Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবাদের আওতায় আনার কোন পরিকল্পনা নেই কৃষি বিভাগের

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমি দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদী

| প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মিজানুর রহমান তোতা : ব্যক্তিমালিকানার একখন্ড জমি কেউ ফেলে রাখে না। শুধু তাই নয়, একখন্ড জমির জন্য অনেক মানুষ দীর্ঘ সাধনা করেও পাচ্ছে না। অথচ হাজার হাজার বিঘা সরকারি জমি পড়ে আছে। কোথাও খাস জঙ্গলে ভরা। কোথাও বা রয়েছে বেদখলে। স্থায়ী পতিত হিসেবে পড়ে আছে। ওইসব জমি যদি আবাদের আওতায় আনা যায় তবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হতে পারতেন। সরকারী অনেক সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া রয়েছে বিত্তশালীদের। ভ‚মিহীনদের মাঝে তা বিতরণ করা হলে কৃষির উন্নয়ন ঘটতো, ভ‚মিহীনরা লাভবান হতে পারতেন। জমিজমার ব্যাপারে নিয়মনীতি আছে। যা কার্যত অকার্যকর। শুধু পতিত জমি নয়, রেলওয়ে, জেলা পরিষদ, সড়কসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বহু জমি একেবারেই নামকাওয়াস্তে মুখচেনা প্রভাবশালীদের নামে দীর্ঘমেয়াদী লীজ দেওয়া রয়েছে। কখনো কেউ খোঁজও রাখে না বলে বিস্তর অভিযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী জাতীয় অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির যথেষ্ট সহায়ক অঞ্চলটির ১০ জেলায় বর্তমানে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১২ লাখ ২৩ হাজার ৬৮৯ হেক্টর। তার মধ্যে সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিতসহ অনাবাদী জমি রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭২১ হেক্টর জমি। যা আবাদের আওতায় আনা যায়নি। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পানিবদ্ধতা ও লবণাক্ততায় যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের আবাদী জমির অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে প্রায় প্রতিবছর। সবমিলিয়ে কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে না। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রতিটি গ্রামেই গড়ে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাদের স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক উন্নয়ন কঠিন ব্যাপার। এই অভিমত একজন কৃষি বিশেষজ্ঞের।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইন্টটিটিউট ও বিএডিসি সুত্র জানায়, কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত অঞ্চলটি ধান, সবজি, রজনীগন্ধা, গম, ভুট্রা, কলা, পাট, নারিকেল, তামাক, কুল ও পান-সুপারীসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কৃষি ইন্সটিটিউটের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মাঠপর্যায়ে। যার জন্য ওইসব কৃষিপণ্য আঞ্চলিক চাহিদা মিটানোর পর রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে। কম জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করে খাদ্য চাহিদা মিটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। যদি বিশাল অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনা যায় তবে গোটা অঞ্চলট কৃষিতে এগিয়ে যেত।
কৃষি স¤প্রসারণ সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন। গড় হিসাবে ধান ও গমসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৪১ লাখ ৮ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন। খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। কোনক্রমেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি স্পর্শ করে না। অঞ্চলটির সিংহভাগ ভূমি উচু ও বন্যামুক্ত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি সমৃদ্ধ। অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় তো আনা হচ্ছে না উপরন্তু নানা কারণে আবাদী জমি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও স্থায়ী পানিবদ্ধতায় ফসলাদি নষ্ট হচ্ছে কিংবা আবাদ করা যাচ্ছে না। খুলনার কয়রা, দাকোপ ও শ্যামনগরসহ উপক‚লীয় এলাকার অনেকস্থানে এবং ভবদহের পানিবদ্ধতায় বছরের পর বছর ধানসহ ফসলাদি প্রায়ই নষ্ট হয়। সুত্র আরো জানায়, এ অঞ্চলের সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিত জমির পুরোটাই আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে কৃষি উৎপাদন আরো বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ