বিশেষ সংবাদদাতা : অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে তাঁদের দীর্ঘদিনের সঞ্চয় হাতিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, টাকা এবং একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শনিবার আগারগাঁওয়ে পিবিআইর ঢাকা মেট্রোর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, গ্রেফতারকৃত ৫জন হলো-মো. হারুন অর রশিদ, সনজ সাহা, শামছুল আলম মজুমদার, আমিনুল ইসলাম ও মো. মোকসেদুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাইনুল হাসান (পূর্ব) বলেন, আটককৃত আসামিরা প্রথমে জাতীয় দৈনিকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে চাকরির বিজ্ঞাপন দিত। ওই বিজ্ঞাপনে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, আর্মি ও সিভিল অফিসারদের প্রাধান্য দেয়ার কথা আলাদা করে উল্লেখ থাকত। বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহীরা যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তাঁরা টার্গেট নির্ধারণ করতেন। এরপর সহযোগীদের মাধ্যমে তাঁদের নিজেদের সাজানো অফিসে নিয়ে যাওয়া হতো। অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাইনুল হাসান আরো বলেন, চক্রটি অফিসে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁদেরই আরেক সহযোগীকে স্যুট, টাই ও মাথায় হ্যাট পরিয়ে নিয়ে আসতেন। অনর্গল হিন্দিতে কথা বলে নিজেকে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিতেন। একপর্যায়ে তাঁরা ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়েই তাস খেলা শুরু করতেন। খেলায় ভারতীয় ব্যবসায়ীকে হারিয়ে লাখ লাখ টাকা জিতেছে বলে দেখানো হতো। এভাবে টার্গেটে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের কৌশলে আস্থায় নিয়ে এসে ব্যবসার অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হতো। কথামতো ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে গেলে চক্রের সদস্যরা টাকা রেখে তাঁকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলে বিদায় করে দিতেন। এরপর চক্রটি অফিসের জিনিসপত্র গুটিয়ে অন্যত্র চলে যেতো। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন পযন্ত ১২ জন ব্যক্তি এই চক্রের হাতে প্রতারিত হয়েছেন বলে পিবিআইকে জানিয়েছেন। এঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উচ্চ পদস্থ আরও কর্মকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র এক যুগ্ম সচিবের কাছ থেকেই এই চক্রটি এক কোটি ৪৮ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে পিআইবি সূত্রে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ খান সাড়ে ৭ লাখ টাকা, হাবিব ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার ৩৫ লাখ টাকা, খিলগাঁও এলাকায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ২৫ লাখ টাকা, একজন সাব-রেজিস্ট্রার ২৮ লাখ টাকাসহ ১২ জন প্রায় ৬ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারিত ব্যক্তিদের সকলেই চাকরি থেকে অবসর জীবন কাটা”িছলেন। অবসর জীবনে চাকরি করে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছায় এসব ব্যক্তিরা প্রতারক গ্রæপের হাতে তাদের পেনশনের সমুদয় টাকা তুলে দিয়েছেন।