পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পল্লী বিদ্যুতায়নের প্রস্তাবের ওপর শুনানি কাল
অষ্টম বারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ৮ থেকে ১৫ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তারা। আগামীকাল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবির ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সোমবার সকালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এই প্রস্তাব করে পিডিবি। এদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের প্রস্তাবকে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি চলার সময় বিক্ষোভ করেছে বামপন্থীরা। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক বলছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
জানা গেছে. গতকাল ও আজ মঙ্গলবার যথাক্রমে পাইকারি ও সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর বিষয়ে পিডিবির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে। পিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর পল্লøী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবির ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর শুনানি করা হবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসির প্রস্তাবের ওপর। ডিপিডিসি বিদ্যুতের চলমান পাইকারি মূল্যকে ভিত্তি ধরে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি পেলে দাম আরো বাড়াতে হবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ ডেসকোর ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর ২ অক্টোবর গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। তারাও চলমান পাইকারি মূল্যকে ভিত্তি ধরে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। তাদের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ৩ অক্টোবর।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জন্য নবগঠিত কোম্পানি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রতি ইউনিটে এক টাকা ২৫ পয়সা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তাদের গণশুনানির তারিখ পড়েছে ৪ অক্টোবর। শুনানির পর বিইআরসি দাম বাড়ানোর ওপর সিদ্ধান্ত জানাবে।
বিইআরসি আইন, ২০০৩ অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিইআরসি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাবনা জমা দেয় পিডিবি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাব-নিকাশ শেষে পিডিবির পক্ষ থেকে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দশমিক ৭২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। আর মার্চ ও এপ্রিলে ৬ বিতরণ কোম্পানি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ছয় থেকে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তাদের উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্তে দেখানো হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আয়-ব্যয় হিসাব করলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮৭ পয়সা বাড়বে। আর ২০১৭-১৮ সালের হিসাবে এই বাড়ানোর হিসাব দাঁড়াবে এক টাকা ৯ পয়সা। এই তথ্য-উপাত্তে ঘাটতি আছে বলে মনে করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য কমানোর চেয়ে কিভাবে বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই রয়েছে। শামসুল আলম বলেন, সরকার ওপর লেভেল থেকে কী করে বিদ্যুতের দাম বেশি বেশি বাড়ানো যায় সে চেষ্টা চলছে। সর্বাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর যদি এমন হয়, এর থেকে বেশিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় আরো বাড়ানো যায় না। সেই পথ অবলম্বন করে চলেছে। এমন অবস্থায় জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে কি না, সে বিষয়ে কমিশনকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানান তিনি। পিডিবির প্রস্তাবের ভিত্তিতে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৫৭ পয়সা করে বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। আইন অনুযায়ী এই গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দাম বাড়ানের ঘোষণা দেবে বিইআরসি।
এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে গণশুনানি চলাকালে বিইআইরসি ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি বাম দল। তাদের যুক্তি, ঠিকঠাক হিসাব করলে বিদ্যুতের দাম তো বাড়বেই না, উল্টো কমানো উচিত। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পুনরায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, বিদেশি একজন সাংবাদিক, তার তোড়জোড়, তার কথা-বার্তা, তার আর্টিক্যাল লেখা, সব কিছুতে মনে হচ্ছে, একটা যৌথ প্রযোজনায় কোনো কিছুর কাজ হচ্ছে। রিজভী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) পাইকারিতে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কার্যকর করা হলে শিল্পকারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। মিলকারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ চাকরিজীবী বেকার হয়ে যাবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিঅ্যাকশনে শিল্প উৎপাদন, শিল্প বহুমূখীকরণ, অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, মানুষের গৃহস্থালীসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ।
এদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি চলার সময় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বামপন্থীরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের নিচে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সমাবেশ করেছে। বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি বন্ধ ও প্রশাসিক ব্যয় কমিয়ে বিদ্যুতের দাম দেড় টাকা পর্যন্ত দাম কমানো সম্ভব। স¤প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ছয়টি বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করেছে ইআরসি। কোম্পানিগুলো পাইকারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। খালেকুজ্জামান বলেন, বিইআরসি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৫৮ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তÍাব নিয়ে শুনানি করছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ৫৮ পয়সা কেন, এক পয়সা যদি বাড়ানো হয় সেটা আমরা মানব না। আলোচনাটা হওয়ার কথা ছিল বিদ্যুতের মূল পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে মূল্য বৃদ্ধির তো প্রশ্নই উঠে না। বিদ্যুৎ ও চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম সংগঠনগুলোর উদোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা ঘোষণা দেন তিনি। খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, বাসদ নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা হামিদুল হক প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।