পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনারা
সাখাওয়াত হোসেন : দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি এসব চালানের সাথে যাদের গ্রেফতার করছে তারা বহনকারী। কিন্তু নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত গডফাদার। অন্যদিকে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩৩টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে। যেগুলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সার্বিক সহায়তায় পরিচালিত হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। আর এই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনারা। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি সে দেশ থেকে আসছে ইয়াবাও। রোহিঙ্গাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। স্বরণার্থী ছদ্মবেশে ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই ইয়াবা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশকিছু চালান উদ্ধার করছে। গত ছয় দিনেই উদ্ধার হয়েছে ১৬ লাখ পিস ইয়াবা। সেই সাথে আটক হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। যাদের অধিকাংশই মিয়ানমারের নাগরিক। তবে তারা স্বরনার্থী নয়। এই সুযোগে কিছু মিডিয়া ও কতিপয় সাংবাদিক প্রকৃত তথ্য না জেনেই মিয়ানমার থেকে আগত নির্যাতিত রোহিঙ্গদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা উল্লেক করেন আকাল বাতাস ভারি করে তুলছেন। যার কোন সত্যতা খুজে পাননি তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টরা। আইন-শৃংখলা রক্ষাক্রাী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই গডফাদাররা রক্ষা পাওয়ায় দেশে ইয়াবা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। শহর কিংবা গ্রাম দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইয়াবা পাওয়া যায় না। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদারা ধরা না পড়ায় এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে একাধিকবার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদাররে নতুন নতুন তালিকা তৈরি করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় অপারেশন কার্যক্রম নেই। এরই মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ১২ শতাধিক মূল ব্যবসায়ীর নতুন তালিকা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গডফাদাররা গ্রেফতার না হওয়ায় তালিকা এখন অনেকটাই ফাইল বন্দী হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফর, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে ইয়াবা গডফাদারের তালিকা তৈরি করা হয়।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা ক্রমে সহিংস হয়ে উঠছে ইয়াবার প্রভাবেই। এ বিষয়ে এখনই জোড় পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে ভবিষ্যতে জাতি মেধাশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ডের পাশাপাশি নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাজকে আরও বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই অরক্ষিত। বিজিবির নজরদারির কারনে মাঝে মধ্যে ইয়াবার চালান ধরা পড়লেও গডফাদাররা কখনো ধরা পড়ে না। সূত্র জানায়, স¤প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা ও মংডু শহরের এসব কারখানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়াবার এসব কারখানায় পাঁচ প্রকার ইয়াবা বর্তমানে তৈরি হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে— এস ওয়াই, জিপি, এন ওয়াই, ডব্লিউ ওয়াই ও গোল্ডেন। প্রতিদিন ১কোটিরও বেশি ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৬০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখন ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার পেছনে সেবনকারীরা দিনে খরচ করছেন প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। বছরে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর ইয়াবার আগুনে ধোঁয়া হচ্ছে এ বিপুল অঙ্কের টাকা। আর এ টাকা জোগাড় করতে ইয়াবা সেবনকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। খুন-খারাবি থেকে শুরু করে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী আর তরুণ-তরুণী শুধু নয়; ছোট-বড় ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর একটি অংশ এখন ইয়াবায় আসক্ত। ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী-পরুষ এখন এ মাদক সেবন করছে। তবে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যাই বেশি। ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার থাবায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে বহু পরিবারের সন্তানের জীবন। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মায়ের কান্নাও থামছে না। অসহায় এ মায়েদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। জানা গেছে, গত ২৫ আগস্টের পর প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশ তাদেরকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে দুই দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদক ব্যবসায়ীদেরকে ভালোই রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তাদের গায়ে সেনাবাহিনী আঁচড়ও লাগাচ্ছে না। বরং বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারে তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করছে। রাখাইন প্রদেশে একের পর এক রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও বসতভিটা পুড়িয়ে ফেললেও ইয়াবা কারখানাগুলো পুরোদমে সচল রেখেছে মিয়ানমার। সেনাসদস্যরা পালা করে ইয়াবা কারখানা পাহারা দিচ্ছে। ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা ধরা পড়ার ঘটনা শুধু টেকনাফ বা উখিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তাদেরকে চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থান থেকেও ধরা হচ্ছে।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ সাংবাদিকদের জানান, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার কোনো যোগসূত্র নেই। ইয়াবা পাচার আগেও ছিল এখনো চলছে। তবে বাংলাদেশের উদারতায় পোয়াবারো মাদক ব্যবসায়ীদের। তারা আগের চেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা ঢুকছে। তাদের সকলকে আলাদাভাবে তল্লাশি করাও প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।