Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্বল হচ্ছে কৃষি অর্থনীতি

দক্ষিণ-পশ্চিমে ফসল উৎপাদনে রেকর্ড কিন্তু কৃষক পাচ্ছেন না উপযুক্ত মূল্য

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা
কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়া, বাজার বিশৃঙ্খলা, মুনাফালোভীদের অপ্রতিরোধ্য দাপট, লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারি হওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে রেকর্ড গড়েও কৃষক পরিবারে হাসি নেই। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। কৃষি বিশারদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষির গুনগত পরিবর্তন, আধুনিকায়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার বিষয়টি বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে গোটা অঞ্চলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভিত ক্রমাগত দুর্বল থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থ সংরক্ষণ ও কৃষকদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও বাজার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অমনোযোগিতা কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। পাট ও সবজিসহ চলতি মৌসুমের বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাননি কৃষকরা। অনেকক্ষেত্রে কষ্টার্জিত ফসল বিক্রি করে কৃষকদের উৎপাদন খরচ ঘরে উঠছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হলে কৃষি এগিয়ে যেত। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিও পৌছাতো ঈর্শনীয়পর্যায়ে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে না। কর্মবীর কৃষকরা রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না। তারা চান চাষাবাদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা ও উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য। যা বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে। শুধুমাত্র কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় কৃষকদের হতাশা বাসা বাঁধছে। প্রতিটি আবাদ মৌসুমে উৎপাদক চাষী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, মুনাফালোভী ও আড়তদারদের হাতে জিম্মি থাকেন। ফসলের বাম্পার ফলনের সুবিধা চাষী ও ভোক্তাদের চেয়ে তুলনামুলকভাবে বেশী পাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। সুত্রমতে, এতে কৃষি বিপ্লব মাঠে মারা যাবার আশংকা ঘণীভুত হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে ফসলাদি উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ছে। অথচ সেই তুলনায় কৃষিপণ্যের মূল্য পাচ্ছেন না উৎপাদক চাষী। পাটের মূল্য নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে সীমান্তবর্তী যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের মোঃ আলমসহ কয়েকজন কৃষক জানালেন, পাটে এবার ধরা খেয়েছি। লাভ তো দূরের কথা লোকসানের পর লোকসান গুণতে হচ্ছে। সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসিসহ সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অনাবাদী জমি উদ্ধারের কাজ হয়েছে নামকাওয়াস্তে। খাল খনন, পানিবদ্ধতার নিরসন, ক্ষুদ্র সেচ স¤প্রসারণ, ভূপৃষ্টের পানি রিজার্ভার গড়ে তোলাসহ কৃষি উন্নয়নে বিএডিসি বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। পাটের মূল্য না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে চাষিরা হতাশ। এই অঞ্চলে শাক-সবজির মূল্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক অব্যবস্থা রয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরার দাবীটি পুরণ করার ন্যুনতম উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কৃষিপণ্যে উৎপাদন খরচ কত আর বাজার দর কত তা তদন্ত করে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বিএডিসি সুত্র জানায়, কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত অঞ্চলটি ধান, সবজি, চিংড়ি, মাছের রেণু পোনা, রজনীগন্ধা, গম, ভুট্রা, গুড়, কলা, পাট, নারিকেল, তামাক, কুল ও পান-সুপারীসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড রয়েছে। ওইসব কৃষিপণ্য আঞ্চলিক চাহিদা মিটানোর পর রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১০ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৫ হেক্টর। এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভূমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মধ্যম ও বড় চাষীর সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। মাঠে মাঠে বিভিন্ন ফসলের সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য তৈরী করার ধারক কৃষককুল বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে বিরাট সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছে। কৃষকদের কথা, উঃপাদনে সফলতা আসলেও কৃষিনির্ভরশীল লোকজন মোটেও স্বস্তিতে নেই। দিনে দিনে তারা অভাবগ্রস্ত ও দায়দেনায় জড়িয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার অভাবে। অঞ্চলটির সিংহভাগ ভূমি উচু ও বন্যামুক্ত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক অঞ্চল অথচ অবহেলিত হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিখাতের উন্নয়নে দরকার কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ন্যায্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা। পাশাপাশি কোথায় কি সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধান করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ