Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌকাডুবির ঘটনায় উখিয়ায় ২১ রোহিঙ্গার দাফন সম্পন্ন নিখোঁজ এখনও অর্ধশতাধিক

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


দীপন বিশ্বাস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে
কক্সবাজারের উখিয়ার উপক‚লীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী পাটুয়ারটেক এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্টলারডুবি’র ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সকালে আরো ৪জনের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় গ্রামবাসি। তৎমধ্যে ৩জন শিশু, ১জন মহিলা রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয় গ্রামবাসি নারী-পুরুষ, শিশুসহ ১৭জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেছে। এতে ৭জনের বয়স এক বছরের নিচে আর ৩জন বয়স্ক মহিলা, বাকী ৭জনের বয়স ১০ থেকে ১৫বছরের মধ্যে। উদ্ধারকৃত ২১জন নারী-পুরুষ, শিশুর লাশ ইনানী কবরস্থানে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী।
এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় সাগর থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত আরো প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার সকালে উখিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ট্টলার থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা মিয়ানমারের বুচিডং থানার মুইদং এলাকার আবুল কালাম (৪৫) জানান, আমীর সাহেব নামের একজন লোক মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে আমাদেরকে বোটে উঠে বাংলাদেশে চলে আসার কথা বলেন। তিনি টাকা-পয়সা সব বোট মালিককে দিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। তার কথা মতে, আমরা বুধবার রাত ৮টার দিকে প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা ওই বোটে করে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা দিই। বোটে আমার স্ত্রী, ছেলে/মেয়ে ৭জন ছিল। আমি এবং আমার ২মেয়ে জীবিত উদ্ধার হলেও স্ত্রী ফিরোজা খাতুন (৪০) মেয়ে শাহেদা (১৪) মারা যায়। তাদের লাশ পাওয়া গেলেও আরেক মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম (৯) এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাছাড়া আমার শ্যালক মোঃ কাছিম জীবিত উদ্ধার হয়, কিন্তু তার স্ত্রী শাহজান খাতুন (৩৫) এবং তাদের আড়াই ও এক বছরের শিশু রুকেয়া এবং জান্নাত মারা যায়।
মিয়ানমারের বুচিদংয়ের মুইদং এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম (২৩) জানান, সে কোন রকম ক‚লে আসতে সক্ষম হলেও তার ৭মাসের মোহাম্মদ হোসাইন নামের এক ছেলে সন্তান ছিটকে পড়ে সাগরে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার এই সন্তান বেঁচে আছে কিনা জানেন না।
এসময় স্বজনদের আহাজারীতে পুরো হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। তাদের পাশের বেটে শুয়ে আছে জীবিত উদ্ধার আরেক রোহিঙ্গা যুবতি মিয়ানমারের বুচিদং থানার একই এলাকার আমিনা খাতুন (১৮)। তিনি বলেন, তার পিতা লালু মিয়া এবং ভাই জাফর আলম বেঁেচ আছে। কিন্তু তার ভাবি জাফর আলমের স্ত্রী তৈয়বা খাতুন, তাদের যমজ ২সন্তান নুর কামাল ও জুবাইদা খাতুন মারা গেছে। সে আরো জানায়, তারা জনপ্রতি মিয়ানমারের ২০ হাজার কিয়াত (টাকা) ভাড়া করে এদেশে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে বোটের মাঝি তাদেরকে নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে না দিয়ে কক্সবাজারের দিকে নিয়ে আসে। এতে তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
উদ্ধারকর্মী স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের সেচ্ছাসেবক ও পল্লী চিকিৎসক ডাঃ আব্দুল আজিজ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সাগর থেকে ২১জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এসময় প্রশাসনের সহযোগিতায় মুমুর্ষ অবস্থায় ১৮জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করি। এরা হলেন-আনোয়ার সাদেক তার ভাই মোহাম্মদ সাদেক, তসলিমা বেগম, শাহেদ, আব্দুস সলাম তার ভাই আব্দুল গফুর, আব্দুর রশিদ, আবুল কালাম সহ ১৮জন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, উদ্ধার হওয়া লাশ গুলো স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় উপকূলের ইনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর জীবিত উদ্ধারকৃতদের উখিয়া ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ