিধিমালা অমান্য করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইন অনুযায়ী, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ‘মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করে। চলতি বছরের ৯ মে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপণও জারি করা হয়। এ প্রবিধানমালার ধারা ৪-এর ২ উপবিধিতে পণ্যের লেবেলে যেসব তথ্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- উৎপাদক, মোড়কজাতকারী, সরবরাহকারী বা বাজারজাতকারীর নাম ও ঠিকানা, খাদ্য উপাদান বা উপকরণের ধরণ ও নাম (প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম), ব্যাচ, কোড ও লট নম্বর, নিট ওজন বা আয়তন বা সংখ্যা ও মোট ওজন, উৎপাদনের তারিখ, মোড়কজাতের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, উত্তম ভোগের সর্বোচ্চ তারিখ, পুষ্টিগত তথ্যাবলি, খাদ্য-সংযোজন দ্রব্য এবং নির্দেশনা ব্যতীত খাদ্য বা খাদ্যপণ্যের সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে ব্যবহার নির্দেশনা।
প্রবিধানমালার ধারা ২(খ) তে উত্তম ভোগের সর্বোচ্চ তারিখের সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘খাদ্য বা খাদ্যপণ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপদতার সর্বোচ্চ মেয়াদ, যে সময়ে নির্ধারিত সংরক্ষণ পদ্ধতিতে পণ্যটি উহার নির্দিষ্ট প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গুণাবলী ধারণ করবে মর্মে নির্দেশ করে। তবে উক্ত সময়ের পর খাদ্য বা খাদ্যপণ্যটির মান সন্তোষজনক থাকতে পারে, কিন্তু তা বিক্রিযোগ্য থাকবে না।’
এ প্রবিধানমালায় মোড়কজাত শিশুখাদ্যের বিষয়ে বলা আছে, ‘কোনো খাদ্য বা খাদ্যপণ্য শিশুখাদ্য বা শিশুখাদ্যের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য বলে ঘোষিত হলে লেবেলে ‘উত্তম ভোগের সর্বোচ্চ তারিখ’ উল্লেখসহ মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও এর ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এর বিধান বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহান বলেন, পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ না দেখে সেখানে যদি ‘উত্তম ভোগের তারিখ’ লেখা থাকে, সেটাই বেছে নেবেন ভোক্তারা। এতে পণ্যের পুষ্টিগত মান ভালো থাকবে।
বিএসটিআই-এর সহকারী পরিচালক সাঈদ আহমেদ বলেন, স্টান্ডার্ড লেবেলিং মার্কিং এর জন্য বিএসটিআই-এর পৃথক শাখা আছে। তারাই এটার দেখভাল করবে। যেহেতু প্যাকেটজাত পণ্যে উত্তম ভোগের তারিখ লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেহেতু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নিয়ম মানতেই হবে। না মানলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হবে। সহকারী পরিচালক বলেন, ৫ মাস হলেও মোড়ক মানা হচ্ছে না-এটা খুবই দুঃখজনক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৩ নভেম্বর, ২০২২
২২ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ