Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাসীরা ভোটাধিকার পাচ্ছেন না!

সাত বছরেও বিধিমালা করতে পারেনি ইসি

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব
প্রবাসীদের ভোটার করতে আইন সংশোধন করা হলেও তা সাত বছরে প্রয়োজনীয় বিধিমালা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। প্রবাসীদের কিভাবে ভোটার করা হবে তা নিয়েও ভাবতে পারছে না সংস্থাটি। রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য থাকলেও বিষয়টি সহজ বলে মনে করছেন না নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তিন কোটি লোক বিদেশ বসবাস করে, তারা কখনো এটা করেনি। ভারতীয় নাগরীকরা ভোটের সময় দেশে এসে ভোট প্রযোগ করেন। বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করা এবং তাদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করার কাজটি খুবই কঠিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি এক কোটি নাগরিক বিদেশে রয়েছেন। সচিব আরো বলেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনে এসে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না বিষয়টি কত কঠিন। তারপরও বিষয়টি নিয়ে সংলাপ শেষে আলোচনা করা হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর সাবেক এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রবাসীদের ভোটার ও ভোটাধিকার নিয়ে উদ্যোগী হয়। দুই নির্বাচন কমিশনার তখন এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফরও করেন। ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে বলা হয়, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে তিনি দেশে সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকা বা ভোটার এলাকায় বসবাস করেছেন, অথবা তার নিজের বা পৈত্রিক বসতবাড়ি যেখানে ছিল বা রয়েছে তিনি সেই এলাকার অধিবাসী বলে গণ্য হবেন। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন করে, যার লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় এনে তাদের ভোট দেয়ার পথ তৈরি করা। সেই সময় নির্বাচন কমিশন বলেছিল, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় নিবন্ধন এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থান করেই তাদের ভোট দেয়ার পদ্ধতি কী হবেÑ তা বিধিমালায় যুক্ত করা হবে। কোন পদ্ধতিতে কিভাবে তারা ভোটার হবেনÑ তাও থাকবে বিধিমালায়। প্রবাসীরা ইচ্ছা করলেই ভোটার হতে পারবেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, আইন সংশোধন হলেও বিধিমালা করার কাজটি এখনই শুরু হচ্ছে না। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটার করা হচ্ছে না। কয়েকটি দেশের দূতাবাসে পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য সব ডেটা দেশে এনে তথ্যভাÐারে যাচাই করতে হবে। তারপর ভোট দেয়ার প্রসঙ্গ আসবে। প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই প্রবাসীদের ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি। আর বাংলাদেশ কিভাবে পারবে।
আইন সংশোধনের পর সাত বছর পার হতে চলেছে। শামসুল হুদার পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন মেয়াদ পূর্ণ করে চলতি বছর দায়িত্ব নিয়েছে কে এম নূরুল হুদার কমিশন। কিন্তু প্রবাসীদের ভোটার করার পদ্ধতি ও তাদের ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে সেই বিধিমালা করা হয়নি এখনো। নূরুল হুদার ইসি রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে যে সংলাপের আয়োজন করেছে, তাতে এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছে ১৮টি দল, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। এই সংলাপে প্রবাসীদের ভোটার করার তাগিদ এসেছে অনেকের কাছ থেকেই। এর আগে পরিকল্পনা পর্যায়ে ইসির কাছে প্রস্তাব এসেছিল, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কমিশন ভোটার আবেদন ফরম পাঠাবে। দূতাবাস থেকে সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে আবার দূতাবাসেই জমা দেবেন। এরপর দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী জেলাভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাবে ইসির কাছে। ইসি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ