Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে না

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিএনপির সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সমঝোতার কথা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে না আসে। তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী নই। তাই বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া কারো উচিত হবে না।
গত শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দেশে রাজনৈতিক সমঝোতার জল্পনা-কল্পনার বিষয় নাকচ করে দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের সফলতার সম্পর্কে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর বর্বরোচিত হত্যাকান্ড এবং দেশকে ধ্বংসে বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে না। তিনি বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে কখনও সমঝোতা হতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, তার অথবা তার বাবা-মার খুনীদের কারো সঙ্গে সমঝোতার চিন্তা করা অসম্ভব। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে আমি বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের মৃত্যুর পর তাকে ফোন করা এবং শান্তনা দেয়ার জন্য তার অফিসে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তার অফিসে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে, তাহলে ৭ থেকে ৮ লাখ শরণার্থীকেও খাওয়াতে পারবে। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলেছি। সেও একই মতামত ব্যক্ত করেছে।
চীন ও ভারতের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, চীন ও ভারতসহ সকল দেশের কূটনীতিকরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। তারা সবাই শরণার্থীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, চীন ও ভারত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এগিয়ে এসেছে। তারা সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, ৫টি প্রতিবেশি দেশের সঙ্গেই মিয়ানমারের বিরোধ রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, যাতে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আমি অনন্তকাল থাকবো না। কিন্তু আমি বাংলাদেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যাতে কেউ আর ভিক্ষুকের দেশ বলতে না পারে।
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট পুনরায় চালুর সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের শর্ত পূরণের পর ফ্লাইট পুনরায় চালু হবে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি বিমানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থপতি নভেরা আহমেদ ও হামিদুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স¤প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার অংশগ্রহণকে সফল ও ফলপ্রসূ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে অবদান রেখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণে তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত নির্বিশেষে সকল বেসামরিক মানুষকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তিনি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এগুলো হচ্ছে-প্রথমত. অবিলম্বে মিয়ানমারকে রাখাইন রাজ্যে শর্তহীনভাবে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত. জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবিলম্বে মিয়ানমারে একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠাতে হবে। তৃতীয়ত. ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য মিয়ানমারের ভিতর জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে একটি নিরাপদ অঞ্চল সৃষ্টি করতে হবে। চতুর্থত. বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। পঞ্চমত. শর্তহীনভাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
শেখ হাসিনা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রতি প্রধান হুমকি সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসের অর্থায়নকারীদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি সকল আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং আমি মনে করি এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের নিন্দার কথা স্মরণ করে বলেন, ২৫ মার্চ এখন আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব, নেদারল্যান্ডের রানী, এস্তোনিয়া ও কসবোর প্রেসিডেন্ট, নেপাল ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইএমওর মহাপরিচালক, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, ডবিøউএফপির নির্বাহী পরিচালক এবং আইবিএমর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এসব বৈঠকে তিনি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং ওআইসিসহ সকলের কাছে এ সমস্যা সমাধানের সহায়তা কামনা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। আলোচনাকালে জাতিসংঘ মহাসচিব এ দুঃসময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেছেন এবং বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।



 

Show all comments
  • Imam Hossain ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৫৯ এএম says : 0
    বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে দেশের ৬০% ৭০% মানুষ আছে । আপনি তাদেরকে বাদ দিয়ে সমঝোতা কার সাথে করবেন ? যাদের নিবন্ধন নেই তাদের সাথে ? নাকি যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে এমন দলের সাথে ?
    Total Reply(1) Reply
    • তুষার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৪ পিএম says : 4
      আওয়ামীলীগের কথা শুনে তো সেরকমই মনে হচ্ছে
  • Belal Hossain ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ পিএম says : 0
    হতে হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Masud Rana ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০১ পিএম says : 0
    আওয়ামিলীগ ধ্বংস হওয়ার জন্য এই দামবীকতাই যথেস্ট
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈমুর রহমান ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে আরো কৌশলী ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরুল কায়েস ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা কারণে সরকার বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসের একটি বিরাট অংশ হয়ে থাকবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rahin ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৪৩ পিএম says : 0
    Hay allah aponi aei nerjatito muslim der aei jalim der kas teky rukka korun aei jalim der aponar gojub dey dogso korun
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ